নির্বাচন চলাকালে ভারতের কাছে একটি স্বস্তির খবর। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মাসুদ আজহারকে একজন আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে ঘােষণা করেছে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে তার কূটনৈতিক কুশলতার ওপর ভর করে সন্ত্রাসে পীড়িত দেশগুলির সমর্থন নিয়ে আজাহারের গায়ে এই তকমা সেটে দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়ে আসছিল। নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য ভারতের দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে নিলেও চিন প্রতিবারেই প্রস্তাব পাশ করার মুখে ভেটো প্রয়ােগ করে তা নস্যাৎ করে দিয়েছে। এবার অবশ্য চিন এ ব্যাপারে কোনও চাল চালেনি তাই প্রস্তাবটি অনুমােদন পেয়েছে।
এটা ভারত সরকারের একটি চমকপ্রদ কুটনৈতিক সাফল্য। আর বিষয়টাও ঘটল এমন সময়, যখন দেশে সাধারণ নির্বাচন চলছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দিল্লির মসনদ ধরে রাখার জন্য প্রাণপণে নির্বাচনে লড়াইয়ে অবতীর্ণ। বর্তমান সরকার এটাকে তার সাফল্য বলে মেনে নিতেই পারে, কিন্তু নির্বাচন-প্রচার কাজে তা না লাগানােই শ্রেয়। আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া সহ পৃথিবীর অন্যান্য গণতন্ত্রকামী এবং সন্ত্রাস বিরােধী দেশ, রাষ্ট্রসংঘের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান, যেখানে মাসুদ আজাহার দৈনন্দিন জীবন কাটাচ্ছে, এ ব্যাপারে এখনও কোনও মন্তব্য করেছে বলে শােনা যায়নি। তবে সর্বশেষ খবরে জানা যায়, মাসুদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে পাকিস্তান।
নিরাপত্তা পরিষদ আজাহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে ঘােষণা করার পর, তার জীবনযাপন প্রক্রিয়ায় অনেক বাধানিষেধ নেমে এল। সে এখনও কোনও মারণাস্ত্র বহন করে চলতে পারবে না, অস্ত্র সরবরাহ করতে পারবে না, কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যােগাযােগ রাখতে পারবে না, তার চলাফেরার ওপরও কঠোর বিধিনিষেধ আরােপ থাকবে। আক্ষরিক অর্থেই তাকে গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হবে। মাঝে একবার খবর রটেছিল, মাসুদ আজহার গুরুতর অসুখে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। খবরটি সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু পরে জানা গেল সে পাকিস্তানে তার আবাসে বহাল তবিয়তেই আছে, এবং তার দেহাবসানের খবরটি ভুয়ো।
আজকাল কমবেশি সব দেশই সন্ত্রাসবাদের কবলে। যে কোনও সময় জঙ্গিরা নাশকতামূলক ঘটনা ঘটাতে পারে। সুতরাং এই সন্ত্রাস দমনে দেশগুলি এখন উঠেপড়ে লাগছে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় কী ভয়াবহ জঙ্গিহানা হয়ে গেল— চার্চে এবং বিলাসবহুল হােটেলে দিনভর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রায় ৬০০-র ওপর মানুষকে নিকেশ করা হল। সাম্প্রতিককালে এটি একটা ভয়াবহ ঘটনা। লঙ্কাবাসী শােক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল পুর্ব লঙ্কার অনেক অঞ্চল। জঙ্গিদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর গুলি বিনিময় চলল কয়েক ঘন্টা ব্যাপী। এই টনায় মারা গেল কয়েকজন শিশুসহ ১৫ জন।
তার আগে নিউজিল্যান্ডে মসজিদে যখন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা শুক্রবারের প্রার্থনাসভায় যােগ দিয়েছিলেন, তখন জঙ্গিহানায় নিহত হন অনেকেই। এই দুটি দেশই এতদিন জঙ্গিহানার কবলে পড়েনি। উভয় দেশের মানুষই শান্ত, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠাহীন জবিন্যাপনে অভ্যস্ত। সুতরাং কোন দেশের কোথায় যে জঙ্গিরা ওঁৎ পেতে বসে আছে এবং সুযােগমতাে নাশকতামূলক কাজে হাত লাগাবে-তা কেউ বলতে পারে না।
মাসুদ আজাহার একজন বিরাঢ়মাপের জঙ্গি নেতা। অনেক বড় বড় নাশকতামূলক কাজে অংশগ্রহণ করে সে তার হাত পাকিয়েছে। তার মাথায় নাশকতার আইডিয়া খুব ভালভাবে খেলে। সে মুক্ত থাকা মানেই বিপদ। সে কোথায় কী করছে, কোথায় নাশকতার ছক কষছে এবং সেইভাবে তার অধীনে থাকা জঙ্গিদের নির্দেশ দিচ্ছে, তা কেউ বলতে পারে না। সুতরাং তাকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে ঘােষণা করা মানেই তাকে এখন বন্দি জীবনই কাটাতে হবে। তার কার্যকলাপ বা, তার যাতায়াত বন্ধ, তার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া বন্ধ। এখন পাকিস্তান সরকার তাকে নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় তাই এখন দেখার। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাে মুখে সন্ত্রাস বন্ধ করা নিয়ে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার কথাই বলছেন। কিন্তু তা কার্যকরী না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বলা যায় না।
তবে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, মাসুদ আজহারের সেই তেজ এখন আর নেই। সে নানা রােগে ভুগে ভুগে শক্তি হারিয়েছে। তবে শক্তি, ক্ষমতা হারালেও তার নাশকতামূলক কাজের বুদ্ধি এখনও লােপ পায়নি।