• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

বঞ্চিতরা ক্ষুব্ধ, চোখে জল …

তৃণমূলর একুশের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে, যারা নির্বাচনে লড়ার টিকিট লাভে বঞ্চিত, তারা কেউ হলেন অবাক, কেউ ক্ষুব্ধ, কেউ অভিমানে চোখের জল মুছলেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

বিক্ষোভ চারদিকে বিক্ষোভ। তৃণমূল দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একুশের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘােষণা করার সঙ্গে সঙ্গে, যাঁরা নির্বাচনে লড়ার টিকিট লাভে বঞ্চিত, তারা কেউ হলেন অবাক, কেউ ক্ষুব্ধ, কেউ অভিমানে চোখের জল মুছলেন। কোনও কোনও স্থানে তাদের অনুগামীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে শামিল হলেন। টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদে নামলেন। নতুন প্রার্থীকে প্রত্যাহার করার দাবি তুললেন। আবার এঁরা অনেকেই গৈরিক শিবিরে ঢােকার জন্য পা বাড়ালেন। শিবিরের দরজা তাে খুলেই রেখেছেন বিজেপি তাই এঁদের পেলে, কাজে লাগাতে না পারলেও, তৃণমূল ভাঙনের আনন্দে পুলকিত হবেন দলের নেতারা। 

এমনটা যে হবে, তৃণমূল নেতৃত্ব ভালাে করেই জানত। কিন্তু ঘাটা আগে না দিয়ে, অতি কুশলতার সঙ্গে প্রার্থী তালিকায় তাঁদের রাখলেন না। আগে বুঝতে দিলে, দলের ফাটলটা আরও বড় করে তাঁরা বিজেপিতে গিয়ে আশ্রয় নিতেন। তৃণমূলে ‘গেল গেল রব’ উঠত। তৃণমূল নেত্রীর অতি কাছের নেতানেত্রী, আস্থাভাজনদের বুঝতে দেওয়া হয়নি খাড়াটা নেমে আসছে তাঁদের ওপরেই।

তৃণমূলে শৃঙ্খলার অভাব অনেক দিন থেকেই প্রকট হচ্ছিল। অনেক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে তােলাবাজ, কাটমানি নেওয়া এবং সিন্ডিকেট রাজ্যের বিস্তর অভিযোগ কানে এসেছিল দলনেত্রীর। ফলে দলের ভাবমূর্তি দিনদিন ক্ষুন্ন হচ্ছিল। গােষ্ঠীকলহ, দলীয় কোন্দল এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যে যাঁরা দলের আদর্শে বলীয়ান হয়ে মানুষের হয়ে কাজ করতে চাইছিলেন, তারাও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিলেন। কেউ কেউ চরম অস্বস্তিতে ভুগতে ভুগতে দল। ছেড়ে দিয়ে বিজেপিতে যােগ দিয়েছেন। 

যাঁরা এবার টিকিট লাভে বঞ্চিত হলেন, তাঁদের মধ্যে দু-চারজন আছেন, তারা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি, তাঁদের প্রিয় দিদি বিমুখ করবেন। তাদের ছেটে ফেলবেন। যেমন সােনালি গুহ, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার, যিনি সুখেদুখে সর্বদাই দিদির পাশে। অনেকেই বলত, মমতার ‘ছায়াসঙ্গিনী’ তিনি বাদ পড়ার পর কেঁদে ভাসালেন। বললেন, তার অপরাধটা যে কী, তিনি বুঝতে পারছেন না। শুধু চোখ মুছেই তিনি শান্ত হননি, প্রতিবাদে দল ছেড়ে বিজেপিতে যােগ দেওয়ার ইচ্ছে কথা জানিয়ে দিলেন বিজেপির এক শীর্ষ নেতাকে। 

অপর একজন সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনে নেতা মাস্টারমশাই, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। নব্বই ছুই ছুই এই নেতার অভিযোগ তৃণমূল নেত্রী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার সঙ্গে একটু আলােচনাও করলেন না। আশির কোঠা- তার ছাড়িয়ে গেলেও, তিনি এখনও ফিট, একজন সক্ষম জনপ্রতিনিধি। 

তেমনই অপর একজন জটু লাহিড়ি দাবি করেন, তিনি এখনও একজন যুবকের মতােই লড়তে পারেন। টিকিট না মেলায় বিক্ষোভ, আমডাঙ্গায় হাওড়ার শিবপুর এবং উত্তর চব্বিশ পরগনায় আরও কয়েকটি স্থানে।

বিনােদন জগতের ছবির পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বারাকপুর আসনের প্রার্থী। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব তাকে গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক। এই আসনে গত নির্বাচনে যিনি তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন, এবং এলাকায় তার অবদানও রয়েছে, সেই শীলভদ্র দত্ত এখন বিজেপিতে। তিনি সম্ভবত খড়দহের প্রার্থী হবেন, ভূমিপুত্র হিসেবে। 

বারাকপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান এখন প্রশাসক, উত্তম দাস, যিনি দলের এক নিভৃত কোণে, টিকিট পাওয়ার আশা রেখেছিলেন। ক্ষোভ চেপে না রেখে বললেন, গত দশ বছরে যে নির্বাচন হয়েছে, বারাকপুর ভূমিপুত্র হিসেবে কাউকে পায়নি। তাই বারাকপুরবাসীর মনে একটা ক্ষোভ রয়েছে। 

এবার যাঁকে প্রার্থী করা হল, তিনি পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে, কলকাতা থেকে এসে এলাকার উন্নতির জন্য কতটা কী করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ক্ষোভটা প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলের সিংহভাগ দেওয়াল তৃণমূলের দখলে থাকলেও, এখনও প্রার্থীর নামে লিখন শুরু হয়নি। 

তৃণমূলের যাঁরা টিকিট পেলেন না, তাঁদের ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু বিনা কারণে দলনেত্রী তাদের ছেটে ফেলেছেন, এমনও বলা যাবে না। প্রার্থী নির্বাচনে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি একাই নিয়েছেন। অতীতের নির্বাচনে তিনি যেমন করেছেন, এবারও তার পুনরাবৃত্তি।

 টলিউডের বেশ কিছু তারকাদের নির্বাচনে লড়ার সুযােগ দিলেন। এঁদের মধ্যে আছেন সঙ্গীত শিল্পী, আছেন সিনেমা এবং সিরিয়ালের বেশ কিছু মুখ। এরা রাজনীতির জ্ঞানশূন্য, তবে গ্ল্যামার আছে। তার জোরেই হয়তাে কেউ কেউ জয়ী হবেন কিন্তু মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, এলাকার সমস্যা সমাধানের জন্য কতটা সময় দিতে পারলে, তা বলা কঠিন। আছেন ক্রীড়া জগতের দুই মুখও। তালিকায় নতুন মুখের ছড়াছড়— তারা টিকিট পেয়ে পুলকিত।