ভেঙে পড়ছে গণতন্ত্র

নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে দশ বছরে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে চলেছে বিরোধীরা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে শরিক দলগুলির ভরসায় সরকার গড়েছে বিজেপি। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস বিধায়কদের তুলে নিয়ে গিয়ে বিজেপি দলভুক্ত করে ভেঙে দেওয়া হল সরকার। ছিনিয়ে নেওয়া হল রাজ্যের ক্ষমতা। কর্ণাটক, রাজস্থান, মণিপুর— সর্বত্র বিজেপির একই চরিত্র। ফলে ভারতীয় গণতন্ত্র এখন ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে। ক্রমশ একে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে।

এবারে লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদের লড়াইয়ে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। ভোটের আগেই কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। বিশ্বের কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এমনটা ঘটে না। ভোটের লড়াই করতে গেলে অর্থের প্রয়োজন হয়। প্রচার, সভা-সমাবেশের জন্য অর্থ লাগে। সেই জায়গাটি বন্ধ করে দেওয়া হল।

বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে ২০টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়। সাংসদ অবস্থাতেই মানহানি মামলার দায়ে তাঁকে জেলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আপ নেতা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে কারারুদ্ধ করা হয়। ফলে ভারতীয় ভোটারদেরই এখন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই স্বৈরাচারী মনোভাবকে পরাস্ত করে গণতন্ত্র ফিরে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন নিজেকে ভগবানের সঙ্গে তুলনা করছেন। একবিংশ শতাব্দীর একজন প্রধানমন্ত্রী নিজেকে জাহির করার জন্য বলে বেড়ান যে, তাঁর সঙ্গে ভগবানের সরাসরি কথা হয়। অন্যদের থেকে তিনি আলাদা। সবাই জৈবিক মানুষ। একমাত্র ব্যতিক্রম তিনিই আজৈবিক ব্যক্তি। এতেই বোঝা যায়, মাদীর খেলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সংখ্যাগরি,্ঠতা না পেয়ে কার্যত মোদী হেরে গিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে দ্বিচারিতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। লোকসভায় প্রবেশের সময় তিনি হাতে নিয়ে মাথায় ছুঁয়ে নেন ভারতের সংবিধান। মজার বিষয় হলো এটাই। এক হাতে তিনি সংবিধান ধ্বংস করছেন, গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর আঘাত হানছেন। অন্যদিকে, সংবিধানকে মাথায় তুলে রাখছেন। দেখাচ্ছেন সংবিধানে তাঁর অগাধ বিশ্বাস।

আবার ধর্মাচরণের বিষয়েও ফতোয়া দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। তারতীব্র সমালোচনা করে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি বলেছেন, ‘আমাদের লড়াই রাজনীতি নিয়ে নয়। লড়াই হল একজন শিখ তাঁর পাগড়ি পরতে পারেন কি না, তা নিয়েও। এটা সব ধর্মের জন্য।’ কার্যত মোদী সরকারের আমলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকার সঙ্কুচিত হচ্ছে। সংরক্ষণ প্রসঙ্গ টেনে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধি বলেন, ‘কংগ্রেস তখনই সংরক্ষণ ব্যবস্থার ইতি টানার কথা ভাববে, যখন দেশে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। এখনও ভারতে তেমন পরিবেশ বা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

বিদেশের মাটিতে রাহুল গান্ধির এইসব মন্তব্যের বিরুদ্ধে ফের সরব হয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারতের সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং শিখদের সম্পর্কে রাহুলের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁদের দাবি, রাহুল সবসময়ই দেশবিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে চক্রান্ত করে দেশকে টুকরো টুকরো করতে চাইছে। রাহুলের কংগ্রেস দলই সংরক্ষণ-বিরোধী।

জবাবে পাল্টা আক্রমণ করে কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, ‘রাহুল গান্ধি বিদেশের মাটিতে ভারতের সংবিধানকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার কথাই বলেছেন। আসলে রাহুল গান্ধি মুখ খুললেই অস্বস্তিতে পড়ে যায় বিজেপি। ভারত-বিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন রাহুল এমন প্রমাণ থাকলে কেন্দ্র ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। তখন কংগ্রেসও প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যকলাপ ফাঁস করে দেবে। প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গিয়ে এমন সব মন্তব্য করেছেন, সেগুলি আসলে ভারত-বিরোধী।’