হায়দরাবাদের ন্যাশনাল রিমোট সেনসিং এজেন্সি থেকে পাওয়া একটি পরিসংখ্যানে সম্প্রতি চমকে উঠেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। প্রতি বছর ভারতের ১৩ লক্ষ হেক্টর পরিমাণ বনভূমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দেরাদুনের দ্য ফরেস্ট সার্ভে অব ইন্ডিয়া সংস্থাটি থেকেও জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত ভারতের মাটি থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ২ কোটি ৫৮ হাজার হেক্টরের মতো বনভূমি।
এর ফলে আমাদের দেশের বাস্তুতন্ত্রের ও প্রাণীবৈচিত্র্যের চরম ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে- ভারতে মোট বনভূমির ৭০ শতাংশ ঘন অরণ্য বিশিষ্ট। সেই অরণ্য ক্রমশই কমে আসছে।
২০২১ সালের সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, ভারতের মোট ভৌগোলিক ক্ষেত্রের প্রায় ২২ শতাংশ অরণ্যাঞ্চল। এর অর্থ- ভারতে মোট ৭১.৩৮ মিলিয়ন হেক্টর অরণ্যভূমি আছে।
দেখা গেছে- উপজাতি অধ্যুষিত মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগঢ়, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, ওড়িশার মতো রাজ্যগুলিতেই অরণ্য সম্পদের পরিমাণটি বেশি। এছাড়া, উত্তর পূর্ব ভারতের অন্তর্গত গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া পার্বত্য এলাকাকে ঘিরে তৈরি হওয়া মেঘালয়, অসম, ত্রিপুরা এবং অরুণাচল প্রদেশেও অরণ্যানীর পরিমাণ বেশি।
বর্তমানে যে গাছগুলি ভারতের অরণ্য সম্পদকে তৈরি করেছে সেগুলি হলো শাল, সেগুন, আম, নিম, মহুয়া এবং পাইন গাছ। ভারতে বর্তমানে নথিভুক্ত অরণ্যাঞ্চল আছে ৭৭.৫৩ মিলিয়ন হেক্টরের মতো।
যদি পরিসংখ্যান দেখা যায়, তাহলে বুঝতে পারা যাবে কি বিপুল হারে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে অরণ্যভূমি উধাও হয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে কমে গেছে ১ কোটি ৪৭ লক্ষ ৬৭০০ হেক্টরের মতো বনভূমি।
মধ্যপ্রদেশের বনভূমি হ্রাস হয়েছে ১ কোটি ২৯ লক্ষ ৯১ হাজার ৭০০ হেক্টরের মতো। ওড়িশাতে বনভূমি কমে যাওয়ার পরিমাণ ১ কোটি ২৮ লক্ষ ৫১ হাজার ৮০০ হেক্টরের মতো।
হিমাচল প্রদেশে বনভূমি কমেছে ১২ কোটি ৭ লক্ষ ৩০ হাজার ৪০০ হেক্টরের মতো। নির্বিচারে গাছ কাটা এবং জনবসতি স্থাপনের জন্যই বৃক্ষসম্পদের অপচয় হচ্ছে। উত্তর পূর্ব ভারতে অনেক স্থানে বৃক্ষ সম্পদ, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ নিয়ন্ত্রণ করেন।
সুতরাং, তাঁদের সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে গাছপালা টিকে আছে। ভারতে যে পরিমাণ জমিতে গাছপালা কমে এসেছে, সেখানে আবার নতুন করে গাছ লাগানোর প্রয়োজন আছে। তা না হলে এই দেশের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হতে বাধ্য।
অবশ্য ভারতীয় অরণ্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে- গত ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতে বনভূমির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ০.২ শতাংশ বা ০.১৬ মিলিয়ন হেক্টরের মতো।
ব্যক্তিগত ভাবে অনেকেই গাছপালা পুঁতছেন। এই গাছপালার মধ্যে রবার, নারকেল, ইউক্যলিপটাস, চা এবং কফির ফলন আছে। এই ধরনের অ-নথিভুক্ত অরণ্যভূমির পরিমাণ প্রায় ১৯.৭২ মিলিয়ন হেক্টরের মতো।
এই পরিমাণটি ভারতীয় মোট অরণ্যভূমির প্রায় ৩৬ শতাংশের মতো। ব্রিটিশ শাসনের সময়েই ভারতে বনসম্পদ সংরক্ষণ এবং কাসৃজনমূলক ব্যবস্থাপনা শুরু হয়, তখন অবশ্য ভারতে প্রাকৃতিক সম্পদকে নিজের মুনাফার জন্য শোষণ করতে এই দেশের বৃক্ষসম্পদকে কাজে লাগিয়েছিল ইংরেজরা।
১৯৮০ সালের পর থেকে সবচেয়ে ইতিবাচক এবং ব্যাপক পরিমাণে এদেশে বৃক্ষরোপণ উৎসব শুরু হয়। জঙ্গলের মধ্যে স্থানীয় মানবগোষ্ঠী যাতে বেশি সংখ্যায় গবাদিপশু এবং পোষা প্রাণীদেরকে নিয়ে প্রবেশ করে অরণ্য সম্পদকে ক্ষতি না করে তার জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়।
জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্টের অজ্ঞতায় আরও বেশি করে গাছ পোঁতা হয়েছে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে কনসৃজন করতে গিয়ে অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল ভূমিপুত্র-কন্যা বা আদিবাসী জনজাতির মানুষদেরকে যেন অন্যত্র স্থানান্তরিত না করা হয়।
ভারতীয় জঙ্গল থেকে অনেক সময়েই বেআইনি ভাবে দামী কাঠ চোরাচালান হয়ে চাচ্ছে বিদেশে। ঘরবাড়ি তৈরির কাজে স্টিল, সিমেন্ট অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহারই বেশি করে করতে হবে। শাল, সেগুন, মেহগনি, আবলুশ কাঠের নয়। তা হলেই সফল হবে গাচ বাঁচানোর চিপকো আন্দোলন।