দিল্লি ও হিমাচল প্রদেশের দুর্গাপুজো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা অনন্য

শারদীয়া দুর্গাপুজো ২০২৪ এ রাজধানী দিল্লির প্রতিটি পুজোয় কয়েক হাজার দর্শনার্থীর সমাগমে এক সুন্দর ভক্তি শ্রদ্ধা যুক্ত আনন্দের ধারা প্রতিটি প্যান্ডেলে, যেন সারা বছরের অপেক্ষার অবসান পঞ্চমী থেকেই দিল্লির প্রত্যেক পুজোয়। মাস খানেক ধরে খেলাধুলা, কবিতা, সংগীত, কারাওকে প্রতিযোগিতা পুজো উপলক্ষে। তার মধ্যে মেলা মাঠ দুর্গাপুজো সমিতি, কালীমন্দির সোসাইটি সিআর পার্ক, দুর্গাপূজা সমিতি মাতৃমন্দির ও অন্যান্য খ্যাত।৪৯তম দূর্গাপূজা সমিতি,মেলামাঠের সভাপতি সন্দীপ সেন ও সম্পাদক দেবাশীষ সেনের অবর্তমানে অর্গানাইজেশন সদস্য প্রনব চৌধুরীর কথায়— সকালের অঞ্জলি দিতে পাঁচ হাজারেরও বেশি সমাগম। পনেরো হাজারেরও বেশি প্রসাদ গ্রহণ করে থাকে। একই দৃশ্য দেখা যায় মাতৃ মন্দির সমিতি সফদরজঙ্গ সভাপতি শ্রীমতি চন্দনা মুখার্জি ও সহসভাপতি আশীষ চক্রবর্ত্তী জানান বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে সাতশো জন সদস্যকে নিয়ে এবারের ৫৮তম বছরে রসনায় আনন্দমেলা, নানান প্রতিযোগিতা, মহিলাদের টোকেন পুরস্কার, বিশেষ করে সেবক বা কর্মচারী বা পুরোহিতদের জন্যও প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা পঁয়ষট্টি লাখের বাজেটে। দিল্লির প্রতিটি বড় বাজেটের পুজোতেই দেখা যায় কয়েক একরের জায়গা নিয়ে পুজো প্যান্ডেল, ভোগ বিতরণ স্থল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থল, সিকিউরিটি গার্ড ইত্যাদি।

পথ চলতে দুই বয়স্কা প্রতিভা প্যাটেল ও আরতি সেন জানান – আমরা সর্ব জাতি সমন্বয়ে ভীষণ আনন্দে মেতে উঠতে পৌঁছে যাওয়া পুজো প্যান্ডেলে। ‘হাম সব মিলকর শ্রদ্ধাপূর্বক পূজাদি মে সম্মিলিত হোকর এক আনন্দ কি সমারোহ মে খো যাতে হ্যায়’জানান প্রতিভা প্যাটেল।
আবার দেখা যায় একদা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সভাপতিত্বে হওয়া দক্ষিণ কালিবাড়ির (আর কে পুরম) বর্তমান চেয়ারম্যান অভিজিৎ মুখার্জির ৫৭ তম দুর্গাপুজো উৎসবে হাড়িভাঙ্গা, মিউজিক্যাল চেয়ার বা ‘কোমল গান্ধার’ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রসাদ বিতরণ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের কৃপানন্দ মহারাজের শুভ উদ্বোধনে পুজোর পরিবেশ ভক্তি ময় হয়ে ওঠা। এদিকে ৮০তম লোধি রোডে দূর্গা পূজা সভাপতি দেবাশীষ পাঁজার অনুপস্থিতিতে বাংলা ভাষা শিক্ষক প্রশান্ত ঘোষ জানান-রাজেশ খান্না বা এ কে রায় (অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া) মতো ব্যক্তিত্ব সত্তরের দশকে যেখানে সভাপতি ছিলেন আজ আমরা স্থানীয় মাত্র ৪-৫ জন ও শেষ ২৪-২৫ জনের মতো বাইরের অঞ্চল থেকে সদস্য সমন্বয় যোগে পুজো চালিয়ে যাওয়া। তবে মিন্টো রোডের দূর্গাপুজো প্রাঙ্গণের গা ঘেঁষে বহু স্টলের মধ্যে এমতো পুজোর পরিবেশে থাকা চিকেন, মটন স্টলের দেখা মেলা কতটা প্রাসঙ্গিক ভক্তমেলায় তা প্রশ্ন জাগে।

কিন্তু সপ্তমীর সকাল থেকেই কালী মন্দির সোসাইটি দুর্গাপুজো সমিতির পুজো প্যান্ডেলে গেলে দেখা মেলে অগুণতি ভক্তবৃন্দের আগমন সপ্তমীর অঞ্জলী দিতে চারজন পুরোহিতের প্রধানের মন্ত্রোচ্চারণে।হাজার ভক্তের সমাবেশ এক একটা ব্যাচে দৃষ্টান্ত। এদিকে মন্দির মার্গে বহু পুরানো কালীবাড়ি কার্যালয়ে সম্পাদক স্বপন গাঙ্গুলী জানান আমাদের এখানে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর আগমন সামলাতে হিমসিম খেতে হয়। এভাবেই দিল্লির দুর্গাপুজোর দিনগুলো ভক্তিময় পরিবেশে মেতে ওঠে রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, ভারত সেবাশ্রম ৯২ সেক্টর ডি এল এফ নিউটাউন, নয়ডা কালিবাড়ি সেক্টর ২৬, জলবায়ু বিহার নয়ডা, বলাকা দুর্গাপূজা সমিতি সেক্টর ৬১ কমিউনিটি সেন্টার নয়ডা, দুর্গাপূজা সমিতি সেক্টর ৭৮ ও অন্যান্য। সর্বত্র পুজোর রঙে, রসে, আনন্দে সকলে মাতোয়ারা। দিল্লির প্রায় প্রতিটি পুজোয় অঞ্জলী শেষে ফলপ্রসাদ প্রাপ্তি বা দুপুরের ভোগপ্রসাদ প্রাপ্তি সত্যই বহির্বঙ্গের পুজোর সংস্কৃতি সম্মত মান বাড়িয়ে চলেছে।


এদিকে দেবভূমি হিমাচল প্রদেশের সিমলা বা বিলাসপুরে দুর্গাপুজোয় দেখা যায় নবমীতে বাঙালিয়ানায় ঢাকের তালে পুরোহিতের বিধিসম্মত মন্ত্রোচ্চারণে দুর্গাপুজো।

শিমলা কালীবাড়িতে দুর্গোপুজোয় হিমাচল প্রদেশের দূর দূরান্ত থেকে আগত কালিবাড়ি সদস্যদের ও স্থানীয় অসংখ্য হিমাচলী ভক্তদের ভক্তিসহকারে অঞ্জলি দিতে দেখা যায়। প্রসাদ বিতরণ, সিঁদুর খেলা,আইটিবিপি ঝিলে নিরঞ্জন, বিজয়া সম্মেলন সবই হয়ে থাকে জানালেন শুভ্রা ভৌমিক। ছোটদের হিন্দিগানে নৃত্য বা আগমনী সংগীত ‘এসো মা দুর্গা..’ ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রতিদিনই হয়ে থাকে জানালেন কল্পনা মজুমদার। আবার হিমাচলী ভাষাভাষী সনাতনী সমন্বয়ের বিধিসম্মত দুর্গাপুজো দেখতে যেতেই হয় বিলাসপুর (শিমলা থেকে ৮০ কিমি) দুর্গা পুজো। এখানে শান্তিপূর্ণ দেবী নিরঞ্জনের দিন সমাগত ভক্তবৃন্দের দুপুর থেকেই একদিকে চলেছে ভান্ডারা অপরদিকে দেবী দূর্গার গমনের মূহুর্তে স্থানীয় বিলাসপুর বাসী মা বোনেরা দেবীর চরণে প্রনাম নিবদন সেড়ে সিঁদুর খেলা ও নৃত্যে মেতে ওঠে। শৃঙ্খলা বদ্ধে লালপেরে সাদা শাড়িতে প্রথমা থেকে নবমীর ঘট মাথায় করে মায়েরা নিয়ে চলেছে। দেবী নিরঞ্জনে স্থানীয় বিধায়ক ত্রিলোক জাম্বাল, মিসেস নাড্ডা, মি. হরিশ, সুদর্শন শাঙ্খ্যায়ন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবৃন্দ সহ সকলেই চলেছেন সতলুজ নদীর দিকে। নদীর চতুর্দিকে সদস্যদের নৌকো ঘিরে নৌকো বিহারে দেবী দূর্গার নদীর মাঝ গিয়ে নিরঞ্জন অভিনব দৃষ্টান্ত।