কোভিডে বিধ্বস্ত ভারতীয় অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন যেসব প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তাতে যত না কাজ হবে তার চেয়ে এর পোশাকি মূল্যই বেশি।
প্রথম কথা হল, ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ পুরোটাই নতুন নয়। কিছু আর্থিক ব্যবস্থা আগেই ঘোষিত হয়েছিল। এর পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্কও কিছু আর্থিক উজ্জীলী প্রস্তাবও ঘোষণা করেছিল। এই সমস্তই নতুন প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যার পরিমাণ প্যাকেজের প্রায় ৫০ শতাংশ।
প্যাকেজে যেসব পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়েছে। তার আর্থিক প্রভাব ঘোষিত লক্ষ্যের চেয়ে অবশ্যই কম হবে। এই প্যাকেজ দেশের জিডিপির মোট ১০ শতাংশ বলে সরকার দাবি করেছে। কিন্তু পূর্বঘোষিত ব্যবস্থাগুলি সরিয়ে নেওয়ার পর বাকি অর্থের জোরে আর্থিক প্রভাব অনেক কম হবে।
ভারতের প্যাকেজ অন্যান্য দেশের সমতুল একথা তুলে ধরতেই এই ১০ শতাংশের অবতারণা। ফলে বোঝাই যাচ্ছে এই প্যাকেজের উদ্দেশ্য যত না অর্থনৈতিক তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক। এই প্যাকেজ নিয়ে সরকারিভাবে যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে প্রায় সমস্ত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সংস্থাই তা খারিজ করে দিয়েছে।
তারা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে এই প্যাকেজ কোভিডের ধাক্কা সামলে দিতে পারবে না। খুবই সংকটজনক ক্ষেত্রগুলির জন্য কোনও সঠিক উদ্দেশ্যপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেই তারা মন্তব্য করেছেন।
সরকারের প্যাকেজ ঘোষণার পর শেয়ার বাজারে যে প্রাসঙ্গিক উদ্দীপনা দেখা দিয়েছিল তা অতি দ্রুত মিইয়ে যায়, কারণ মার্কেটের কুশীলবরা এর অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝে ফেলতে সক্ষম হয়। এর ফলে বিএসই সেনসেক্স নেমে যায় এবং প্যাকেজ ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে টাকার দামও পড়ে যায়।
ভারতীয় অর্থনীতির কয়েকটি ক্ষেত্র এই আওয়াজ তুলেছে যে এই প্যাকেজ তাদের জন্য সরাসরি উদ্দীপক কোনও প্রস্তাব নেই। রফতানিকারকরা ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রফতানি ২০ শতাংশ কমে যাওয়ার সম্ভানায় চিন্তিত।
অটোমোবাইল সেক্টর করোনা মহামারির আগে থেকেই সংকটের আবর্তে ছিল, তারা জানিয়েছে প্যাকেজে তাদের জন্য কোনও সংস্থান রাখা হয়নি। নন ব্যাঙ্ক আর্থিক কোম্পানিগুলিও মহামারির আগে থেকে সমস্যার মধ্যে ছিল, কিন্তু প্যাকেজে তারা যে সীমিত সুরাহা পেয়েছে তা দিয়ে তারা বর্তমান সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না বলে মনে করছে।
বিমান সংস্থা, পর্যটন ও হোটেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলির জন্য প্যাকেজে কোনও ঘোষণা নেই। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কোম্পানি জানিয়ে দিয়েছে যে তারা আর বেশিদিন কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না, শুরু হয়ে গেছে লে-অফ। ক্রমেই বড় হয়ে উঠতে থাকা ব্যাপক বেকারত্বের সমস্যাকে অর্থনৈতিক প্যাকেজে গুরুত্ব বুঝে দেওয়া হয়নি।
প্যাকেজে মূলত সরবরাহের দিকটায় জোর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু চাহিদার দিকটা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। এই প্যাকেজ অর্থনীতিতে ছাপ ফেলার জোরে যদি উৎপাদন বাড়ে তাহলে প্রশ্ন আসবে সেটা কিনবে কে? সেটা কেনার মতো অর্থ খুব কম ক্রেতার আছে, কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এখন তলানিতে চলে গেছে।
তাই এক কথায় বলা যায়, এই প্যাকেজ সঠিক লক্ষ্যে অতি ছাোট পদক্ষেপ। কিন্তু দেশ এখন এমন এক সংকটের দিকে এগিয়ে চলেছে যা স্বাধীনতার পর থেকে উদ্ভূত সমস্যাবলীর চেয়ে অনেক বেশি কঠিন।