• facebook
  • twitter
Sunday, 16 March, 2025

হাসিনার ফাঁসির পর নির্বাচন

কোটা বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের ফলে হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছিল। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণনাশের ভয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নেন।

শেখ হাসিনা। ফাইল চিত্র

বাংলাদেশ এখন একটি আজব দেশ। নৈরাজ্যের দেশ বলা হলেও যথার্থ বলা হল না। ‘জয় বাংলা’— এই জাতীয় স্লোগান অনেক আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ যদি ভুল করেও এই স্লোগান তোলে তাঁর কপালে জুটবে গণপিটুনি। গণ অভ্যুত্থানের আগে শাসক দল আওয়ামি লিগের যে ছাত্র সংগঠন ছিল ‘ছাত্র লিগ’, তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তদারকি সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই। আওয়ামি লিগকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি উঠেছে, কিন্তু তা এখনও কার্যকর হয়নি। কারণ বিএনপি দলের নেতাদের একাংশ চায় না এই দল নিষিদ্ধ হোক। বাংলাদেশের জেলগুলিতে ভর্তি এখন আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীরা।

কোটা বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের ফলে হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছিল। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণনাশের ভয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নেন। এখনও তিনি ভারতে। তাঁর ভারতে থাকার সময়কাল বাড়ানো হয়েছে। এখন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন কোনও না কোনও ঘটনা ঘটছে। যেমন কোটা বিরোধী ছাত্র সংগঠন একটি সভায় সম্প্রতি একটি নতুন দল গঠনের কথা ঘোষণা করেছে। এই দলের নাম জাতীয় নাগরিক পার্টি। এই দল সভায় দাবি জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে গণ পরিষদ গঠন করতে হবে। তারপর নির্বাচিত সংসদ সংবিধান রচনা করবে। এই দলের এক নেতা ঘোষণা করেন, যে পর্যন্ত না গণহত্যার আসামি শেখ হাসিনা ফাঁসির মঞ্চে ওঠেন, সে পর্যন্ত বাংলাদেশে তাঁরা সাধারণ নির্বাচন হতে দেবেন না। হাসিনাকে ভারত থেকে আনিয়ে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁর ফাঁসির আদেশ জানাতে হবে। তাঁর ফাঁসি না হলে তাঁরা দেশে নির্বাচন করতে দেবেন না। ছাত্র নেতার কঠোর হুঁশিয়ারি।

অপর দিকে জামায়েত ইসলামির ছাত্র শাখা এবং এই দলের নেতারা ঘোষণা করেছে যে, সাধারণ নির্বাচন নিয়ে তাঁরা ধীরে এগোতে চান। তবে গণ পরিষদ গঠন করা তাঁদেরও অন্যতম দাবি। কিন্তু বিএনপি তার বিরোধিতা করে বলেছে, ছাত্রদের এসব অজুহাত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার— যা তাঁরা মানবেন না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে সংবিধান রচনা করা হয়েছিল, তার পরিবর্তন করে নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে। নির্বাচনের পর তা সম্ভব। এদিকে তদারকি সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস খান বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এখনই কোনও পদক্ষেপ নিতে চান না। কারণ দেশ এখন নানা সমস্যায় জড়িত— সে সবের সুষ্ঠু সমাধান না করে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা এখনই সম্ভব নয়।

তিনি বলেছেন, নির্বাচনের উপযুক্ত সময় হলেই তিনি নির্বাচনের ডাক দেবেন। তিনি বলেন, আগে তো সংস্কার, সব সমস্যার সমাধান, তারপর নির্বাচন। কিন্তু বিএনপি যখন এখনই নির্বাচন চায়, তাই ইউনূস খান এখন প্রবল চাপের মধ্যে। একদিকে ছাত্রদের আন্দোলন, নতুন দল গঠন, গণপরিষদ গঠন করার দাবিতে ছাত্ররা রাস্তায় নেমে প্রতিদিনই তাঁদের দাবি নিয়ে সরব। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নানা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এখন মনে হয় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্রদের পড়াশুনা এখন শিকেয়। ছাত্ররা রাজনীতি নিয়েই এখন বেশি মগ্ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিভাগীয় প্রধান তাই বলেছেন, ছাত্ররা এভাবে রাজনীতি নিয়ে মেতে থাকলে, তাঁদের নিজেদেরই ক্ষতি। এখন তাঁদের কেরিয়ার গঠনের সময়। আন্দোলনের সময় ভবিষ্যতে অনেক পাওয়া যাবে। ছাত্রদের তা বোঝা উচিত।

এদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বন্দি বিনিময় চুক্তি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তদারকি সরকার শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পাঠানোর আর্জি জানিয়েছে। গণ অভ্যুত্থানের আগে হাসিনার সরকার যেসব মানবতা বিরোধী কাজ করেছে, যেভাবে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, তার জন্য হাসিনাকে শাস্তি পেতে হবে। তাকে কোর্টে বিচারকের সামনে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ইউনূস সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি, যা তিনি দেশবাসীকে দিয়েছেন। হাসিনা তাঁর ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। তার জন্য তাঁকে শাস্তি পেতে হবে। এ ব্যাপরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

এদিকে কোটা বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নতুন দল— জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা সম্প্রতি একটি সভায় ঘোষণা করেছেন, নির্বাচনের পর যে সরকারই বাংলাদেশে গঠিত হোক, তাকে ভারতের এবং পাকিস্তানের অনুগত হতে দেওয়া হবে না। ভারত বাংলাদেশের একটি প্রতিবেশী দেশ হিসেবেই থাকবে— স্বাধীনতা যুদ্ধে বারবার ভারতের অবদানের কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা চলবে না। এদিকে ইউনূস সরকার গত অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে যে প্রভূত সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি করে তার সংস্কারে হাত দিয়েছে। তবে সুখের বিষয় আন্দোলনকারীরা মুজিবের মূর্তি সহ বাংলাদেশের অনেক সম্পত্তির ক্ষতি করলেও তারা পদ্মা সেতুর ওপর হাত দেয়নি। এই সেতু বাংলাদেশের অর্থে হাসিনা সরকারের আমলেই তৈরি হয়েছে। কীর্তিনাশা পদ্মা সেতুর ওপর এই বিশাল সেতু নির্মাণ হাসিনার উদ্যোগেই হয়েছে। এই সেতু নির্মাণের জন্য দেশবিদেশে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। বিদেশের পর্যটক, যাঁরা বাংলাদেশে আসেন, তাঁরা পদ্মা সেতু না দেখে যান না। পদ্মা সেতু নির্মাণ শেখ হাসিনার এক অন্যতম কীর্তি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি হিন্দু মনীষী ও বিজ্ঞানীদের নামে যে সব প্রতিষ্ঠান ছিল, তাঁদের নাম পাল্টে ফেলা হয়েছে। তার জন্য স্থানীয় জনগণের তরফ থেকে কোনও প্রতিবাদ জানানো হয়নি। তেমনই সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু অধ্যাপক ও বিজ্ঞানীদের নামে যেসব প্রতিষ্ঠান ছিল, তাঁদের নাম পাল্টে ফেলা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা ঘোষণা করেছেন, মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা বলে আখ্যা দেওয়া চলবে না এবং তাঁর নামে যা কিছু আছে, তা সরিয়ে ফেলতে হবে। সরকারি অফিসে মুজিবুরের ছবি টানানো বাধ্যামূলক ছিল, সেই ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি পাকিস্তানের জনক কায়দে আজম মহম্মদ আলি জিন্নার জন্মবার্ষিকী ঘটা করে পালন করা হল জাতীয় প্রেস ক্লাবে। কিন্তু প্রতি বছর সাংবাদিকরা এই প্রতিষ্ঠানে যে সরস্বতী পুজো করতেন, তা এবার করতে দেওয়া হয়নি। ইউনূস খান কোন কাজ করেন আর কোন খবর করেন, তাই মেনে এখন দৈনিকগুলিতে খবর ছাপা হচ্ছে।