• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

চিনের টিকা, হাসিনার হাসি… 

বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক জিইয়ে রাখতে, ভারতের অস্বস্তি বাড়িয়ে, পাঁচ লক্ষ চিনা প্রতিষেধক হাসিনার সরকারের জন্য পাঠিয়ে দিল চিন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (Photo: PID/Handout via Xinhua/IANS)

ভারত চিনের কূটনৈতিক কৌশলটা বুঝতে পারল না। চিন ওৎ পেতে অপেক্ষা ছিল, ভারত করােনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় হিমশিম খেয়ে, বাংলাদেশের প্রাপ্য দুই কোটি ডােজ প্রতিষেধক দিতে পারে কিনা। চিন যখন দেখল ভারত তার কথা রাখতে পারল না, তখনই বন্ধু বাংলাদেশের সাহায্যে এগিয়ে এল। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক জিইয়ে রাখতে, ভারতের অস্বস্তি বাড়িয়ে, পাঁচ লক্ষ চিনা প্রতিষেধক হাসিনার সরকারের জন্য পাঠিয়ে দিল চিন। বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি দিল অদূর ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে আরও চার কোটি ডােজ চিনা প্রতিষেক পাবে ওই দেশ। 

হাসিনা সরকার বাংলাদেশের এই সংকটকালে প্রতিষেধক পেয়ে বেজিংকে ধন্যবাদ জানাল। শুধু ধন্যবাদ দিয়েই শেষ নয়, বাংলাদেশ সরকার বলেছে, দেশের এই দুঃসময়ে বেজিং তার সাহায্যের হাত যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে, তার জন্য দুই দেশের মিত্রতা আরও দৃঢ় হল। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সাথে ভারতের মধুর সম্পর্ক বজায় রাখতে মােদি সরকার বাংলাদেশকে তিন কোটি ডােজ কেভিড প্রতিষেধক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ভারতের তিন কোটি ডোজের মধ্যে এক কোটি ডােজ পেয়ে গেছে এবং তা কাজে লাগিয়েছে। বাকি দু’কোটি ডােজের অপেক্ষায় বসে ছিল হাসিনা সরকার। 

ইতিমধ্যে ভারতে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এত মারাত্মক ভাবে দেখা দিল যে সবকিছু ওলােটপালট হয়ে গেল। এখন ভারত নিজের দেশের প্রতিষেধকের চাহিদাই মেটাবে না প্রতিশ্রুতি মতাে বাংলাদেশকে বাকি দুই কোটি ভােজ প্রতিষেধক পাঠাবে।

ঢাকা বলছে, আমরা ভারতের বাধ্যবাধকতার দিকটা বেশ ভালােভাবেই বুঝতে পারছি, কিন্তু ভারতও আমাদের অবস্থাটা বুঝবে সেই আশা নিয়ে বসে থাকা হয়েছিল। ঢাকার আরও বক্তব্য, বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এবং বিদেশ সচিব ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন বাকি দুই কোটি ভােজ প্রতিষেধক যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি পাঠাতে।

কিন্তু ভারত সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশের প্রাপ্য প্রতিষেধক পেতে। ঢাকা দাবি করেছে, এই তিন কোটি ডোজ প্রতিষেধরে জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটকে টাকা দেওয়া আছে। বাংলাদেশে যারা প্রথম ডােজ পেয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডােজের জন্য বসে রয়েছেন– কিন্তু প্রতিষেধক কোথায়? দ্বিতীয় ডোজ না দিতে পেরে বাংলাদেশ সরকারও বিব্রত। অনেকের দ্বিতীয় ডােজের সময়ও পেরিয়ে গেছে। এখন উপায়? 

শেষ পর্যন্ত মুশকিল আসানে এগিয়ে এল বাংলাদেশের অপর সুহৃদ চিন। ভারতকে পিছনে ফেলে, বেজিং পাঁচ লক্ষ ডােজ চিনা প্রতিষেক হাসিনা সরকারের জন্য পাঠিয়ে দিল। হাসি ফুটল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখে। কিন্তু দিল্লির সাউথ ব্লকের মাথায় বাজ পড়ল– বেজিং হাসিনাকে খুশি করার মােক্ষম সুযােগ পেয়ে গেল। বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৫ লক্ষ মানুষ কোভিড প্রতিষেধরে প্রথম ডােজ পেয়েছেন। 

কূটনৈতিক মহল বলছে, বাংলাদেশের করার কিছু ছিল না। যখন ভারত থেকে প্রতিষেধক যাচ্ছে না, তখন বাংলাদেশেও যারা প্রথম ভােজ নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডােজের সময় উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় সকারকে দোষারােপ করছেন। অথচ গােড়ায়, ভারতের ওপর ভসা রেখেই চিনা প্রতিষেধকের প্রয়ােজন পড়বে, বেজিংকে জানিয়ে দিয়েছিল হাসিনা সরকার। কিন্তু ভারত কথা রাখতে না পারায় চিনের প্রতিষেধক নিতে বাধ্য হল বাংলাদেশ। 

চিন এখন বাংলাদেশের পরম বন্ধু। বাংলাদেশের উন্নয়নে নানাভাবে সাহায্য করেছে চিন — এমনকি সমরাস্ত্রও পাচ্ছে চিনের কাছ থেকে। পদ্মা সেতু নির্মাণেও চিনের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা কাজ করছে। চিন বাংলাদেশে যত আধিপত্য বিস্তার করবে, তত মােদি সরকারের নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটাবে। দিল্লি যথাসময়ে প্রতিষেধক পাঠালে, হাসিনা সরকার হয়তাে চিনের প্রতিষেধকের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করত না। এই প্রেক্ষিতে বেজিং তার প্রতিষেধক পাঠানাের সুযােগ কখনও ছাড়ে?