ফিরে গেলেন কালি মেখে

র‍্যালিতে ফিরদৌস(ট্যুইটার)

এসেছিলেন সিনেমার শুটিং এবং বিনোদনমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে-ফিরে গেলেন গায়ে কালি মেখে এবং তার দেশের সরকারকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে।তিনি বাংলাদেশের একজন খ্যাত অভিনেতা,যিনি বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করে পতনোন্মুখ ওই দেশের সিনেমা শিল্পকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।ভোটের প্রচারকালে এপার বাংলায় এসে অভিনেতা দেখতে পেলেন, চারিদিকে প্রচার নিয়ে উন্মাদনা,উচ্ছ্বাস,মাতামাতি।তিনি হয়তো ভাবলেন প্রচারও একটা বিনোদন,তাই তিনি যে একজন বিদেশি নাগরিক, তা বেমালুম ভুলে গিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।

তিনি দেখলেন,প্রচার যদি করতেই হয়, তাহলে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হ্যেই করা স্রেয়।তাই ঝোপ বুঝে কোপ মেরে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থীর হয়েই নানা প্রান্তে রোড শো,মিছিলে যোগ দিলেন, স্থানীয় দলের নেতাদের সঙ্গে।একজন বিদেশি নাগরিক এসে এভাবে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ,অনৈতিক,নিয়মবহির্ভূত।খবর চাপা রইল না।অভিযোগ পৌঁছল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের অফিসে।খবরের সত্যতা যাচাই করল দিল্লির বিদেশমন্ত্রকের বিদেশি নাগরিক বিষয় সংক্রান্ত বিভাগ।দিল্লি বিষয়টি নিয়ে অবহিত করল বাংলাদেশ বিদেশমন্ত্রককে।

তারপর অভিনেতার ওপর খাঁড়া নেমে এল, তাকে অবিলম্বে ভারত ছাড়ার নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আকাশপথে স্বদেশে পাড়ি দিলেন। তাকে এ রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলিকাতাস্থ বাংলাদেশের উপদূতাবাসও।এখানেই এই আখ্যানের শেষ ন্য।তিনি ‘কালো তালিকাভুক্ত’ হলেন।ভবিষ্যতে ভারতে আসার ভিসা পেতে তাঁকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।অভিনেতার কান্ড বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানেও গেল।খবরে প্রকাশ, তিনিও তা শুনে অবাক হয়েছেন।


বাংলাদেশের এই অভিনেতা একটি নজির সৃষ্টি করে গেলেন।অতীতে এ ধরণের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। বিষয়টি রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলেও।রাজ্য বিজেপির এক প্রতিনিধি দল সিইও-র অফিসে এসে বাংলাদেশি এই নাগরিকের প্রচার কাজের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানায়।আবার তৃণমূলের রায়গঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থীকে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ব্লেছেন,বাংলাদেশের ওই অভিনেতা তাঁর হয়ে প্রচারে অংশগ্রহণ করেছেন বলে তাঁর জানা নেই।শাসক দলের জেলা সভাপতি অবশ্য সরাসরি প্রচারের বিষয় স্বীকার না করে ঘুরিয়ে ব্লেছেন,উত্তর দিনাজপুরের সঙ্গে ওই অভিনেতার একটা যোগাযোগ র‍্যেছে।এর আগেও তিনি এখানে এসে ছবির শুটিং করেছেন।

বাংলাদেশি অভিনেতা বিজনেস ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলেন।ভিসার মেয়াদ ছিল ২০২২ সাল পর্যন্ত।তবে রাজনৈতিক মহল অবশ্য মনে করে তাঁকে এভাবে প্রচারের কাজে লাগানোর আগে শাসক দলের জেলা নেতাদের ভাবা উচিত ছিল যে তিনি একজন বিদেশি নাগরিক, তাঁকে এভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করানো সমীচীন কিনা। কিন্তু মনে হয় বাংলাদেশের ঐ অভিনেতা রোড শো অথবা অন্যস্তরের প্রচারে তৃণমূলের হয়ে ভোট চাইলে তার মূল্য অনেক বেশি হবে, সেটাই ভেবেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।তাই তাকে একাজে লাগানো।আর অভিনেতা নিজেও হয়তো বুঝতে পারেননি একটা একটা গর্হিত ও নীতিবহির্ভূত কাজ হবে।

নির্বাচন কমিশন অবশ্য ব্লেছে,কোনো বিদেশি নাগরিক প্রচারে অংশগ্রহণ করলে তা বিধিভঙ্গের পর্যায়ে পড়ে কিনা, তা স্পষ্টভাবে কোনও উল্লেখ নেই।সুতরাং বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনার প্রয়োজন আছে।

তবে যে যাই বলুক, বাংলাদেশের অভিনেতা কাজটা ঠিক করেননি, তার মধ্যে সে বোধ জাগ্রত হওয়া উচিত ছিল। তিনি একজন বিদেশি নাগরিক।তাঁকে এমনিতেই বিদেশে এলে বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। অনেক কিছুই বিদেশি বলে তাঁর করতে মানা থাকে।এক্ষেত্রে সেই বোধ এই অভিনেতার মনে জাগেনি।বাংলাদেশ ভারতের সবচাইতে কাছের দেশ,তার সঙ্গে সম্পর্ক মধুর।তাই বলে সেই দেশের কোনও নাগরিক প্রচ্ছন্নভাবে অপরদেশের রাজনৈতিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করবেন তা অনুচিত বলেই মেনে নেওয়া যায় না।