• facebook
  • twitter
Thursday, 28 November, 2024

ওয়াকফ বিলে মতানৈক্য

সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনেই বিতর্কিত ওয়াকফ বিল অনুমোদন করিয়ে নিতে চাইছে মোদী সরকার।

সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনেই বিতর্কিত ওয়াকফ বিল অনুমোদন করিয়ে নিতে চাইছে মোদী সরকার। দেশের ওয়াকফ আইন সংশোধনের লক্ষ্যে সংসদের গত বাদল অধিবেশনে এই বিলটি পেশ করা হয়েছিল। বিরোধীদের প্রবল আপত্তিতে লোকসভায় একক গরিষ্ঠতাহীন বিজেপি একতরফাভাবে বিলটি অনুমোদন করিয়ে নিতে পারেনি। বিরোধীদের চাপেই সরকার সংসদের যৌথ কমিটির কাছে বিলটি পাঠাতে বাধ্য হয়। বিরাধীরা কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আরও সময় চাইলেও কমিটির চেয়ারপার্সন বিজেপির সাংসদ জগদম্বিকা পাল দাবি করেছেন, তাঁদের খসড়া রিপোর্ট তৈরি। চূড়ান্ত রিপোর্টও তৈরি হয়ে যাবে কয়েকদিনের মধ্যে। তার ভিত্তিতেই সরকার এই শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি অনুমোদন করিয়ে নেবে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। মনে করা হচ্ছে, এই বিলটিকে কেন্দ্র করে আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে সংসদ কক্ষ। সংসদের দুই কক্ষের বুলেটিনে বলা হয়েছে, ওয়াকফ আইন সংশোধনী বিল সহ সব মিলিয়ে লোকসভায় ১৫টি এবং রাজ্যসভায় ১৬টি বিলের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে। এগুলির মধ্যে ৫টি বিল আবার নতুন।

ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে সংসদের যৌথ কমিটি সম্প্রতি ৬ ঘণ্টা ধরে একটি বৈঠক করে। বৈঠকের পরেই সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, বিলটি নিয়ে সব পক্ষের মতামত শোনা হয়ে গিয়েছে। কিমটির সদস্যদের সবাইকে সব রকমের প্রশ্ন তোলার ও উত্তর জানার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকও সংশোধনীর পক্ষে বিশদে সরকারের যুক্তি ব্যাখ্যা করেছে। তাঁরা বিভিন্ন রাজ্যে গিয়েও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির মতামত ও শুনেছেন। সব মিলিয়ে কমিটির ২৫টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসবের ভিত্তিতে তাঁরা কমিটির খসড়া রিপোর্টও তৈরি করে ফেলেছেন। এখন শুধু তা নিয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার কাজ বাকি। আশা করা যায় কমিটি সর্বসম্মতভাবেই চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করবে। সংসদ। তবে সেই সম্ভাবনা অবশ্য নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, বিলটির একগুচ্ছ প্রস্তাব নিয়ে বিরোধীপক্ষের সদস্যদের জোরালো আপত্তি রয়েছে। কমিটির ধারাবাহিক বৈঠকে আলোচনার পরেও সেগুলি নিয়ে সরকারপক্ষ ও বিরোধীপক্ষের মধ্য মতৈক্য হয়নি। বিরোধীদের স্পষ্ট বক্তব্য, বিজেপি তার হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে এই সংশোধনী এনেছে।

যৌথ কমিটিকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে বলেছিল লোকসভা। সেই মতো শুক্রবারের মধ্যে কমিটির রিপোর্ট পেশ করার কথা। চেয়ারপার্সন জগদম্বিকা পাল বিলের বিভিন্ন ধারা নিয়ে আলোচনা শেষ বলে ঘোষণা করলে ক্ষোভ জানান কংগ্রেস, ডিএমকে, তৃণমূল কংগ্রেস, আপ সহ বিরোধী দলগুলির সদস্যরা। তাঁরা চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। বিরোধীপক্ষের সূত্রে জানা গিয়েছে, কমিটিকে আরও সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ নিয়ে তাঁরা লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লার সঙ্গে দেখা করবেন। প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে তাঁদের এখনও অনেক প্রশ্ন আছে। তাছাড়াও কমিটির চেয়ারপার্সন নিজের পছন্দমতো ব্যক্তি বা সংগঠনকে ডেকে বিলটি নিয়ে মতামত শুনেছেন। অনেক বৈঠকই তিনি একতরফাভাবে পরিচালনা করেছেন, বিরোধীদের ঠিকমতো প্রশ্নও তুলতে দেননি। সব অভিযোগই অবশ্য অস্বীকার করেছেন যৌথ কমিটির চেয়ারপার্সন তথা বিজেপির সাংসদ জগদম্বিকা পাল।

তিনি বলেছেন, বিরোধী সদস্যরা চাইলেই লোকসভার অধ্যক্ষের সহ্ঘে দেখা করতে পারেন। সুতরাং তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবনে, কমিটির সবাই তা মেনে চলতে বাধ্য। কমিটির সামনে পাঁচ দিনে কমবেশি ২৯ ঘণ্টা ধরে প্রায় এক হাজার স্লাইডের মাধ্যমে বিলের বিভিন্ন ধারা ব্যাখ্যা করেছে সংখ্যালঘু বিষয়কে মন্ত্রক। পাশাপাশি দেড়শো সংগঠনের মতামতও শুনেছে কমিটি। এর উপরে ই-মেল সহ বিভিন্ন সূত্রে কমিটি পেয়েছে প্রায় ৯৬ লক্ষ মতামত। তবে এগুলির কোনটিকে কতটা গুরুত্ব দেওয়ার দিকে চেয়ারম্যানের প্রবণতা, বিরোধী সদস্যরা আঙুল তুলেছেন।