চারশোর স্বপ্ন

গল্পের গরুকে গাছে তুলতে কোনও যুক্তি, বাস্তব পরিস্থিতি, বিচার-বিশ্লেষণের দরকার পড়ে না৷ এখনও পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষায় এনডিএ জোটকে এগিয়ে রাখা হয়েছে৷ আবার এটাও ঠিক যে, শাসক গোষ্ঠীর ৪০০ আসন জেতার বাস্তব পরিস্থিতি নেই৷ অতীতেও একাধিকবার প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে৷ এসব বুঝেও ৪০০ আসন পাওয়ার দাবি করছে মোদি-ব্রিগেড৷ মোদিদের এনডিএ জোট যদি লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৪০০ আসন পেয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে ভারতের রাজনীতিতে বিরোধী দল বলে আর যে কিছুই থাকবে না, তা স্পষ্ট৷ মোদিবাহিনীর লক্ষ্য সেটাই, তাই সংসদ বিরোধীশূন্য করার চেষ্টার অন্ত নেই৷

একরাশ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে ২৮২ আসন দখল করে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল৷ ২০১৯-এ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পথে মোদির দল আসন সংখ্যা বাড়িয়ে পেঁৗছয় ৩০৩-এ৷ এতে প্রবল উৎসাহিত হয়ে মোদি-শাহরা এবার ঘোষণা করেছে, বিজেপি একাই পাবে ৩৭০টি আসন, আর তাদের এনডিএ জোট অতিক্রম করবে ৪০০-র গণ্ডি৷

দেশের হিন্দিবলয়ে বরাবরই বিজেপি বেশ কিছুটা এগিয়ে থাকে৷ ২০১৯-এর ভোটে দেখা গিয়েছে, গো-বলয়ের দশটি রাজ্যের মোট ২২৫টি আসনের মধ্যে এনডিএ পেয়েছে ২০৩টি আসন৷ এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে ৮০টির মধ্যে ৬৪টি, বিহারে ৪০টির মধ্যে ৩৯টি, হরিয়ানায় ১০টির মধ্যে ১০টি, দিল্লিতে ৭টির মধ্যে ৭টি, রাজস্থানে ২৫-এ ২৫, হিমাচলে ৪-এ ৪, উত্তরাখণ্ডে ৫-এ ৫, মধ্যপ্রদেশে ২৯টির মধ্যে ২৮টি আসন জেতে বিজেপি বা এনডিএ৷ এর বাইরে ছত্তিশগড়ে ৯টি এবং ঝাড়খণ্ডে ১২টি আসন দখল করে এনডিএ৷


বাকি রইল দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তর ভারত৷ এখানে মোট আসন সংখ্যা ৩১৮৷ ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে দক্ষিণ ভারতে মোট ১৩০টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টি আসন৷ এর মধ্যে কর্ণাটকেই ছিল ২৫টি আসন৷ বাকি ৪টি তেলেঙ্গানায়৷ অন্যদিকে অসম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্বের মোট ৮টি রাজ্যের ২৫টি আসনের মধ্যে বিজেপির ভাগ্যে জুটেছিল ১৪টি আসন৷

এবারের বাস্তব পরিস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে, ২০১৯-এর তুলনায় ২০২৪-এর ভোটে ভালো ফল করা বিজেপির পক্ষে খুবই কষ্টকর৷ খাতায়কলমে উত্তরপ্রদেশে কয়েকটি আসন বাড়াতে পারলেও গো-বলয়ের বাকি ৯টি রাজ্য থেকে বিজেপির আসন সংখ্যা বৃদ্ধির কোনও সম্ভাবনা নেই৷

এনডিএ-কে ৪০০ আসন পেতে হলে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলির বাকি ১৬৩টি আসনের মধ্যে পেতে হবে ১৫৫টির মতো আসন৷ বিজেপির দাবি, তারা কেরল, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানায় ভালো সংখ্যক আসন পাবে৷ পশ্চিমবঙ্গের ৩০টির বেশি আসন পাবে বলে আশা করছে বিজেপি৷ এইসব মিলিয়ে ‘ম্যাজিক’ সংখ্যা ৪০০-তে পেঁৗছে যাবে এনডিএ৷ কিন্ত্ত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত হল, দক্ষিণ ভারতে এবারে ফলাফলের বিশেষ তারতম্য হবে না৷ বরং কর্ণাটক বিধানসভা কংগ্রেস ছিনিয়ে নেওয়ায় বিরোধীদের আসন সেখানে বাড়তে পারে৷ অন্যদিকে পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে অঙ্কের হিসেবেই বিজেপির আশা পূরণ হওয়া সম্ভব নয়৷ তাই বিজেপিকে লক্ষ্যে পেঁৗছতে হলে কোনও ‘মিরাকেল’ বা অঘটন ঘটাতে হবে ফলাফলে৷ ইভিএম বা ব্যালটে যেহেতু ফলাফল নির্ধারণ হয়, তাই বিরোধীরা কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন৷

চরম বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত সাধারণ মানুষের৷ তাই মোদির স্বপ্ন আর যাবতীয় সমীক্ষাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অন্য কোনও ‘মিরাকেল’ যে এবারের ভোটে ঘটবে না, একথা এখনই জোর দিয়ে বলা চলে না৷

একটা সময় মনে হয়েছিল, রামমন্দির উদ্বোধন বিরাট ডিভিডেন্ট দেবে বিজেপিকে৷ অযোধ্যায় রমলালা ঘর পেলে তার আবেগেই লোকসভা নির্বাচনে জেটপ্লেনের গতিতে উড়ে যাবে বিজেপি৷ ভোট যত কাছে এসেছে, ফিকে হয়েছে এই তত্ত্ব৷ সবচেয়ে বড় কথা, গেরুয়া শিবির বুঝেছে শুধু রামমন্দির সামনে রেখে ভোটে জেতা যাবে না৷ তাই রামমন্দির থেকে খানিকটা সরে এসে চিরাচরিত মেরুকরণেই মন দিয়েছে বিজেপি৷ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সমস্ত হিন্দু ভোট বিজেপি-মুখী করার৷