ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Screengrab: Twittter/@PMOIndiaa)

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যে ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘােষণা করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ধাপে ধাপে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার পর তার এক স্পষ্ট রূপরেখা পাওয়া যেতে পারে। এই ২০ লক্ষ কোটি টাকার একটা বড় অংশ আগেই ঘােষিত হয়েছে বলে বিতর্ক হতে পারে। তবে অনেক দিক থেকেই এই অর্থনৈতিক কাজ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পিত ব্যয়ই হচ্ছে এর পথ।

তবে সেটাই শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা সব শেষে আসবে। কিন্তু তার আগে প্রয়ােজন একটা সঠিক দিশা, কারণ সেটাই সবকিছু পাল্টে দিতে পারে। স্বনির্ভর ভারত চাহিদা ও লােভ সামাল দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারে। অত্যাবশ্যক ও অত্যাবশ্যক নয় এমন সব পণ্যই উৎপাদন করতে পারে। নরেন্দ্র মােদি দেশের জন্য সেই লক্ষ্যই বেঁধে দিয়েছেন। তার অর্থ বর্তমান উৎপাদন ব্যবস্থাকে জোরদার করা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যার চেষ্টা অতীতে দেখা যায়নি। এটা ক্রেতাদের মানসিকতারও একটা পবির্তন ঘটাবে, যার ফলে তারা শুধু ভারতে তৈরি পণ্যই খুঁজবে না, তাকে ব্যবহার করার পক্ষে ফ্যাশনসই বলেই মনে করবে। এর মাধ্যমেই মােদির ‘ভােকাল অ্যাকাউন্ট লােকাল’ চিন্তাধারাই পুষ্ট হবে।

প্রশংসাযােগ্য লক্ষ্য অর্জনের জন্য মােদি ৫ টি স্তম্ভের উপর নির্ভর করতে চেয়েছে— ( ১ ) এমন একটা অর্থনীতি, যা উল্লেখযােগ্য উন্নতির সন্ধান দেবে, ( ২ ) বর্ধিত পরিকাঠামাে, ( ৩ ) প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা, ( ৪ ) ভারতের বড় জনসংখ্যার সুবিধা গ্রহণ এবং ( ৫ ) বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সরবরাহকে গ্রহণ করার মতাে চাহিদা সৃষ্টি।


সবচেয়ে বড় কথা, একটা বিরূপ অবস্থার মধ্যেও সুযােগ সৃষ্টি করার ওপর তিনি গুরুত্ব আরােপ করেছেন। এটা করার জন্য সরকার উল্লেখযােগ্য সংস্কারের পরিকল্পনা করেছে। দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়ােগ দ্রুততর করার জন্য সম্ভবত পরিষদীয় উদ্যোগও নেওয়া হবে। বস্তুত প্রধানমন্ত্রী চিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভারতকে একটা বিকল্প ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসাবে গড়ে তােলার ওপর জোর দিয়েছে। মুখে কিছুনা বললেও সারা বিশ্বে চিনের বিরুদ্ধে যে ক্রোধ ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে তিনি তাকে কাজে লাগাতে চেয়েছেন। অপেক্ষাকৃত তরুণ ক্রেতাদের এক বিরাট বাজারের প্রলােভন দেখিয়ে ভারতকে তিনি একটা শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন।

এইসব আইডিয়া অবশ্যই প্রশংসাযােগ্য। কিন্তু তা ফলপ্রসূ করতে গেলে আমলাতন্ত্রকে অতিক্রম করে মােদিকে জোরকদমে তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ ভারতের আমলাতন্ত্র আর অতীতের ধারা অনুসারে ঐতিহাসিকভাবেই একটা কর্তৃত্বের ধারাই যে শুধু বজায় রেখেছে তাই নয়, একটা লাল ফিতের বাঁধনে ব্যবস্থাকে আটকে রেখেছে বলে সারা বিশ্বে একটা ধারণা গড়ে উঠেছে। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার মতাে ধোঁয়াশাপূর্ণ বাক্যবাণের  কেরামতি না দেখিয়ে সাদা কাগজে সহজ ভাষায় কতটা কী করা সম্ভব তার লিখিত বিবরণ থাকা উচিত।

সর্বোপরি দেখতে হবে এইসব ব্যবস্থাপত্রের মধ্যে যেন কোনও অস্পষ্টতা না থাকে। ভবিষ্যতে যাতে বিচারবিভাগীয় জটিলতা দেখা না দেয়, তার জন্যই এটা প্রয়ােজন। প্রধানমন্ত্রীর কট্টর সমালােচকও যাতে চিন্তাধারার কোনও ফাঁক খুঁজে বার করতে না পারে সেটা দেখতে হবে। কিছু বিস্তৃত কর্মসূচি নিয়ে কিছু বিবাদ থাকতেই পারে। প্রস্তাবিত শ্রম আইনের সংস্কার একচেটিয়াভাবো হবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা থাকতে পারে। কিন্তু এটা আজ মেনে নেওয়ার সময় এসেছে যে, পুরনাে ধাঁচের সমাজতন্ত্রী মডেল বা নতুন উদারনীতির মডেল কেউই কিন্তু সুষম উন্নতির দিশা দেখাতে পারেনি। তাই প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনাকে মেনে নিয়ে আমাদের তাকে একটা সুযােগ দিতে হবে।