ভগবতের ভাবনায় স্বাধীনতা

ফাইল চিত্র

আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত ভারতের স্বাধীনতার দিনটিই পাল্টে ফেলতে চাইছেন। তাঁর মতে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট নয়, অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দিনেই ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অন্যতম অভিযুক্ত, শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রায়কে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে এক অনুষ্ঠানে সম্বর্ধনা দিলেন মোহন ভাগদত। সেখানেই তিন দাবি করেন, গত বছর রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দিনই দেশে প্রকৃত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর মতে, এতদিন যাকে পৌষ শুক্লা দ্বাদশী বলা হতো তার নতুন নামকরণ হয়েছে ‘প্রতিষ্ঠা দ্বাদশী’। অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন হয় পৌষ শুক্লা দ্বাদশীতে।
গত বছর ২২ জানুয়ারি আযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আনুষ্ঠানিকভাবে যে অনুষ্ঠানের নাম ছিল রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা। মন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার ধর্মাচারণে এবং তারপর মন্দির পরিসর থেকে ভাষণ দেওয়ার সময়েও মোদীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মোহন ভগবত। এবারে রামমন্দিরের রর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান চলছে। তবে সেটা ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২২ জানুয়ারি পড়েছিল। প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সেদিনই রামমন্দির উদ্বোধনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। গত বছর মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা এবং ভাষণের অংশের ভিডিও কোলাজের সঙ্গে বার্তায় প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন, কয়েক শতকের ত্যাগ, তপস্যা এবং সংঘর্ষ করে এই মন্দির বানানো হয়েছে। যা নাকি ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক।

ইন্দোরের অনুষ্ঠানে মোহন ভগবত বলেন, ‘দেশে স্বাধীনতা ছিল কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার সঙ্গেই দেশে প্রকৃত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসটি ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রাপ্তি। আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা আমাদের হাতে এসে যায়। আমরা সংবিধান বানাই। কিন্তু সংবিধানের ভাবনা অনুযায়ী চলা হয়নি। সেই জন্য সব স্বপ্নপূরণ হয়ে গিয়েছে একথা বলা যায় না। রাম জন্মভূমি আন্দোলন কারও বিরোধিতা করে শুরু হয়নি। ভারতের নিজস্বতা বা আত্মাকে জাগত করতেই ওই আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল। যাতে নাকি ভারত নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দুনিয়াকে পথ দেখাতে পারে।’ হানাদাররা ভারতের মন্দির ধ্বংস করেছিল যাতে দেশের আত্মাকেই ধ্বংস করা যায়। রাম জন্মভূমি আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল, তার কারণ কিছু শক্তি চাইছিল যাতে ভগবান রামের জন্মস্থানে মন্দির তৈরি না হয়।’

ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা নিয়ে ভাগবতের বক্তব্যের জোর বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় আরএসএস-এর পক্ষ থেকে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আরএসএসের নেতারা দাবি করেন, সঙ্ঘ প্রধান ভগবত বলতে চেয়েছেন রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দিনটি আত্মজাগরণের দিন। প্রতিষ্ঠা দ্বাদশী। ‘ভাগবত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বলে যা প্রচার করা হচ্ছে, তা ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে দাবি সঙ্ঘ কর্তাদের। স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আরএসএস প্রধানের বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়াতে তড়িঘড়ি আসরে নেমে পড়েছেন সঙ্ঘ আধিকারিকরা। কারণ এর পিছু পিছুই স্বাধীনতা সংগ্রামে অরএসএস-এর অংশ না নেওয়া, প্রকাররান্তরে ব্রিটিশের সহাযোগিতা করা অথবা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও জাতীয় পতাকা ও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার প্রসঙ্গগুলি চলে আসছে। মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে বীরের মর্যদা দেওয়া সঙ্ঘ পরিবার কার্যত ব্রিটিশের হাত থেকে ভারেতকে মুক্ত করার স্বাধীনতা আন্দোলনকে স্বীকার করে না। এসব যাতে নতুন করে সামনে না আসে সে কারণেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়েন বিজেপি নেতারা।


দেশজুড়ে কাজের জন্য তীব্র হাহাকার, জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া, অপুষ্টি-অনাহারের সূচকে বিশ্বে প্রথম দিকের তালিকায় থাকা দেশে মন্দির-মন্দির করে ধুয়ো তুলে সব কিছু চাপা দেওয়ার জন্যই ভাগবত এবার স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।