চিনের সঙ্গে টক্কর

প্রতীকী ছবি (Photo: Getty Images)

একটি দেশ থেকে কাঁচামাল নিয়ে এসে বিপুল পরিমাণে পণ্য তৈরি করে পরে তা আবার কাঁচামাল পাঠানাে দেশেই বিক্রির জন্য রফতানি করাই ছিল ইংরেজ শাসনের মূল মন্ত্র। কয়েক শতাব্দী সময় জুড়ে এমন ঘটনা আমরা বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে পড়ে এসেছি। বর্তমানে একবিংশ শতকের ঔপনিবেশিকতাবাদের গল্প হল চিন থেকে আমরা আমদানি করি এবং রফতানিও করি। অন্ততপক্ষে পরিসংখ্যান তাই লছে। 

২০১৪-১৫ এবং ২০১৯-২০ সালে আমরা কম মূল্যের কাঁচামাল চিনে রফতানি করছি এবং উচ্চমূল্য দিয়ে তৈরি পণ্য আমদানি করছি। এটাই এখন ইন্দো-চিন বাণিজ্যের চুক্তি। বাণিজ্যের ক্ষমতা ও পরবর্তী আর্থিক ফলাফল এশিয়ার এই দুই বৃহৎ দেশের সম্পর্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই অবস্থার খুব শীঘ্র পরিবর্তন হওয়ার নয়। 

বিগত ছয় বছরে ভারত যে পরিমাণ পণ্য চিনে রফতানি করে, তার তুলনায় পাঁচগুণ বেশি আমদানি করে থাকে মূল্যের হিসেবে। ২০১৯-২০ সালে সমাপ্ত বিগত ছয় বছরে চিনে ভারতের রফতানির গড় পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সেখানে একই সময়ে চিন থেকে আমদানির গড় পরিমাণ ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 


ভারতের রফতানির তালিকায় রয়েছে খাদ্য পণ্য যেমন মাছ এবং গােলমরিচ থেকে অত্যাবশ্যক পণ্য যেমন আকরিক লােহা, গ্রানাইট পাথর, পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং কটন তন্তু। অন্যদিকে চিন থেকে আমদানির তালিকায় রয়েছে অটোমেটিক ডেটা প্রসেসিং মেশিন, টেলিফোন সরঞ্জাম, ভিডিও ফোন, বৈদ্যুতিন সার্কিট, ট্রানজিস্টর, সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস, টিভি ক্যামেরা, অটোমােবিল যন্ত্রাংশ এবং প্রকল্প সরঞ্জাম। 

কিন্তু বাস্তব ঘটনা হল উভয় দেশের বাণিজ্যের ধরনে ভারতের পণ্য তৈরির অক্ষমতাই প্রকটিত হয়েছে। ভারত সরকার সত্য ঘটনাটি বুঝতে পেরেছে, এজন্য ধন্যবাদাহ। এজন্য নির্মাণ সংযুক্ত উৎসাহ ভাতা (প্রডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ) বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং আত্মনির্ভর উদ্যোগ, মেক ইন ইন্ডিয়া নীতি গ্রহণের ফলে চিনকেও সরবরাহ শৃঙ্খলায় বিশ্ববাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিযােগিতার মুখে ফেলেছে। 

কিন্তু ভারতকে এখনও অনেক অনেক রাস্তা অতিক্রম করতে হবে। চিন থেকে যে তৈরি পণ্য ভারত আমদানি করে থাকে, ভুলে গেলে চলবে না তা ভারতের সাধারণ চাহিদা পূরণে সহায়ক এবং এগুলি কেউ জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে না। ফলে, ব্রিটিশের মতাে ঔপনেশিকতাবাদ এখানে তুলনামূলক নয়। চিন নিত্যপ্রয়ােজনীয় পণ্য নির্মাণে যে দক্ষতা অর্জন করেছে তা প্রতিযােগিতার ক্ষেত্রে অন্যদের অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে। 

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ভারতে টেলিফোন বিপ্লব সম্ভব হয়েছে চিন থেকে টেলিকম সরঞ্জাম এবং মােবাইল ফোন বিপুল পরিমাণে আমদানির ফলেই। এখনও ভারতের বৈদ্যুতিন হার্ডওয়ার বাজার চিনের পণ্য আমদানি করা ছাড়া অচল বলা যায়। ভারতের টেলিকম এবং মােবাইল ফোন উৎপাদন শিল্প এখনও খোড়াচ্ছে পিএলআই প্রকল্প চালু করা সত্ত্বেও।

 আমাদের বাস্তবতাকে মেনে নিতেই হবে। ভারত রাতারাতি চিনের উৎপাদন দক্ষতাকে টপকে যেতে সমর্থ নয়। কিন্তু রফতানির ক্ষেত্রে ভারত ক্যান্সারের ওষুধ, অটো যন্ত্রাংশ এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য তালিকার মূল্য পুনর্মূল্যায়নের দ্বারা আমাদানির মুল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই পারে।