নির্বাচনী বিতর্কে বিষয়টা অনুপস্থিত,বিভিন্ন বিষয়ে ভুলভাল পরিসংখ্যানের মধ্যেও তার স্থান নেই । কিন্তু বিষয়টি অতিশয় গুরুতর – পানীয় জলের মানের বিচারে ১২২টি দেশের মধ্যে ভারত ১২০তম স্থানে রয়েছে । ৭৫ শতাংশ পরিবারের বাড়িতে পানীয় জলের সরবরাহ নেই ‘ ওয়াটারএইডস বিনিথ দ্য সারফেস : দ্য স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস ওয়াটার’ ২০১৯ রিপাের্টটি গত মাসে বিশ্ব জল দিবসে প্রকাশিত হয়েছে যাতে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।এটা ‘জিরাে -ওয়াটার ডে’ সম্পর্কে নীতি আয়ােগের ধারণাকেই জোরদার করেছে , যা ভারতের রাজধানীতে শুরু হচ্ছে।ভারতের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ জলকষ্টের মধ্যে রয়েছে, নিরাপদ জলের অভাবে প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। তবু ভােটের বাজারে এসব কোনও ইস্যু নয় , প্রার্থীদের মুখে নেই কোনও কথা।দুঃখের বিষয় জলকষ্টে ভােগা মানুষরাও ভােটপ্রার্থীদের কাছে এসব কথা তােলেন না। ভােটদাতারা এখন মন্দির -মসজিদ বিতর্ক নিয়েই মশগুল।তবে দিল্লি , বেঙ্গালুরু , চেন্নাই ও হায়দরাবাদ সহ দেশের ২১টি শহরে ২০২০ সালের মধ্যে ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার নিঃশেষ হয়ে যাবে।এর ফলে ১০ কোটি মানুষ দুর্ভোগের কবলে পড়বে বলে এক বছর আগে নীতি আয়ােগের এক সমীক্ষায় জানানাে হয়েছিল । এতে আরও বলা হয়েছে , জনগণের ৪০ শতাংশ বা ৫০ কোটির বেশি মানুষের ২০৩০ এর মধ্যে আর পানীয় জলের সুযােগ থাকবে না । সময়টা আর বেশি দূরে নয় , মাত্র ১০ বছর পর। এখন যেমন চলছে তেমনই যদি চলে তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের জাতীয় উৎপাদন ৬ শতাংশ কমে যাবে।
এই জলসমস্যার একটা উল্লেখযােগ্য দিক হল উচ্চ আয়ের পরিবারে মাথা প্রতি পানীয় জল ব্যবহারের পরিমাণ ২৫০ লিটার , যা অনেক সময় ৬০০ লিটারেও পৌঁছে যায়। সেখানে নিম্ন আয় বর্গের পরিবারগুলিতে পানীয় জল ব্যবহারের পরিমাণ মাত্র ৪০ লিটার। অন্য দিকটা হল শহুরে ধনী শ্রেণির। স্বার্থপরতা এবং অন্যান্য কিছু ঘটনা যেমন পরিবেশ ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ । জলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে । এই সমস্যা মােকাবিলা না করে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই ।
দিল্লির নজফগড়ের ড্রেন এই সমস্যার একটা প্রতীক । এই ড্রেন ৫০ কিলােমিটার পথ অতিক্রম করে পশ্চিম দিল্লির মধ্য দিয়ে যমুনায় পড়েছে । ক্ষতিটা হল ৬০ শতাংশ দূষিত জল নদীতে গিয়ে পড়ছে । এর সঙ্গে রয়েছে প্রকল্পের ছড়াছড়ি , যার বেশিরভাগই পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় । ফলে সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । তার ওপর শুখা অঞ্চলে জল সরবরাহের জন্য গর্ত খুঁড়ে ভূগর্ভ থেকে জল উত্তোলন করা হচ্ছে , যা সমস্যার সমাধানকে বড় সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে । সত্যি কথা বলতে কী , ভারতের মােট চাহিদার থেকে বেশি জল দিয়ে থাকে বর্ষা , যদিও তার সময় ও বণ্টন অনেক সময় পূর্ণ মাত্রায় হয় না । পাশাপাশি পরিবেশ পরিবর্তনের দিকে আমাদের সব সময় নজর রাখতেই হবে । সমীক্ষায় বলা হয়েছে , ভারত ভবিষ্যতে আরও বেশি বর্ষা পাবে , তখন অনেক অঞ্চল প্লবিত হবে , যা কেরলের ক্ষেত্রে ঘটেছে । হিমালয়ের বরফ ও হিমবাহের দ্রুত গলন এর একটা বড় কারণ।শেষ পর্যন্ত সেই সুষ্ঠূ জল পরিচালন ব্যবস্থার দিকে নজর দিতেই হচ্ছে,জল ব্যবহারের ব্যাপারে আমাদের আরো পারদর্শী ও মনোযোগী হতে হবে।