বিশ্বের তাবড় তাবড় সেলিব্রিটি ও ব্যবসায়ীরা তাদের সম্পদের পরিমাণ আড়াল করতে লোকচক্ষুর আড়ালে এক আর্থিক সংগঠনে তাদের সম্পদ গচ্ছিত রাখার ব্যবস্থা করেছে। সম্প্রতি ভারত সহ বিশ্বের ছয় শতাধিক সাংবাদিকের একটি দল অনুসন্ধানমূলক এক অভিযানের মাধ্যমে এমন বিস্ফোরক তথ্য আবিষ্কার করেছে।
ভারতের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সহ ভারতরত্ন শচিন তেন্ডুলকারও নাকি গোপন প্রতিষ্ঠানে তার অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন বলে সাংবাদিকদের উদ্ঘাটিত তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। গোপন কোম্পানিতে গচ্ছিত রাখা অর্থ নাকি কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই।
কিন্তু কার স্বার্থে এই অর্থ তাঁরা গচ্ছিত রেখেছেন তা বোধগম্য নয়। এদের মধ্যে ব্যবসায়ী অনিল আম্বানির নাম রয়েছে। অথচ তিনি ইংল্যান্ডে আদালতে দাঁড়িয়ে তার দেউলিয়া প্রাপ্তির কথা ঘোষণা করেছিলেন। অনিলের এমন গোপন আঠারোটি সংস্থায় মিলিয়ন মিলিয়ন অর্থ গচ্ছিত রয়েছে। নীরব মোদি ভারত থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে সমস্ত সম্পদ তার ভগ্নির নামে হস্তান্তর করে যান।
এসব ভুয়ো ট্রাস্ট তৈরি করে ব্যবসায়ীরা এমন সব সংস্থা স্থাপন করেছে যা ভারতীয় আইনের কোনও ধারাতেই পাকড়াওযোগ্য নয়। সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস এখন একটু নড়েচড়ে বসেছে। তারা একাধিক তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে বিষয়টির তদন্ত করানোর কথা ঘোষণা করেছে।
প্যান্ডোরা পেপারস এর মাধ্যমে কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এমন ব্যবস্থার আশ্রয় নিয়েছেন সেলিব্রিটি ও ব্যবসায়ীরা। এপর্যন্ত নাকি তিনশো ত্রিশজন এমন প্রাক্তন ও বর্তমান রাজনীতিবিদের নাম রয়েছে এই তালিকায়। জর্ডনের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লার নাকি এমন গোপন সংস্থায় ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায় সত্তর মিলিয়ন পাউন্ড গচ্ছিত রয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের গোপণ গচ্ছিত সম্পদের ঠিকানা নাকি মোনাকো। প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার , চেক রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ বরিশ, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াট্টা, ইকুয়াডোরের প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসো এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সহযোগীদের নামও গোপন সম্পদ গচ্ছিতের তালিকায় রয়েছে।
পানামা এবং প্যারাডাইস পেপারস এমন গোপন সংস্থা কোনও ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীর দ্বারা তৈরি সংস্থার মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে কিভাবে সম্পদ গচ্ছিত রাখা যায় তার ব্যবস্থা পাকা করেছিল পারিবারিক সদস্যদের নামে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে।
কর ফঁকি দেওয়া যায় এমন দেশগুলি বেলিজ, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, পানামা, সামোয়া বা নিউজিল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর যারা কর ছাড়ে লোভনীয় প্রস্তাব দেয় সেখানেই এই ভুয়ো সংস্থা বা কোম্পানি তৈরি করা হয়। সম্পদের বিষয়টি গোপন করার জন্য এক তৃতীয় পক্ষ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কোম্পানির অছি হিসেবে সম্পদের গচ্ছিত রাখার দায়িত্ব পালন করে থাকে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে থাকে।
ব্রিটিশ পরহিতব্রত পালনকারী এক সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল সংশ্লিষ্ট গচ্ছিত গোপন সম্পদের বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলি কিভাবে কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থের অভাবে কল্যাণমূলক কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য।
এর আগে আইসিআইজে ও ২০১৪ সালে লাক্সলিক এবং পানামা পেপারস এর মতো গোপন সম্পদ প্রকাশের ধারাবাহিকতায় প্যান্ডোরা পেপারস সর্বশেষ এমন আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ পেল। অনুসন্ধানমূলক তথ্য সংগ্রহের সময়ে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সিসিলেস, হংকং এবং বেলিজ এর মতো কর ফাঁকি দেওয়ার স্বর্গরাজ্যে অনুসন্ধান চালানো হয়।