তরুণ প্রতিভার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর ‘উড়ান’

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর কলকাতায় নতুন কিছু নয়৷ তাবড় তাবড় শিল্পীরা কলকাতার দর্শকদের সমীহ করেই চলেন৷ পন্ডিতজি, ওস্তাদজিদের গান-বাজনা তো লেগেই আছে, কিন্ত্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে দেশের তরুণ তুর্কিরা কেমন তৈরি হচ্ছে, তা জানার খুব একটা সুযোগ তৈরি হয় না৷ অথচ এই তরুণ প্রতিভারাই দেশের ভবিষ্যৎ৷ এবার এই সুযোগ করে দিচ্ছে ভারতীয় বিদ্যাভবন এবং সংস্কৃতি সাগর সংস্থা৷ এদের যৌথ উদ্যোগে একঝাঁক তরুণ প্রতিভাদের নিয়ে জি ডি বিড়লা সভাঘরে আগামী ২৫ মে বসতে চলেছে অভিনব শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর ‘উড়ান’৷ নিঃসন্দেহে কলকাতার জন্য এটা একটা বড় সুখবর৷ তরুণ প্রতিভাদের কাছেও খুব বড় একটা সুযোগ৷ কলকাতার মত সমঝদারি শহরে নিজেদের মেলে ধরার সুবর্ণ সুযোগ৷
‘উড়ান’-এ অংশগ্রহণ করবেন দেশের অন্যতম বাছাই করা কয়েকজন তরুণ প্রতিভা৷ যাঁরা ইতিমধ্যেই দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলতে শুরু করেছেন৷ এই আসরে থাকছে উদীয়মান প্রতিভা সেতারবাদক মেহতাব আলি নিয়াজি এবং সাড়া-জাগানো তবলাবাদক দেবজিৎ পতিতুন্ডির যুগলবন্দি৷ দুজনেই ছাইচাপা আগুন৷ দুজনেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবারের উত্তরসূরি৷ মেহতাব মোরাদাবাদ ঘরানার সেতারবাদক৷ বাবা বিখ্যাত সেতারবাদক মহসিন আলি খানের কাছেই অনেক ছোটবেলা থেকেই মেহতাব তালিম নিয়েছেন৷ স্বয়ং বিরজু মহারাজ, জাকির হুসেনের মত দিকপালরা ওঁর বাজনার তারিফ করেছেন বারবার৷ দেবজিতের হাতেখড়ি ওঁর বাবা তবলাবাদক অমল পতিতুন্ডির কাছে৷ পরে বাবার গুরু শঙ্খ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে নাড়া বেঁধেছিলেন৷ এখন ওঁরা দুজনেই দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠান করে ক্রমশই নিজেদের জায়গা শক্ত করে নিচ্ছেন৷
থাকছে এই সময়ের অন্যতম প্রতিভাময় তরুণ তবলাবাদক যশবন্ত বৈষ্ণবের একক তবলা বাদন৷ মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই নিজের বাবার (বিখ্যাত তবলাবাদক রাজেন্দ্র বৈষ্ণব) কাছে তালিম নিতে শুরু করেন৷ আজ নিঃসন্দেহে যশবন্ত তবলা দুনিয়ায় একটা উজ্জ্বল নাম৷ দিকপাল তবলাবাদকদের যোগ্য উত্তরসূরী৷ যশবন্তকে সঙ্গত করবেন দুই প্রতিভাধর তরুণ তুর্কি আকাশ জালমি (হারমোনিয়াম) এবং আমন হুসেন (সারেঙ্গি)৷ অনুষ্ঠান শেষ হবে নবীন প্রজন্মের অন্যতম একজোড়া বিস্ময়কর প্রতিভাধরদের যুগল ঝংকারে৷ এঁরা হলেন সরোদবাদক ইন্দ্রায়ুধ মজুমদার এবং তবলাবাদক ইশান ঘোষ৷ দুজনেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে আজ পরিচিত নাম৷ দেশে-বিদেশে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে ছড়িয়ে দেবার কাজে উজ্জ্বলতম কান্ডারি দুজনেই৷ ইন্দ্রায়ুধ বিখ্যাত সরোদবাদক পন্ডিত তেজেন্দ্রনারায়নের সুযোগ্য পুত্র এবং ঈশান বিখ্যাত সেতার এবং তবলাবাদক নয়ন ঘোষের যোগ্য উত্তরসূরি৷ কয়েকমাস আগেই এঁদের যুগলবন্দি কলকাতায় সাড়া ফেলেছিল৷ আবার কলকাতাকে মাতাতে দুজনকে একসঙ্গে মঞ্চে দেখা যাবে৷
তরুণদের নিয়ে এমন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর খুব একটা হয় না৷ তরুণদের মেলে ধরার জন্য ভারতীয় বিদ্যাভবন এবং সংষ্কৃতি সাগরের তাই এখানে বড় ভূমিকা৷ গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যায় নতুন যৌবনের ডাকে সামিল হবে গোটা কলকাতা৷

মৃণাল শতবর্ষে ‘জীবনস্মৃতি’
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে যে প্রশ্নটি নিয়ে আজ আর বিতর্কের বড় একটা জায়গা নেই সেটি হলো এই : যে মার্কসবাদী মতাদর্শকে সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের ভিত্তি গণ্য করা হত, তার বৌদ্ধিক অনুশীলনে গোড়া থেকেই বড় রকমের বিকৃতি ঘটে গিয়েছিল৷ আর মার্কসবাদের এই বিকৃত সোভিয়েত ভাষ্যই পরবর্তীকালে একদিকে যেমন সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতনকে অনিবার্য করে তুলল, অপরদিকে গ্রাস করল বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টির দৃষ্টিভঙ্গিকে৷ বহু নতুন তথ্যের আলোকে এখন এও স্পষ্ট হচ্ছে যে মার্কসবাদের তাত্ত্বিক অনুশীলনের ক্ষেত্রে লেনিনের অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং তিনি হয়ে পড়েছিলেন সম্পূর্ণ একা৷ কিন্ত্ত মার্কসের মৃতু্যর পরে তাঁর মূল ভাবনাকে আমল দেওয়া হলো না৷ তিনি অনুশীলিত হলেন মার্কসবাদের বিকৃত সোভিয়েত ভাষ্যের আলোকে, এককথায় যার মূল কথাটি ছিল যান্ত্রিক বস্তুবাদ | যাঁরা এর বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের ভাবনায় অগ্রাধিকার পেয়েছিল দ্বান্দিকতা এবং চেতনার গুরুত্ব ৷ কিন্ত্ত তাঁরা সোভিয়েত মার্কসবাদের বৌদ্ধিক চর্চায় সম্পূর্ণ ব্রাত্য হয়ে গেলেন, কারণ লেনিনোত্তর সোভিয়েত ইউনিয়নে জাঁকিয়ে বসা এক দানবীয় পার্টিতন্ত্র হয়ে দাঁড়াল জ্ঞানচর্চার একমাত্র নির্ধারক, যেখানে প্রশ্রয় পেল যান্ত্রিক বস্তুবাদ৷ কেন এমনটা হলো এবং সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের বৌদ্ধিক গতিপথ কীভাবে রুদ্ধ হয়ে গেল চারটি পর্বে তারই একটি দৃশ্য-শ্রাব্য উপস্থাপনা জীবনস্মৃতি আর্কাইভের উদ্যোগে আর্কাইভের ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তিলাভ করলো ১৪ এবং ১৫ মে ৷

জীবনস্মৃতি-এর একটি দৃশ্য-শ্রাব্য উপস্থাপনা : সোভিয়েত মার্কসবাদের বৌদ্ধিক বিকাশ : একটি পুনর্পাঠ৷ ক)‘সোভিয়েত মার্কসবাদ : যান্ত্রিক বনাম বৌদ্ধিক’, খ) ‘একঘরে লেনিন’, গ) ‘যা কিছুসব পার্টি লাইন মেনে’ এবং ঘ) ‘ছাঁচে ঢালা বৌদ্ধিক চর্চা’ –মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে এই চারটি শিরোনামে চার পর্বে ‘সোভিয়েত মার্কসবাদের বৌদ্ধিক বিকাশ : একটি পুনর্পাঠ’ বিষয়ে আলোকপাত করলেন অধ্যাপক শোভনলাল দত্তগুপ্ত৷ সমগ্র উপস্থাপনাটির পরিকল্পনা ও রূপায়ণে আর্কাইভের কিউরেটর অরিন্দম সাহা সরদার৷


মাতৃ দিবসে
মা-এর উদ্দেশে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন–
‘যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই৷’

গত ১২মে মাতৃ দিবসে সন্তোষপুর অনুচিন্তন আর্ট সেন্টারে ছায়ানট (কলকাতা) – এর বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমাদের মা’ অনুষ্ঠিত হলো৷ অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মান জ্ঞাপন করা হয় নৃত্যশিল্পী অলোকানন্দা রায়কে৷ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চন্দ্রা মুখোপাধ্যায় এবং প্রাবন্ধিক – সম্পাদক দেবজ্যোতিনারায়ণ রায়৷ মা- সন্তানের সম্পর্কে জড়িয়ে থাকার সুর শোনা যায় চন্দ্রা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে৷ অনুষ্ঠানের শুরুতে বাঙালির প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ শ্রীমতী কল্যানী কাজীর প্রথম প্রয়াণবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়৷ নজরুল চর্চায় তাঁর অবদান কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন উপস্থিত সকলেই৷

সেই সন্ধ্যায় স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন সুজল দত্ত ও সোনালী চট্টোপাধ্যায়৷ মা সম্পর্কিত কবিতা আবৃত্তি করেন অরণ্যস্পন্দন ভদ্র, আর্যদু্যতি ঘোষ, অর্ঘ্যদু্যতি ঘোষ, রীতিশা ব্যানার্জী, ইন্দ্রাণী লাহিড়ী, দেবযানী বিশ্বাস, সুকন্যা রায়, তনুকা চক্রবর্তী, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্বেষা মুখার্জী, সীমা মিত্র ব্যানার্জী, অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা পিহুঁ কর্মকার, সুদীপ্তা মুখার্জি, জি. এম. আবুবকর, স্বাগতা ভট্টাচার্য, অপর্না চক্রবর্তী, শ্যাম সাহা, পিয়ালী ঘোষ, দেবস্মিতা দাস ও রীতা শর্মা এবং শিশুশিল্পী সম্প্রীতি দাস৷
দলীয় পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন- বৈখরী, শ্রুতিবিতান, গানের সাথী, ঠাকুরপুকুর চিদানন্দ ডান্স একাডেমি – এর শিল্পীবৃন্দ৷ সমগ্র অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক৷

স্প্রিং ফেস্টিভাল
সম্প্রতি জ্ঞান মঞ্চে দুদিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অ্যামিউজিং – এসিএপিএ – এর বসন্তোৎসব৷ উল্লেখ্য যে, অ্যামিউজিং সংস্থাটি আজ থেকে ছাব্বিশ বছর আগে প্রখ্যাত তবলাবাদক পন্ডিত সমর সাহার অনুপ্রেরণায় তৈরি করেছিলেন তাঁরই ছাত্র ও তবলাবাদক রাজনারায়ণ ভট্টাচার্য৷ এটির মুল উদ্দেশ্য, ভারতীয় সংস্কৃতির সঠিক মূল্যায়ন৷ ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সঠিক মুল্যায়নের নিরিখে নবীন ও প্রবীন শিল্পীদের নিয়ে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছেন বিগত ছাব্বিশ বছর ধরে৷ এছাড়া সব সময় চেষ্টা করে চলেছেন দুঃস্থ ছেলে-মেয়েদের পুজোর সময় নতুন জামাকাপড় দেওয়া, বই-খাতা-পেন্সিল ইত্যাদি দিয়ে সাহায্য করতে যাতে তারাও সমাজের মুল স্রোতে এগিয়ে আসতে পারে৷
দুইদিনব্যাপী এই শাস্ত্রীয় উৎসবের শুরু হয় একঝাঁক তরুনশিল্পী দ্বারা নিবেদিত ” ইন্সট্রুমেন্টাল এক্সটাসি” মাধ্যম৷ তাদের নির্বাচনে ছিল রাগ ঝিঁঝিট৷ অংশগগ্রহণ করেন- তবলায় আবির মুখার্জি, মৈনাক ব্যানার্জী ও শমীক চক্রবর্তী, সন্ত্তরে বনানী দাস ও ময়ূখ দাস, বাঁশীতে ঋক মুখার্জি, বেহালায় প্রীতমদেব সরকার৷ এটি পরিচালনা করেন- রাজনারায়ণ ভট্টাচার্যও চিরদীপ সরকার৷ পরিবেশনা ছিল নৈপুণ্যে ভরা৷ হুবলির (কর্ণাটক) বিশিষ্ট কন্ঠসঙ্গীত শিল্পী পন্ডিত অশোক নাদগির ছিলেন পরবর্তী শিল্পী৷ গাইলেন করেন রাগ মারু বেহাগ৷ পরে একখানি ভজন পরিবেশন করেন৷ তাঁকে সহযোগ প্রদান করেন- পন্ডিত আশিস সেনগুপ্ত (তবলা) ও কমলাক্ষ মুখার্জি (হারমোনিয়াম)৷ মারুবেহাগের সঠিক রূপদানে তিনি যোগ্যতার সাথে সক্ষম হন৷ আশিসবাবুর তবলা প্রাণবন্ত ও কমলাক্ষের হারমোনিয়াম বাদন মিষ্টতায় ভরে ওঠে সেদিনের অনুষ্ঠান৷ প্রথম সন্ধ্যার শেষ হয় পন্ডিত অসীম চৌধুরীর সেতারবাদনে৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন বেনারস ঘরানার বিশিষ্ট তবলাবাদক পন্ডিত সমর সাহা৷ পরিবেশনে ছিল রাগ বাহার, দেশ ও শেষে ভৈরবী ৷ প্রয়োগনৈপুন্যে অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে জমজমাট ৷

দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় নবীনশিল্পীদের দ্বারা পরিবেশিত ‘ইন্সট্রুমেন্টাল এক্সটাসি’ দিয়ে৷ এদিনের নির্বাচনে ছিল রাগ হংসধ্বনি৷ সঠিক রেওয়াজ ও অধ্যাবসায় থাকলে অনুষ্ঠান যে কতটা প্রাঞ্জল করা যায় তারই প্রমাণ রাখলো নবীন প্রজন্মের এই দলটি৷ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় শিল্পী ছিলেন ইন্দোর থেকে আগত পন্ডিত গৌতম কালে৷ দরাজ কন্ঠস্বরে শুরু করেন রাগ পুরিয়া কল্যান৷ তবলায় পন্ডিত আশিস সেনগুপ্ত ও হারমোনিয়ামে পন্ডিত হিরন্ময় মিত্র ছিলেন যথাযথ ৷ পরবর্তীতে নিবেদন করেন একটি হাভেলি সঙ্গীত৷ শিল্পীর প্রয়োগ মাধুর্যে অসাধারণ হয়ে উঠেছিল৷শেষশিল্পী ছিলেন বেনারস থেকে আগত ও তেরো বছর বয়সী বেনারসের সৃজা দাস ও তাঁর কত্থক নৃত্য৷ উঠান, পরণ, টুকড়া ও সর্বোপরি তৎকারের মুন্সীয়ানায় সে প্রমাণ করে তাঁর অসামান্য নৃত্য প্রতিভা৷ সহযোগিতা করেন- উদয় শংকর মিশ্র (তবলা ও বোল-পড়ন্ত), শক্তি মিশ্র (কন্ঠ), এবং সন্দীপ নিয়োগী (সেতার)৷
দুদিনের অনুষ্ঠানে সংযোজনার দায়িত্বে ছিলেন- সোনালী চট্টোপাধ্যায়৷

হিন্দুর স্থাপিত পীরের দরগা
হাওড়া জেলার জয়পুর থানা (পূর্বতন আমতা থানা)-র অন্তর্গত আমতা-ঝিখিরা সড়কের সংলগ্ন দক্ষিণে রাউতড়া গ্রামে অবস্থিত মানিক পীরের পূর্বমুখী দোচালা-রীতির একটি দরগা আকারে ছোট হলেও গুরুত্বে বড়৷ দরগাটি রাউতাড়ার ফুটবল মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে৷ স্থানীয় রায় পরিবার প্রতিষ্ঠিত এই দরগার প্রবেশপথের উপরে প্রস্তরফলকে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা আছে- ‘মানিক পীর ভরসা, সন ১২০৪ সালে তপস্বী বাঞ্ছারাম রায়ের স্বনামধন্য পুত্র স্বর্গীয় রামজয় রায় স্থাপিত দরগা তদীয় বংশধরগণ কর্তৃক সংস্কার হইল৷ সন ১৩৫৬ সাল ২রা বৈশাখ’৷

এক মুসলমান পীরের স্মৃতিরক্ষার্থে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দুর স্থাপিত ১২০৪ সালে (ইং ১৭৯৭) এই আশ্চর্য পুরাকীর্তিটি ২২৯ বছর ধরে স্থানীয় হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে এক স্থায়ী মিলনসেতু হিসেবে বিরাজ করছে৷ ভাবা যায়! আজ থেকে ২২৮ বছর আগে হাওড়ার গ্রামাঞ্চলে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির নজির হিসাবে উল্লেখ করার মত কীর্তি রেখে গেছেন জয়পুর থানার রাউতারা গ্রামের কেরানী বাটীর প্রতিষ্ঠাতা এক হিন্দু- রামজয় রায়৷ সেই পীরের দরগার সংস্কারসাধন করে তাঁর বংশধরেরা আজও ধর্মনিরপেক্ষতার যে ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন তা হাওড়ার গর্ব৷ কাছাকাছি বহুগ্রামের হিন্দু মুসলমান নরনারী মানিকপীরকে ভক্তিশ্রদ্ধা করেন, তাঁর কাছে মানত করেন, মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হলে মানসিকের পুজো দিয়ে যান৷ পীরের বাৎসরিক উৎসব হয় বৈশাখের দুই তারিখে৷ তখন বেশ বড় মেলা বসে৷ শতাব্দী প্রাচীন রাউতারা রায় ব্রাদার্স ফুটবল ক্লাবের সহযোগিতায় বসে এই মেলা৷ যা সয়লা বা সহেলার মেলা বলেই বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে৷ এই উৎসবে মানিক পীরের গান হয়, দূরদূরান্তর থেকে হিন্দু মুসলমান ভক্তরা এসে উভয় সম্প্রদায়ের উপাস্য এই পীরকে অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করে যান৷ রায় পরিবারের বর্তমান সদস্য অপূর্ব রায় বলেন, তাঁর পূর্বপুরুষ রামজয় রায় শুধু দরগাই প্রতিষ্ঠা করেননি, এটির পরিচালন ব্যয়ভার বহন করার জন্য বেশ কিছু জমিও বরাদ্দ করে গেছেন৷ তাঁর আশা, এই মানিক পীরের দরগা সারা দেশের কাছে সম্প্রীতির প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত থাকবে আবহমানকাল ধরে৷

অঙ্গন বেলঘরিয়া’র নাটক ‘মৌন বাঁশরী’
অঙ্গন বেলঘরিয়া এই মুহূর্তে থিয়েটারের জগতে এক উল্লেখযোগ্য নাম৷ তাদের আয়োজনে গত ১১ ই মে, শনিবার একাডেমী মঞ্চে সায়ন্তন পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হলো নাট্যকার বেবী সেনগুপ্তর
প্রথম নাটকের বই ‘একাঙ্ক নাটকের সংকলন’৷ এই বইয়ের আবরণ উন্মোচন করেন বিখ্যাত নাট্যকার চন্দন সেন, অভিনেতা সঞ্জীব সরকার, ড: হৈমন্তী চট্টোপাধ্যায়, ই জেড সি সি র প্রধান,অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তন পাবলিকেশন এর প্রধান দিলীপ দত্ত, প্রচ্ছদ শিল্পী রাজেশ দে ও নাট্যকার বেবী সেনগুপ্ত৷
সকলেই বেবী’র নাটক সর্ম্পকে দু এক কথা বলেন এবং বইটির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন৷ সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জনপ্রিয় নাট্য অভিনেতা মুরারী মুখোপাধ্যায়৷

নাট্যকার বেবী সেনগুপ্ত ‘অঙ্গন বেলঘরিয়া’-এর অন্যতম সদস্য৷ তিনি এই দলের হয়ে দীর্ঘ দিন ধরে নাটক লেখা, নাটক নির্মাণ, নির্দেশনা ও অভিনয় করে চলেছেন৷ তার লেখা বহু নাটক ‘অঙ্গন বেলঘরিয়া’ মঞ্চস্থ করেছেন৷ তার নাটক দেশ ও বিদেশে নাট্য মহলে প্রশংসিত হয়েছে এবং পুরস্কৃত হয়েছে৷
এইদিন এই নাটকের বই প্রকাশ এর পর মঞ্চস্থ হয় অঙ্গন বেলঘরিয়া র নতুন নাটক ‘মৌন বাঁশরী’৷ নাটক সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়৷

ছবি ও কবিতা
মন তুমি সর্বশক্তিমান-/ তুমি একমুঠো গ্রীষ্মের উষ্ণতাকে করবী ফুল করে দিতে পারো…৷’ এই কবিতার ছত্র বিশিষ্ট শিল্পী বিনীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ যিনি এই সময়ের একজন সুপরিচিত ছাপচিত্রী৷ সম্প্রতি তাঁর অাঁকা ছবি এবং কবিতার মেলবন্ধনে প্রকাশিত হয়েছে যে বইটি, তার নাম — ধ্বংসস্তূপে গান৷ প্রকাশক– টেক টাচ টাচ৷ ঝকঝকে ছাপা ছবি আর লেখামালা৷ ভূমিকা লিখেছেন বিশিষ্ট কলা সমালোচক মৃণাল ঘোষ৷ তেষট্টিটি কবিতা আর ছবি৷ যার মূল্য বারোশো টাকা৷

মৃণাল সেনের কথায়, বাক প্রতিমা বা চিত্র প্রতিমার সৃজনাত্মক বিন্যাস বা প্রসারণ৷ অনবদ্য ছবির সঙ্গে অনবদ্য কবিতা৷ এটা কিন্ত্ত কবিতার ইলাস্ট্রেশন নয়৷ দুই ক্ষেত্রে অন্তরঙ্গ অনুভবের অনবদ্য উপস্থাপনা৷ শিল্পী ও কবি — একই ব্যক্তি৷ তাই দুই ক্ষেত্রেই গভীরতা সুগাঢ়৷ যা পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে৷ কবিতার শরীরে কবিতা৷ যেমন সুন্দর ছাপা তেমনি বাঁধাই৷ রঙ রূপের আর শব্দ তরঙ্গের যথাযথ মেলবন্ধনে পড়তে পড়তে আর ছবি দেখতে দেখতে পাঠক মৃদ্ধ হবেন৷ শেষ কবিতার নাম বৃষ্টি৷ কবিতার ছত্রে এমনটি আছে– ‘বৃষ্টি হলো অনেকদিন পর-/ আস্টে পৃষ্ঠে ঠাণ্ডা হাওয়া-/আকুল মেঘ অননত-/আজ এই এক্ষুণিটা-/ জীবনের শেষ এক্ষুণি,/ আর আসবে না৷…’

বঙ্গ ভোট
আঁধার ঘর সন্দেশখালি, কইল গঙ্গাধর,
গোপন কথা ওপেন করলো, ভিডিও গুপ্তচর ৷
তাই নিয়ে চলছে গোল, পদ্ম জোড়া ফুলে ৷
কাছা ধরে হ্যাচকা হেইও, নগ্ন আব্রু ভুলে ৷
তপ্ত বঙ্গ গডি়য়ে খাচ্ছে, এঁদো জলের ঘড়া,
রাজনীতি আজ ব্যাধিগ্রস্ত, চেপে ধরেছে জরা ৷
ফুলের গন্ধে মাথাব্যথা, লাগাতে বলছে বাম ৷
কথায় কথায় দিচ্ছে হেঁকে, চুরির বদনাম ৷
বুদ্ধিজীবী মেডেল গলায়, ভাড়ায় নেতা হিরো ৷
চোখ বেঁধে সব চলেছি হেঁটে, বেহালা বাদক নিরো ৷
যুগে যুগে একই স্রোত, ভাসছি পুরনো রঙ্গে ৷
কেন্দ্র-রাজ্য ভোটের বঙ্গে, থাকেনি একসঙ্গে ৷
–প্রীতম কাঞ্জিলাল