স্বাধীনতার ইতিহাসে বিপ্লবীদের অবদান

রাজু পারাল

১৫ আগস্ট। ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক বিশেষ দিন। আনন্দে, ভালবাসায় এবং শহিদদের স্মরণে ১৪৫ কোটি মানুষের দেশ এই ভারতবর্ষ উদযাপন করছে স্বাধীনতা দিবস। এই স্বাধীনতা কিন্তু খুব সহজ পথে আসেনি। ব্রিটিশ রাজশক্তিকে মুক্ত করতে, হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে নিতে হাত কাঁপেনি সেদিন বাংলার তরুণ, কিশোর ও মহিলাদের। তাঁদের অনেককেই জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাতে হয়েছে আন্দামানের সেলুলার জেলের নরক যন্ত্রণায়। তবুও তাঁরা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য হাসতে হাসতে কারাবরণ করেছেন। এঁদের কারও নাম ইতিহাস মনে রেখেছে, আবার অনেকের নাম গিয়েছে ভুলে। তবুও বলতে হয়, শহিদদের রক্ত কখনও বিফল হয় না। শত শত শহিদের রক্তদানের মধ্য দিয়েই একদিন বারতের আকাশে স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়েছিল। চলার পথে যখনই পেছন পানে তাকাই, তখনই ভিড় করে এসে দাঁড়ায় সেইসব মুখগুলো, যাঁরা সত্যিই দেশকে ভালোবেসেছিলেন, দেশ গড়ার স্বপ্নে, মানুষ গড়ার স্বপ্নে যাঁররা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

এখানে তাঁদেরই কয়েকজনের বীরত্বের কথা বলব, যাঁদের স্বদেশপ্রেম, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি আর মুক্তি সংগ্রাম চিরকাল স্মরণযোগ্য থাকবে।
‘হে আমার প্রিয় বন্ধুগণ! মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আমি তোমাদের আমার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। যে অত্যাচারী বৈদেশিক শাসনশক্তি প্রতিদিন আমাদের শোষণ করছে, সেই শোষণ ব্যবস্থার পতন ঘটানোই আমাদের লক্ষ্য। যে বিদ্রোহের আগুন আমরা জ্বালিয়েছি, তোমরা তাকে নিভতে দিও না। জালিয়ানওয়ালাবাগের জবাব আমরা জালালাবাদে দিয়েছি। … তোমরা নিজেদের মধ্যে বিভেদ বা দলাদলি সৃষ্টি করে যেন দেশের কাজ ভুলে না যাও. ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির আদর্শকে তোমরা সার্থক করে তোল, দরকার হলে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করো। আমাদের শুভেচ্ছা তোমাদের যাত্রাপথকে জয়যুক্ত করবে। বন্ধুগণ, তোমরা সবাই বলো, ‘বন্দেমাতরম্’।


প্রিয় নেতার সুরে সুর মিলিয়ে জেলের নির্জনতা ভঙ্গ করে সেদিন অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিরা বলে উঠেছিল, ‘বন্দেমাতরম্’। চট্টগ্রামের কারাগারে সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে মৃত্যুপথযাত্রী প্রিয় নেতার সেই ছিল শেষ ভাষণ। এই প্রিয় নেতাই বীর বিপ্লবী, সশস্ত্র সংগ্রামী, চট্টগ্রামের সর্বাধিনায়ক ‘সূর্য সেন’। সকলের কাছে তিনি পরিচিত ‘মাস্টারদা’ নামে। কারণ স্কুল-মাস্টারি করতে করতেই তিনি বিপ্লবী দল গড়ে তোলেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ব্রিটিশরা আমাদের শত্রু। তাই, তাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। কলেজে পড়ার সময় থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগদান করবেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় কলেজের এক অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাঁকে ধীরে ধীরে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইতিপূর্বে জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসিতে মৃত্যু বিপ্লবী নায়ক সূর্য সেনের মন ও হৃদয়কে ভীষণভাবে আলোড়িত করে। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশ থেকে ইংরেজদের বিতাড়নের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন তখনই। চট্টগ্রাম অঞ্চলেই গড়ে তুলেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’।

সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন অস্ত্র। মাস্টারদা তা জানতেন। ঠিক হয়, চট্টগ্রামের সরকারি অস্ত্রের গুদাম লুণ্ঠন করে অস্ত্র সংগ্রহ করা হবে। যার জন্য দরকার অর্থ, কর্মী ও সামরিক প্রস্তুতি। তলে তলে এই তিনটি জিনিসেরই প্রস্ততি চলতে থাকে, কিন্তু কেউ একটুও জানতে পারল না। এমনকি ব্রিটিশ সরকার পর্যন্ত নয়। সেই দুঃসারসিক পরিকল্পনাটির নায়ক ছিলেন ‘মাস্টারদা’ নিজে। এই পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে মাস্টারদার নিদারুণ দেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়। মাস্টারদাকে সাহায্য করার জন্য ছ’জন সেনানায়ক নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। এই ছ’জন সেনানায়ক হলেন— নির্মল সেন, গণেশ ঘোষ, অম্বিকা চক্রবর্তী, উপেন্দ্র ভট্টাচার্য, লোকনাথ বল এবং অনন্ত সিংহ।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে কয়েকজন সেনানায়ক রাত দশটায় চট্টগ্রাম রেলওয়ের অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে লুঠ করেন। সেদিন মাস্টারদার পরিকল্পনায় চট্টগ্রামের বুকে যে দুঃসাহসিক বৈপ্লবিক কর্ম অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কেঁপে উঠেছিল। চট্টগ্রামে ইংরেজদের শাসনযন্ত্র একেবারে অচল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা হার মানেননি। শেষ পর্যন্ত, অনেক কষ্টে মাস্টারদা গ্রেফতার হন এক বিশ্বাসঘাতকের প্ররোচনায়। ব্রিটিশ সরকার মাস্টারদার বিচার শুরু করলেন। কিন্তু বিচারের নামে হল প্রহসন। মিথ্যা সাজানো সেই বিচারে মাস্টারদার ফাঁসি হয়েছিল। হাসতে হাসতে ফাঁসির কাঠ ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি দেশের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন সূর্য সেন। ফাঁসির পর ব্রিটিশ সরকার মাস্টারদার নশ্বর দেহকে বিলুপ্ত করে দিয়েছিল। ফাঁসির আগের দিন প্রিয় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে মাস্টারদা এক চিঠিতে লিখেছিলেন— ‘ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার ওপর ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। এই তো আমার মৃত্যুকে বন্ধুর মতো আলিঙ্গন করার সময়। … বন্ধুগণ, এগিয়ে চলো, কখনো পিছিয়ে যেও না। দাসত্বের দিন চলে যাচ্ছে, স্বাধীনতার লগ্ন আগত। ওঠো, জাগো, জয় আমাদের সুনিশ্চিত।’

’স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়
দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়।’

ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আর এক পুরোধা পুরুষ হলেন চিত্তরঞ্জন দাশ। দেশবাসীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তাঁকে দেশবন্ধু আখ্যায় ভূষিত করেছিল। দেশবাসীর কল্যাণের জন্য নিজের ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আহার-নিদ্রা, ধন-দৌলত সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন তিনি। বিরলতম এই বঙ্গসন্তান সকলের কাছে সি আর দাশ নামেই ছিলেন বেশি পরিচিত। একজন প্রখ্যাত আইনজীবী হিসেবে জীবন শুরু করেছিলেন।পরে দেওয়ানি ও ফৌজদারী মামলার সফল উকিল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। প্রায় সেই সময় থেকেই তাঁকে দেশপ্রেমিক ও দেশসেবকদের রক্ষক রূপে দেখা যায়। ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় ও বিপিনচন্দ্র পাল রাজদ্রোহের দায়ে কলকাতার ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অভিযুক্ত হলে চিত্তরঞ্জন তাঁদের দু’জনের পক্ষ সমর্থন করেন। ১৯০৮ সালে, আলিপুর বোমা ষড়যন্ত্র মামলায় শ্রীঅরবিন্দ ঘোষকে গ্রেফতার করা হলে চিত্তরঞ্জন অরবিন্দের পক্ষ সমর্থন করেন। বিনা পারিশ্রমিকে নিজের আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে তিনি আসামি পক্ষ সমর্থন করার জন্য প্রস্তুত হলেন। মামলা চালার জন্য সে সময় চিত্তর]্জনকে ৫০ হাজার টাকা দেনা করতে হয়েছিল। তবুও তিনি দেশপ্রেমিক, বীর বিপ্লবী অরবিন্দকে বাঁচাবার জন্য কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করেন। মামলাটি দায়রা আদালত থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রখর আইনজ্ঞান ও বাক্শক্তির বলে অরবিন্দ সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি লাভ করে। দেশপ্রেমিক ও বিশিষ্ট আইনজীবী হিসেবে এই সময় থেকেই তাঁর খ্যাতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই বোমা মামলায় আসামিদের পক্ষ সমর্থন করেই তিনি বলেছিলেন তাঁর বিখ্যাত উক্তিটি, ‘স্বাধীনতার আদর্শ প্রচার করা যদি অপরাধ হয়, তবে আমি অপরাধী।’

বাল্যকালেই চিত্তরঞ্জন ভারতের অন্যতম সুপরিচিত নেতা ও প্রখ্যাত বাগ্মী বিপিনচন্দ্র পালের সংস্পর্শে আসেন। ১৯০৬ সালে চিত্তরঞ্জন কলকাতা কংগ্রেসের অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হয়ে কংগ্রেস দলের কর্মী হয়ে উঠলেও 1917 সালে জাতীয় কংগ্রেসের বঙ্গীয় প্রাদেশিক জাতীয় সমিতির সভাপতি হয়ে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

১৯১৯ সালে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তাঁর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। ১৯২০ সালে গান্ধিজির ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে তীব্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। দেশপ্রেমিক সুভাষচন্দ্র বসু এই সময়ে স্বাধীনতার কাজে অংশ নিতে চাইলে গান্ধিজি সুভাষকে চিত্তরঞ্জনের সহযোগী হিসেবে কাজ করার পরামর্শ দেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুভাষচন্দ্র গান্ধিজিকে অসহযোগ আন্দোলনকে সে সময়ে দুর্বার গতিতে পরিচালিত করেন।

১৯২১ সালে চিত্তরঞ্জন আইন অমান্যে যোগ দিয়ে কারাবরণ করায় দেশে তুমুল আলোড়নের সৃষ্টি হয়। পরে তিনি নিজের উদ্যোগে গড়ে তোলেন ‘স্বরাজ্য দল’। ১৯২৪ সালে জনপ্রিয় এই মানুষটি কলকাতা কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র হন ও সুভাষচন্দ্র বসু হন তাঁর ‘চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার’ (সিইও)। ১৯২৫ সালের ১৬ জুন চিত্তরঞ্জনের তিরোধানে শোকে, বেদনায় স্তব্ধ হয়ে গেল ভারতবাসী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এই মহান দেশপ্রেমিকের উদ্দেশ্যে লিখলেন্:

‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।’

ভারতের মুক্তি সংগ্রামে যে ক’জন অগ্নিকন্যা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ইতিহসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে অরুণা আসফ আলির নামও। ‘গ্র্যান্ড ওল্ড লেডি’ নামে পরিচিত অরুণা আসফ আলির জন্ম পাঞ্জাবের কালকাতে। এলাহাবাদের ব্যারিস্টার তথা বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা আসফ আলির হাত ধরেই অরুণার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। পরবর্তীতে তাঁরা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। গান্ধিজির আইন অমান্য আন্দোলনের সূত্র ধরে লবণ সত্যাগ্রহের আহ্বানে ১৯৩০ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে ব্রিটিশদের হাতে গ্রেফতার হন। ১৯৩১ সালে স্বাক্ষরিত গান্ধি-আরউইন চুক্তির শর্তস্বরূপ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি হলে তিনিও বন্দিদশা থেকে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৪২ সালের ৯ আগস্ট বোম্বাইয়ের ‘গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে’ (বর্তমানে আজাদ ময়দান) ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ক্রান্তি কন্যারূপে জনসমুদ্রে দুর্বার আন্দোলনের ঢেউ তোলেন। ব্রিটিশ নজরে পড়ার আগেই গ্রেফতারির হাত থেকে রক্ষা পেতে তিনি আত্মগোপন করেছিলেন।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে নারীসমাজের উন্নতির জন্য নারী শিক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেন। পরবর্তীকালে ক্রমে রাজনীতি থেকে সরে সমাজসেবা ও লেখালেখির ক্ষেত্রে চলে আসেন। গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন ইংরেজি দৈনিক ‘প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সঙ্গে। স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং 1997 সালে ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন এই অগ্নিকন্যা।

পরাধীনতার গ্লানি বিজ্ঞান তাপস আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রকেও অহর্নিশ বিদ্ধ করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক হইবার ইরাকাংখা আমার কোনওকালেই ছিল না। বক্তা হিসাবে প্রসিদ্ধ হইবার ইচ্ছাও আমার নাই— তথাপি খ্যাতনামা রাজনৈতিক বক্তাদের বক্তৃতা শুনিবার সুযোগ আমি কখনও ত্যাগ করি নাই।’ অথচ এই প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানীকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯১৯ সালে কুখ্যাত রাউলাট আইনের বিরুদ্ধে জনসমাবেশে বক্তৃতা করার জন্য আহ্বান জানালে তিনি তা উপেক্ষা করতে পারেননি। বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বৈজ্ঞানিক, গবেষণাগারই কর্মস্থল। কিন্তু এমন সময়ও আসে, যখন একজন বৈজ্ঞানিককেও দেশের ডাকে সাড়া দিতে হয়। আমি ঐ ক্ষতিকর আইনের বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। … বিজ্ঞানের চর্চা অপেক্ষা করতে পারে, কিন্তু স্বরাজ্যের আন্দোলন অপেক্ষা করতে পারে না।’
১৯০১ সালে ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস তৈরি হয় এই বিজ্ঞান তাপসের প্রচেষ্টায়। ব্রিটিশ পণ্যকে আমাদের দেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে নির্বাসন দিতে সক্ষম হন তিনি। প্রত্যক্ষ ময়দানে মন মাতানো স্লোগানে জোয়ার না তুললেও পরোক্ষভাবে পরাধীন দেশে স্বাধীনতার লড়াই চালিয়েছিলেন বিজ্ঞান তাপস প্রফুল্লচন্দ্র। পরাধীন দেশে একক প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে কেমনভাবে স্বাধীন এবং স্বনির্ভরতার নিশান ওড়াতে সক্ষম হয়েছিল এই শিল্প, ভাবলে মনে বিস্ময় জাগে।
স্বাধীনতার পর অনেকগুলি বছর কেটে গেছে। দেশের অভ্যন্তরে স্বার্থান্বেষী সুবিধাবাদী ও ধর্মান্ধ সংকীর্ণ মানুষ দেশের ঐক্য ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বিপদ যে সৃষ্টি করছে তা বলাই বাহুল্য।