ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও অন্যতম শীর্ষনেতা এল কে আদবানির এটা কোনও সমাপ্তিসঙ্গীত নয়, কারণ তিনি জনজীবন থেকে সরে দাঁড়ানাের কোনও ইঙ্গিত দেননি, যদিও তাঁর দলের কিছু লােক এটা চাইছিলেন। বর্ষীয়ান নেতাদের মধ্যে তাঁকে এবার লােকসভার টিকিট দেওয়া হয়নি। এর পাল্টা হিসাবে দল গঠনের বার্ষিকীর প্রাক্কালে বরিষ্ঠ নেতা একটা মহার্ঘ বার্তা তুলে ধরেছেন। তাঁর এই কামনা আসন্ন নির্বাচনে ভালরকম দাগ কাটবে। যখন অটলবিহারী বাজপেয়ী ও আদবানি দলের নির্দেশাত্মক নীতির বিস্তার ঘটিয়েছিলেন তখন এইসব নীতি রাজনৈতিক সমাজে যথেষ্ট আদৃত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য অতি দ্রুত এই বার্তাকে অনুমােদন করেছেন, যা থেকে এই আশা জন্মায় যে তিনি বিজেপির পুরনাে ভাবনাচিন্তায় ফিরে যেতে উদগ্রীব। এটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাষ্ট্রবিরােধী হিসাবে দেগে দেওয়ার ভাবনার বিপরীত। কিন্তু এখন দলের কিছু মুখপাত্র বিরােধীদের শত্রু হিসাবে দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। অনেকদিন পর আদবানি মুখ খুললেন। কিন্তু তাঁর বার্তার মধ্যে হতাশার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তার দিকে নজর দিতে হবে। কিন্তু তাঁর বার্তা কতটা সফল হল তা ভােটদাতাদের মতামত থেকে প্রতিফলিত হবে। সাধারণ বিজেপি সদস্যদের মধ্যে আদিবানির প্রতিলিপি ছড়িয়ে দেওয়ার মতাে নেতা দলে আর নেই। একটা নীতিমুলক দলিল হিসাবে এর চেয়ে ভাল বিশ্বাসযােগ্যতার প্রমাণ দল আর পাবে না। তবে আদবানির পরামর্শের প্রতি দল কতটা আন্তরিকভাবে কর্ণপাত করবে বা দলের মধ্যে সেই সত্যটা জুড়িয়ে দেবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ সত্যি কথা বলতে কী, এখন সব দলের মধ্যেই, সব রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যেই ‘দেশ, দল ও আমি’র ক্রমপর্যায়কে উল্টে দেওয়ার প্রবণতা গড়ে উঠেছে। ‘ভারতের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে আমাদের ধারণায় যাঁরা রাজনৈতিকভাবে আমাদের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকশ করে তাদের আমরা কখনও রাষ্ট্রবিরােধী হিসাবে গণ্য করিনি’ বলে আদবানি যে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিধ্বনি করার মতাে নেতার এখন অভাব রয়েছে।
আদবানি বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পর্যায়ে প্রত্যেক নাগরিকের পছন্দের স্বাধীনতার ব্যাপারে দল দায়বদ্ধ। বৈচিত্র্য ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাই ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল কথা। শুরু থেকেই বিজেপি কখনও এটা মনে করেনি যে যাদের সঙ্গে আমাদের মতের মিল হবে না তারা আমাদের শত্রু। আমরা শুধু তাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে গণ্য করেছি’। খুবই বিনয়ের সঙ্গে তিনি দীনদয়াল উপাধ্যায়, বাজপেয়ী এবং আরও অনেক অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী ও আত্মত্যাগী নেতার পরামর্শকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় কয়েকজন সদস্য আছেন যারা আদবানির (এবং বাজপেয়ীর) অধীনেই প্রথম ক্ষমতার স্বাদ উপভােগ করেছিলেন। তাঁদের অন্তত নিজেদেরকে প্রশ্ন করা উচিত যে তাঁরা ওই দুই শীর্ষনেতার আদর্শকে সম্মান করেন কিনা, নাকি সেই আদর্শকে সেকেলে ও অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন। এর সৎ জবাব পাওয়া গেলে তা ভবিষ্যতের পথ চলার একটা নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করত, অন্যথায় বলে দেওয়া হােক আদবানি একটা কল্পলােকে বাস করছেন।