• facebook
  • twitter
Saturday, 21 December, 2024

ব্যর্থ জল জীবন মিশন

বছর বছর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের নামে একদিন ঝাঁটা হাতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি রাজ্যের শীর্ষ পদাধিকারীরা রাস্তায় নামলেই প্রকৃতির প্রতি সুচিার করা হয় না।

প্রতীকী চিত্র

জল জীবন মিশন। দেশের গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি বাড়িতে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বহু সাধের প্রকল্প। ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদী। প্রকল্প চালুর পাঁচ বছরেও জল জীবন মিশনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ কেন্দ্রের মোদী সরকার। কারণ, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৪— এই পাঁচ বছরে দেশের গ্রামাঞ্চলে সবক’টি বাড়িতে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ করতে পারেনি মোদী সরকার।

সম্প্রতি জল জীবন মিশন সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক। গত ৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। সেই কেন্দ্রীয় সরকারি রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলের প্রায় ২২ শতাংশ বাড়িতে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা বাকি রয়েছে কেন্দ্রের। বিষয়টিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে তথ্যভিজ্ঞ মহল। যদিও টার্গেট বকেয়া থাকার কারণ হিসাবে কিছু বাধার উল্লেখ এই রিপোর্টে করেছে জলশক্তি মন্ত্রক।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে ১০০ শতাংশ বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে ওই তালিকায় নেই যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ এবং হিমন্ত বিশ্বশর্মার অসমের মতো ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যের নাম। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ দু’বছর পরে শুরু হলেও অগ্রগতি যথেষ্ট ভালো। কারণ এ রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৯০ লক্ষ ৩৫ হাজার ১১২টি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। বলা হয়েছে, বহু জায়গায় নির্ভরযোগ্য জলের উৎস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে ভূগর্ভস্থ জলে রাসায়নিকের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেশি। পাশাপাশি, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে রাজ্য সরকারগুলিরও সহযোগিতা প্রয়োজন। অনেক রাজ্যেই আনুষঙ্গিক প্রশাসনিক সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সব মিলিয়ে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একই সঙ্গে ওই রিপোর্টে জলশক্তি মন্ত্রক জনিয়েছে, রাজ্যে রাজ্যে গ্রাম স্তরের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে সামগ্রিক প্রকল্পের কাজ আরও দ্রুতগতিতে করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের সচেতন করার জন্য প্রচারও চলছে।

কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতি মতো ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে যাওয়ার কথা। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য হাতে রয়েছে মাত্র দু’টি মাস। এই সামান্য সময়ের মধ্যে বাকি ২২ শতাংশ বাড়িতে আদৌ নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে খোদ জলশক্তি মন্ত্রকের অন্দরেই।

পরিশ্রুত পানীয় জল বাড়ি বাড়ি সরবরাহে নিজের দেওয়া অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মতোই আব্যর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে মোদী সরকার। বছর বছর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের নামে একদিন ঝাঁটা হাতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি রাজ্যের শীর্ষ পদাধিকারীরা রাস্তায় নামলেই প্রকৃতির প্রতি সুচিার করা হয় না। প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে গুরুতর গাফিলতি রয়েছে ভারতের। জলসম্পদ সংরক্ষণ করে পরিশ্রুত পানীয় জল ঘরে ঘরে পৌঁছতে যে পরিকাঠামো দরকার, সেদিকেও নজর নেই বিজেপি সরকারের। জলের অপচয় বন্ধ করার জন্য যে নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন, সেই শিক্ষাও দেওয়া হয় না নাগরিকদের। দূষিত জল পান করে বছর বছর বহু মানুষ ভুগছেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে, প্রাণ হারাচ্ছেন। পরিশ্রুত পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছনো মোদীর আর এক গিমিক।