নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদর্শ আচরণবিধিও ঘোষণা হয়ে যায়। জাতীয় নির্বাচন কমিশন মনে করে এই আচরণবিধি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীরা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলবে। লোকসভা অথবা যে রাজ্যে বা রাজ্যগুলিতে নির্বাচন ঘোষণা করে কমিশন, সেখানেই এই আচরণবিধি বলবৎ হওয়ার নির্দেশ। সবচাইতে বড় বিষয় হল, যে রাজ্যে নির্বাচন হবে, সেই রাজ্যের প্রশাসন, মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা কোনও নতুন জনহিতকর প্রকল্প ঘোষণা করতে পারবেন না। লোকসভার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা দেশের উন্নয়নকল্পে কোনও প্রকল্প ঘোষণা করলে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হবে। কিন্তু নির্বাচন ঘোষণা হলেই দেখা যায় নির্বাচনী প্রচারে নতুন নতুন প্রকল্প ঘোষণা করে দেওয়া হয় ভোট পাওয়ার আশায়। লোকসভা অথবা যেসব রাজ্যে নির্বাচন ঘোষিত হয়, সেখানে নির্বাচনবিধি ভঙ্গ করে নানা প্রকল্প ঘোষণা করতে দেখা যায়— যা কমিশনের নীতির পরিপন্থী। বিধিভঙ্গের অথবা আচরণবিধি না মানার জন্য ভূরি ভূরি নালিশ জমা পড়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে। কিন্তু কমিশন কর্তৃপক্ষকে খুব বড় মাপের আচরণবিধি ভঙ্গ না হলে, ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা যায় না। আচরণবিধি ভঙ্গের নানা ধরনের নালিশ জমা পড়ে কমিশনে। ভোট পাওয়ার আশায় প্রার্থীরা বিভিন্ন জনহিতকর প্রকল্পের কথা ঘোষণা করতে প্রায়শই দেখা যায়। সেক্ষেত্রে যে আদর্শ আচরণবিধি ভাঙা হচ্ছে, সে ব্যাপারে কোনও সাবধানতা অবলম্বন করতে দেখা যায় না। মহারাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী নয়টি সভা করেছেন। প্রত্যেকটি সভায় তিনি কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
সম্প্রতি নির্বাচনী প্রচারে আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে। আর এই আচরণবিধি অমান্য করার জন্য তাঁদের কাছে নোটিশ পাঠাল নির্বাচন কমিশন। মহারাষ্ট্রের নির্বাচনের আগেই এই নোটিশের জবাব পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি জে পি নাড্ডা এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, মহারাষ্ট্রে শিবসেনা এবং এনসিপি ভাঙিয়ে বিজেপি জোট সরকার একের পর এক প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের এ ব্যাপারে বড় ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে বিরোধীদের পক্ষ থেকে। মহারাষ্ট্রে লগ্নি চূড়ান্ত হওয়ার পরেও, তা গুজরাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি রাহুল গান্ধি এই প্রকল্প গুজরাতে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রের বিজেপি জোট সরকারকে এক হাত নেন। তিনি বলেছেন, যে প্রকল্পটি মহারাষ্ট্রের জন্য ঘোষিত হয়েছে, সেটি কেন প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাতে নিয়ে যাওয়া হল? এটি একটি চরম নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের ব্যাপার। যা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না এবং গর্হিত অপরাধ।
এই দলের এক নেতা বলেন, রাহুল গান্ধি তাঁর নির্বাচনী ভাষণে রাজ্যগুলিকে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। রাহুলের মিথ্যা ভাষণের অভিযোগ তোলেন তিনি।
আবার এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ আনেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনেন, তা হল তিনি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মিথ্যা এবং বিভাজনমূলক বক্তব্য রেখেছেন। একই সঙ্গে কংগ্রেস ও তার শরিক দলগুলির বিরুদ্ধে জনজাতিদের সংরক্ষণ কেড়ে নেওয়ার মতো মিথ্যে দাবিও করেছেন তারা। কংগ্রেস ও বিজেপির বিরুদ্ধে আচরণ আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ ওঠায়, জাতীয় নির্বাচন কমিশন দুই দলকে চিঠি দিয়ে জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
শিবসেনা প্রধান উদ্বব ঠাকরে কপ্টারে রাজ্যে রাজ্যে তল্লাশির বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছেন। তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশও জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এই তল্লাশি পক্ষপাতমূলক। তারপরই বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে একাধিক নেতার কপ্টারে তল্লাশি চালাতে শুরু করেছে কমিশন। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দে এবং রাহুল গান্ধির কপ্টারে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সম্প্রতি রাহুল গান্ধি নির্বাচনী প্রচারে যান অমরাবতিতে। সেখানে তাঁর কপ্টারে রাখা ব্যাগ খুলে তল্লাশি চালান কমিশনের আধিকারিকরা। সুতরাং নির্বাচনের আচরণবিধি না মানার ঢল চলে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। সবারই উদ্দেশ্য এক, যেনতেন প্রকারে ভোটের বাক্স ভরে তোলা।