নৈতিকতার জলাঞ্জলি

জেডি (এস) বিধায়ক বিশ্বনাথ, নারায়ণ গৌড় এবং গোপালাইয়া যাদেরকে কর্ণাটক বিধানসভার স্পিকার কে আর রমেশ বরখাস্ত করেছিল। (File Photo: IANS)

কর্ণাটক বিধানসভার স্পিকার কে আর রমেশ কুমার কংগ্রেসের ১৪ জন ও জনতা দল (সেকুলার)-এর তিনজন বিধায়কের সদস্যপদ বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ পর্যন্ত (অর্থাৎ ২০২৩ পর্যন্ত) বাতিল করে দিয়ে। যে আদেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বহাল রেখেছে। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য ওই বিধায়কদের সদস্যপদ বাতিলের আদেশের উর্ধ্বে উঠে ৫ ডিসেম্বর বিধানসভার উপনির্বাচনে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযােগ দিয়েছে।

দলত্যাগীদের ক্ষমতা ও অন্যান্য সুযােগ সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এইচ ডি কুমারস্বামীর কংগ্রেস-জেডি (এস) জোট সরকারের পতন ঘটানাের জন্য বিজেপি যে ‘অপারেশন লােটাস’ চালিয়েছিল তা আর কারুর অজানা নেই। এই ১৭ জন বিধায়কের পদত্যাগের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে স্পিকার রমেশ কুমার সংবিধানের ১৯০ ধারা-বলে (যে ধারায় স্পিকারকে বিধায়কদের পদত্যাগের সঠিক বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে) ১৭ জন বিধায়কের সদস্যপদ বাতিল বলে ঘােষণা করেন।

এই বিধায়করা নিজ নিজ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তাঁর দলের মনােনয়ন পাবেন এবং নতুন সরকারে তাঁদের মন্ত্রী করা হবে বলে বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা তাঁদের আশ্বস্ত করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, দলত্যাগের ঘটনা যখন ঘটেছিল সদস্যপদ বাতিলের ব্যাপারটা ছিল সেই সময়ের।


তবে সংবিধানের দশম তফসিল অনুসারে কোনও সদস্যের সদস্যপদ বাতিল করা হলে সেটা সংবিধানের ৭৫ (১বি), ১৬৪ (১বি) ও ৩৬১বি ধারার আওতায় পড়ে। এর ফলে সদস্যপদ বাতিলের দিন থেকে তাঁর সদস্যপদের মেয়াদকাল পর্যন্ত তাঁরা কোনও মন্ত্রী বা কোনও লাভজনক রাজনৈতিক পদের অধিকারী হতে পারেন না। তারা বিধানসভায় পুননির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত এটা বলবৎ থাকবে।

একজন সাংবিধানিক কর্মকর্তা হিসাবে স্পিকার সর্বোচ্চ সাংবিধানিক ঐতিহ্যের মর্যাদা রক্ষা করেছেন বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সাংবিধানিক রায়ের প্রেক্ষিতে বলা যায় মেয়াদ শেষ পর্যন্ত কোনও সদস্যের সদস্যপদ বাতিল করার ক্ষমতা স্পিকারের নেই। রাজনৈতিক দলগুলি এখন বিধায়ক নােবেচা ও অন্যান্যরকম দুর্নীতিতে লিপ্ত।

ফলে এইসব অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে নিরুৎসাহ করতে দশম তফসিলের কিছু কিছু দিককে জোরদার করার জন্য সংসদের উদ্যোগী হওয়া উচিত। এই রায় ইয়েদুরাপ্পার পক্ষে অনেক মূল্যের বিনিময়ে অর্জিত জয়। এখন তাঁর সামনে কঠিন কাজ হল ৫ ডিসেম্বর যে ১৫টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে তার অন্তত ৮টিতে জয়লাভ করা।

২২৫ সদস্যের বিধানসভায় বিজেপি’র এখন ১০৫ জন সদস্য রয়েছে। আর রােশন বেগই সদস্যপদ বাতিল হওয়া একমাত্র সদস্য, যিনি বিজেপি’তে ঠাই পাননি, যদিও তার কারণ এখনও অজানা। বাকি সবাইকেই বিজেপি’তে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা তাঁদের ছেড়ে আসা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলীয় মনােনয়ন পেয়েছে।

কংগ্রেস ও জেডি (এস)-এর টিকিটে জেতা এই সদস্য কলঙ্কিত ভাবমুর্তির জন্য নিশ্চিতভাবে ভােটদাতাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে। ইয়েদুরাপ্পা তাঁদের ভবিষ্যতের মন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচার করছে। এটা এখন সুপ্রতিষ্ঠিত যে সমস্তরকম নৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে প্রভূত প্রলােভন ও হুমকির আশ্রয় নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কুমারস্বামী সরকারের পতন ঘটানাে হয়েছিল।

বিজেপি দুর্নীতিমুক্ত শাসন ও গান্ধিবাদী নৈতিকতার বড় বড় কথা বললেও কর্ণাটকে তারা তা জলাঞ্জলি দিয়েছে। বিধায়কদের দলত্যাগ সম্পর্কে কর্ণাটকের সাধারণ ভােটারদের কি ধারণা তা ৫ ডিসেম্বরের উপনির্বাচনে প্রতিফলিত হবে।