• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

সমালোচনার মুখে কমিশন

নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে যে আপোস করা হয়েছে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের নির্বাচন কমিশন নিজের সম্পর্কে যে দুঃখজনক চিত্র এঁকেছে,তা উত্তরপ্রদেশে চারজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ্য নির্বাচনী প্রচারের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।কারন সুপ্রিম কোর্ট যদি আসরে নেমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সম্পর্কে অতীতের কিছু স্মৃতিচারণ না করত তাহলে কমিশন যে একটা উদাসীনতায় গা ভাসিয়ে দিত সেই ধারণায় উপনীত হওয়ার জন্য সাধারণ নাগরিকদের কোনও প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে না। সাম্প্রদায়িক প্রচারের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের  ‘ক্ষমতাহীন’ অবস্থানে বিরক্ত হয়ে শীর্ষ আদালত মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে শুধু এই বলেই সতর্ক করেই ক্ষান্ত হয়নি যে অসহায়তায় ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য অবিলম্বে তাঁকে তলব করা হবে,সেই সঙ্গে একথাও বলেছে যে তারা কমিশনের কর্তৃত্বের ব্যাপারটি নতুন করে খতিয়ে দেখবে।নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটা পবিত্রতার মাত্রা যুক্ত করার জন্য যারা আগ্রহী তারা অবশ্যই এই পর্যালোচনার ফলাফলের জন্য গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করবেন।

নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে যে আপোস করা হয়েছে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।সাধারণতন্ত্রের অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো কমিশনও আত্মসমর্পণ করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।যেহেতু বর্তমানে নির্বাচনী প্রক্রিয়া জারি হ্যেছে,তাই নির্বাচন কমিশনারকে এখন সরে দাঁড়ানোর কথা বলাটা বাস্তবসম্মত কাজ হবে না(তাদের নিয়োগ পদ্ধতি নিয়েও পর্যালোচনা প্রয়োজন),তবে তিন নির্বাচন কমিশনারকেই অন্তরাত্মাকেই প্রশ্ন করা উচিত যে নাগরিকদের আশাআকাঙ্খা বিসর্জিত হচ্ছে কিনা।’সিস্টেম’-এর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা গণতন্ত্রের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।একটা সময় ছিল যখন নির্বাচন কমিশন আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক ছিল।সোমবার ভারতের প্রধান বিচারপতি ও অন্য দুই বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছেন যে এই আস্থা ও বিশ্বাস কি আজও অটুট আছে!

এখন এই প্রশ্নও উঠছে যে নির্বাচন কমিশনের গৃহীত ব্যবস্থা কি অতি বিলম্বিত ও অতি নগণ্য? তা কি ঘোড়া পালিয়ে যাওয়ার পর আস্তাবলের দরজা বন্ধ করার সামিল?বেশ কিছু রাজনীতিক(এর মধ্যে সব দলের নেতারাই আছেন)নির্বাচন সংক্রান্ত যথার্থভাবে শেষ সীমার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।এদের কেউই দলীয় নেতৃত্বের ভর্তসনার শিকার হন না।

শাসক দলের নেতৃত্ব যে মাপকাঠি স্থির করেছেন তাতে লালকৃষ্ণ আদবানি ও তাঁর সমসাময়িক নেতারা হয়ত চিরকালের জন্যই বাতিল হয়ে গেছেন।বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে তাঁরা সেকেলে প্রতিপন্ন হ্যেছেন।তথাকথিত আদর্শ আচরণবিধি চালু হওয়ার আগেই একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে ২০১৯ এর নির্বাচনী প্রচারে নেতিবাচকতাই প্রাধান্য পাবে।নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও স্লোগান এবার আর তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না,তার জায়গা নিয়েছে আগের সরকার কী করতে পারেনি তার চুলচেরা বিশ্লেষণ। মেরুকরণের ক্যান্সার এমন গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে গেছে যে সাময়িকভাবে যে চার নেতার কণ্ঠরোধ করা হয়েছে তাঁরা কোনও অপরাধ করেছেন বলে আদৌ মনে করেন কি?কারণ তাঁরা তো রাজনৈতিক স্রোতের অনুকূলেই সাঁতার কাটছেন।নির্বাচন কমিশনকে যদি সোমবারের মাপকাঠিতে ব্যবহার করতে হয় তাহলে কোনও ‘ভাষণই’ ছাড়পত্র পাবে না।শীর্ষ আদালত কি এর কোনও প্রতিকার করতে পারবে,যা দেশের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।