• facebook
  • twitter
Saturday, 5 April, 2025

মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফর

ইকো পার্কের সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে। বাকি কলকাতা একটি ঘিঞ্চি শহর। অলিগলিতে ভরা।

ফাইল চিত্র

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে লন্ডন যাচ্ছেন। খবরটি নিঃসন্দেহে সুখকর। মার্চ তিনি সেখানে যাবেন এবং তাঁর সফরসূচি শেষ করে ২৯ মার্চ কলকাতায় ফিরবেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাত্রী এবং গবেষকদের সমাবেশে তিনি ভাষণ দেবেন। আশা করা যায় তাঁর ভাষণে তিনি বিভিন্ন বিষয়াদি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরবেন। তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্ব কালে রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন হয়েছে এবং অর্থের প্রাচুর্য না থাকা সত্ত্বেও, বিভিন্ন জনহিতকর প্রকল্প বাস্তবীকরণের কথা তিনি তুলে ধরবেন। তুলে ধরতে পারেন তাঁর প্রিয় ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের সাফল্যের কথা। এই প্রকল্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাদৃত হয়েছে। তাছাড়াও অন্যান্য কল্যাণকর প্রকল্পে রাজ্যের মানুষ কীভাবে উপকৃত হয়েছে, তা তিনি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জানাবেন। মমতা তুলে ধরতে পারেন বাংলার ইতিহাস তার অতীত গৌরব এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথাও। দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ কলকাতায় থাকেন, থাকেন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ। তাঁরা নিজ নিজ ধর্ম বিনা বাধায় পালন করেন। পশ্চিমবঙ্গ বিনিয়োগের একটি আদর্শ রাজ্য, যেখানে ভারী ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের সবরকম সুযোগ রয়েছে। জল, বিদ্যুৎ, জমি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। বাংলা শিল্প ও সংস্কৃতির তীর্থস্থান। এই বাংলায় জন্ম নিয়েছেন বড় বড় মনীষী— তাঁদের অবদানে বাংলা সমৃদ্ধ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, কবিতা, তাঁর প্রবন্ধ দেশের ও বিদেশের মানুষদের প্রেরণা জোগায়।

মুখ্যমন্ত্রী এর আগেও বিদেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি না মেলায় তিনি যেতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে তিনি সেখানকার শিল্পপতিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন এবং বাংলায় বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাবেন। প্রসঙ্গত, তিনি তাদের জানাতে পারেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববাংলা শিল্প সম্মেলনের কথা। এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের অনেক শিল্পপতি যোগ দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বাংলায় লগ্নি করার কী কী সুবিধা সুযোগ আছে, তা তাঁদের অবহিত করলে, তাঁরা বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নি করার প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে যেসব প্রস্তাব বিদেশি শিল্পপতিদের কাছ থেকে এসেছে, তা কার্যকর করা হলে বাংলার উন্নতি হবে, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। বেকারদের কাজের সুযোগ মিলবে। এর আগে তিনি যখন লন্ডনে এসেছিলেন, তখনও লন্ডনের শিল্পপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলায় বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁরা কোন কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবেন, তার প্রস্তাব জানানোর কথা বলেছিলেন। এবারও মুখ্যমন্ত্রী সেই সুযোগ ছাড়বেন বলে মনে হয় না। তিনি আবার শিল্পপতিদের অনুরোধ জানাবেন, বাংলায় শিল্প স্থাপনের জন্য। জ্যেতিবসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে প্রতিবছরই লন্ডনে আসতেন। এখানে এসে বিশ্রাম নিতেন। শেষবার তিনি আমেরিকায় গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও লন্ডনে এসেছিলেন। তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে সাংবাদিকদের মহাকরণে বলেছিলেন, লন্ডনের দূষণমুক্ত পরিবেশের কথা। তিনি বলেছিলেন, লন্ডনের গাছগুলি দেখে মনে হত, গাছের পাতা জল দিয়ে ধুইয়ে দেওয়া হয়েছে। উন্নত পরিবেশের জন্যই গাছগুলিকে এত সবুজ দেখায়।

অতীতে একবার লন্ডন থেকে ঘুরে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি কলকাতাকে লন্ডন বানাবেন। তাঁর এই কথা নিয়ে বিরোধীরা সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন। বর্ষায় যে শহরের অধিকাংশ অঞ্চল জলে থই থই করে, তা সরাতে দিনের পর দিন লাগে। যে শহরের দূষণের মাত্রা ভয়াবহ। শব্দদূষণ, বায়ু দূষণ, গাড়ির বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, পরিবেশকে দূষিত করছে। যে শহরে ফুটপাথ থাকলেও নেই, সেখানে হকাররা তাঁদের জিনিসপত্র বিক্রি করতে দখল করে আছে। মানুষ রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করে, ফলে দুর্ঘটনা নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা— যে শহরের পয়ঃপ্রণালী সেই ব্রিটিশ আমলের সেই শহরকে লন্ডন বানানোর কথা হাস্যকর।

এরপর আবার লন্ডন সফর সেরে কলকাতায় ফিরে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কলকাতা লন্ডনের চাইতে সুন্দর। এবারও বিরোধীরা তাঁর মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। তবে রাজারহাট এবং নিউটাউনে গেলে মনে হয় বিদেশের কোনও সুন্দর অঞ্চল। সন্ধ্যায় যখন বাতিগুলি জ্বলে ওঠে, তখন নিউটাউন এবং রাজারহাট একটি মায়াবি রূপ নেয়। মনে হয় বিদেশের কোনও অঞ্চল। কিন্তু কলকাতার অন্যান্য অঞ্চলকে সুন্দর বলে আখ্যা দেওয়া সাজে না।

ইকো পার্ক, যেখানে আগে জঙ্গলে ভরা ছিল— তা এখন সুন্দর একটি স্থান প্রাতঃভ্রমণের, বেড়ানোর, নিভৃতে বসে কিছু সময় কাটানো। ইকো পার্কের সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে। বাকি কলকাতা একটি ঘিঞ্চি শহর। অলিগলিতে ভরা। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়। কলকাতাকে সম্প্রসারণের জায়গা নেই। এই শহরের রাস্তার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা বেশি। উত্তর কলকাতায় অসংখ্য জীর্ণ বাড়িতে ভরা। যে কোনও সময় সেই বিপজ্জনক বাড়িগুলি ভেঙে পড়তে পারে। কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা সেই মান্ধাতা আমলের। সুতরাং কলকাতাকে লন্ডনের মতো সুন্দর বলা, বেশি বলা।