• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

‘খেলা হবে’ বন্ধ হােক

ভোটের প্রচারে তৃণমূল ও বিজেপি রাজ্যব্যাপী যে 'খেলা হবে' আওয়াজ তুলে বাজার গরম করছে, অবিলম্বে তা বন্ধ হােক।

দেওয়াল লিখন (Photo: Twitter | @JoydeepRuidas)

ভোটের প্রচারে তৃণমূল ও বিজেপি রাজ্যব্যাপী যে ‘খেলা হবে’ আওয়াজ তুলে বাজার গরম করছে, অবিলম্বে তা বন্ধ হােক। ভােটমুখী বাংলায় এই খেলার প্রচারে দুই দলের মধ্যে রেষারেষির মাঝে বর্ধমান শহরের সুভাষপল্লি-রসিকপুরে খেলার ছলে মাটি খুঁড়তে গিয়ে বােমা বিস্ফোরণে দুই শিশু মারাত্মকভাবে জখম হল। তাদের মধ্যে সাত বছরের আফরােজ শেখ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। বিস্ফোরণে তার শরীর পুড়ে যায়– জামা দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। অপর জনের অবস্থা গুরুতর। সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক এই ঘটনার পরপরই শুরু যায় রাজনৈতিক চাপানউতর। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই বলতে শােনা যায় এলাকা দখল নিয়ে দুই দলের রাজনৈতিক কোন্দলের জেরেই প্রাণ গেল নিরীহ বালকের।

বিজেপির অভিযােগ, তৃণমূলের গােষ্ঠী কলহের কারণে, এক পক্ষ এখানে বােমা পুঁতে রেখেছিল। তৃণমূল তা অস্বীকার করে অভিযােগ করেছে। চক্রান্ত করে এখানে বােমা মাটিচাপা দিয়ে রেখেছিল বিজেপিই।

আমরা জানি, কোনও দলই এই মর্মান্তিক ঘটনার দায় নেবে না। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে সত্যটা জানা যাবে। ভােটের দিন যত এগিয়ে আসছে, রাজনৈতিক উত্তেজনা তত বাড়ছে হিংসার ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু বর্ধমানের এই মর্মন্তুদ ঘটনার জন্য দায়ী কে? একজন মায়ের কোল খালি হল রাজনৈতিক নেতারা ভােটের খেলায় এখন এতটা মজেছেন তা এই ঘটনা তাদের মনকে নাড়া দিয়েছে কিনা, লা কঠিন।

নির্বাচন কমিশন ঘটনার রিপাের্ট চেয়েছে, মুখ্যসচিবও জেলা প্রশাসনের কাছে রিপাের্ট চেয়েছেন। কী করে ওখানে বােমা এল, কারা তা মাটি খুঁড়ে চাপা দিয়ে রেখেছিল— উদ্দেশ্যই বা কী? যথাযথ তদন্ত হলে তা জানার কথা। তবে সেই সত্যের খোঁজ মিলবে কিনা, সেটাই কথা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি শিশুর পাশে আছেন। ভোট শুরু না হতেই প্রচার কালে একটি শিশুর প্রাণ গেল। ভােটদান পর্বে শান্তিশৃঙ্খলা কোনও পর্যায়ে থাকবে, তা ভাবলে এখনই আতঙ্কে আমাদের বুক কেঁপে ওঠে।

‘খেলা হবে’ সারা রাজ্যজুড়ে এই স্লোগানের মহড়া চলছে। বিশেষ করে তৃণমূল এবং বিজেপির নেতারা কে কত বেশি এই স্লোগান তুলতে পারেন, তার প্রতিযােগিতা চলছে। এটা কিসের খেলা? অতীতের কোনও নির্বাচনে তাে এই স্লোগান তােলা হয়নি। তাহলে এবার কেন? মানুষ ভােট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করবেন, তারা বিভিন্ন দলের হতে পারে। এখানে খেলার প্রশ্ন উঠছে কেন? ভােটদান তাে খেলার মাঠের খেলা নয়। এখন তৃণমূল ও বিজেপির রােড শাে’তে এবং জনসভায় প্রার্থীরা, নেতারা। আসল কথা বলার আগেই জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলে নিচ্ছেন, কী খেলা। হবে তাে?

এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই স্লোগানে মেতেছে। প্রধানমন্ত্রী পুরুলিয়ায় এক জনসভায় বলেছেন ‘দিদি চায় খেলা হবে, বিজেপি চায় উন্নয়ন হবে। দিদি চায় খেলা হবে, বিজেপি চায় শিক্ষা হবে।’ তৃণমূল নেত্রী আবার এক জনসভায় বলেন, ‘এখন খেলা খেলব এই ভাঙা পা নিয়ে। এক শটে বিজেপিকে মাঠের বাইরে ফেলে দেব।’ জনতা চিৎকার করে দাঁড়িয়ে দিদির কথায় সায় দেয়।

তবে ‘খেলা হবে’ এই স্লোগানটির উদ্যোক্তা তৃণমূলই। তারপর যখন তৃণমূলের নেতারা বিভিন্ন সভাসমিতিতে, রােড শােতে অংশগ্রহণ করে বক্তৃতার মাঝই বলে ওঠেন, ‘কি এবার খেলা হবে তাে?’ শ্রোতারা আওয়াজ তুলে সমর্থন জানায়। তারপর একটা সময় আসে বিজেপিও তৃণমূল নেতাদের ‘খেলা হবে’ এর উত্তরে বলতে শুরু করেন ‘খেলা হবে’।

ভােটের প্রচারে উত্তেজনা বাড়ে। কিন্তু বর্ধমানের বােমা বিস্ফোরণ বুঝিয়ে দিল রাজনৈতিক রেষারেষির ফলেই এই মর্মন্তুদ ঘটনা। প্রয়ােজনে এই বােমার ব্যবহার হবে বলে এখানে তা পুঁতে রাখা হয়েছিল। দুই শিশু খেলায় মেতে মাটি খুঁড়তে গিয়ে এই বিপদে পনে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সারা রাজ্যজুড়ে পুলিশি অভিযান চলছে বেআইনি অস্ত্র এবং লুকোনাে বােমা উদ্ধারে। ইতিমধ্যেই লাইসেন্সবিহীন প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।