• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

প্রত্যাহারের পাঁচটি কারণ

কেন্দ্রের মোদি সরকার হঠাৎ কেন তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করল? কৃষি আইন প্রত্যাহারের প্রথম এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ অবশ্যই আসন্ন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন।

প্রতীকী ছবি (File Photo: iStock)

কেন্দ্রের মোদি সরকার হঠাৎ কেন তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করল? সম্ভাব্য কারণগুলি হল: কৃষি আইন প্রত্যাহারের প্রথম এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ অবশ্যই আসন্ন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন। বিশেষ করে পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশে ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা।

কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থানকারী কৃষকদের বড় অংশই পাঞ্জাব এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে শিখ এবং জাঠ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক। আগামী বছরের গোড়াতেই ওই পাঞ্জাব এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা।

তাঁদের মধ্যে শিখ এবং জাঠ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক। আগামী বছরের গোড়াতেই ওই পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোট। আইন প্রত্যাহার না করলে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে রীতিমতো ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা ছিল বিজেপির। শুধু তাই নয়, পাঞ্জাবে এমনিতেই দুর্বল গেরুয়া শিবির, কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে যেতে বসেছিল।

কৃষি আইন প্রত্যাহার না করলে তার ফলাফল যে ভাল হবে না, সেটা সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনেই টের পেয়েছে বিজেপি। সম্ভবত সেকারণেই উত্তরপ্রদেশ এবং পাঞ্জাবের ভোটের আগে ঝুঁকি নিতে চায়নি সরকার।

দ্বিতীয়, সরকার যখন সাড়ম্বরে স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ উদযাপন করছে, তখন রাজধানীর উপকণ্ঠে এভাবে দেশের অন্নদাতাদের বিক্ষোভ মোটেই সরকারের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন নয়। লাগাতার বিক্ষোভ, একের পর এক কৃষকের মৃত্যু ‘বিশ্বনেতা’ মোদির ভাবমূর্তিতে ভালমতোই ধাক্কা দিচ্ছিল। হাজার চেষ্টা করেও কৃষকদের দিয়ে বিক্ষোভ প্রত্যাহার করানো সম্ভব হয়নি।

কৃষকরা মোটামুটি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, আইন প্রত্যাহার না করলে তাঁরা সরবেন না। তাই ভাবমূর্তি ফেরাতে কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে একপ্রকার বাধ্যই হল সরকার।

তৃতীয়, সরকার ফ্যাসিস্ট, বিরোধী স্বরকে গুরুত্ব দেয় না, মোদি একরোখা, একনায়ক। গত সাত বছরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এগুলিই ছিল বিরোধীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ। কিন্তু কৃষি আইন প্রত্যাহার করে প্রধানমন্ত্রী এইসব অভিযোগকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন।

বোঝাতে চাইলেন, বিরোধীদের কণ্ঠস্বর তিনিও শোনন। নাগরিকদের অভাব অভিযোগকে তিনিও সমান গুরুত্ব দেন। বলা যায়, এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারের বিরুদ্ধে বড়সড় অস্ত্র খুইয়ে বসল বিরোধীরা।

চতুর্থ, কৃষকদের একটা বড় অংশ থেকে শুরু করে প্রায় গোটা বিরোধী শিবির দাবি করে আসছিল, তিনটি কৃষি আইন আনার নেপথ্যে মোদির আসল উদ্দেশ্য ছিল নিজের কর্পোরেট বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু আইন প্রত্যাহারের সময় প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, তিনি সততার সঙ্গে কৃষকদের ভালই করতে চেয়েছিলেন।

এদিন প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, আমাদের সরকার ছোট কৃষকদের কথা ভেবে, দেশের কথা ভেবে গ্রাম এবং গরিবদের উন্নতির কথা ভেবে পূর্ণ সততার সঙ্গে এই আইন এনেছিল।

কিন্তু এই সহজ কথা আমাদের হাজার চেষ্টার পরও আমরা কৃষকদের বোঝাতে পারিনি। অল্প সংখ্যক কৃষক এর বিরোধিতা করলেও, সেটাই আমাদের কাছে জরুরি।’ এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি বরাবরই বলে এসেছেন, কৃষি আইন তিনি এনেছেন দেশের ৯০ শতাংশ ছোট কৃষকদের কথা ভেবে।

আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে মোদি আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘কৃষকদের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতিতে আমরা পূর্ণ সততার সঙ্গে কাজ করছি। ছোট কৃষকদের উন্নতির জন্য, তারা আরও শক্তি পাক সেটা নিশ্চিত করার জন্য তিনটি কৃষি আইন আনা হয়েছিল। কিন্তু, এটা প্রদীপের আলোর মতো সত্য আমরা কিছু কৃষককে বোঝাতে পারিনি। হয়তো আমারই চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল।’

শুধু তাই নয়, যারা যারা এই কৃষি আইনকে সমর্থন করেছেন, তাদের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন মোদি। আসলে, ছোট কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, আমি আপনাদের জন্যই এটা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হলাম।