কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। চাঁদার অঙ্কে ফুলে ফেঁপে বেড়ে চলেছে বিজেপির তহবিল। ২০২৩-২৪ সালেই বিজেপির কোষাগারে ঢুকেছে ২৬০০ কোটি টাকারও বেশি। খোদ নির্বাচন কমিশনই এই তথ্য জানিয়েছে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত পাওয়া চাঁদার হিসাবে বিজেপি চাঁদা আদায় করেছে ২ হাজার ৬০০ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা। সেখানে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের জুটেছে কেবলই ২৮১ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ সালের তুলনায় ২০২৩-২৪ সালে বিজেপির নির্বাচনী তহবিল তিন গুণ বেড়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের থেকে এই অর্থ ৮ গুণ বেড়েছে। বিজেপিতে বড় অংশের চাঁদা মিলেছে কর্পোরেট ও ট্রাস্ট থেকে। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে এই তহবিলে অনেকে ২০ হাজার উপরে বড় অঙ্কের অর্থ জমা করেছে। অন্যদিকে বিরোধী দল কংগ্রেসের নির্বাচনী তহবিলে জমা পড়েছে ২৮১ কোটি টাকা। নির্বাচন কমিশন দুই দলের চাঁদায় প্রাপ্ত অর্থের যে অডিট রিপোর্ট জমা হয়েছে, তার তথ্য দিয়েছে কমিশনের নিজস্ব ওয়েবসাইটে। দেশের আর কোনও রাজনৈতিক দলের চাঁদায় প্রাপ্ত অর্থ বিজেপির তহবিলের ধারেকাছে নেই। তবে এই তহবিলে অবশ্য নির্বাচনী বন্ডের অর্থ নেই।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনী বন্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। তাই বন্ডের বাইরে বিভিন্ন কর্পোরেট এবং সরাসরি বিভিন্ন ট্রাস্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের তহবিলে চাঁদা হিসাবে যা জমা পড়ে, তারই হিসাব প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ড নিষিদ্ধ করার আগে দেখা গিয়েছে বিজেপির তহবিলে বন্ডের বড় অঙ্কের অর্থ জমা পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বন্ড তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর দেখা গেছে, বহু কর্পোরেট নানা সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে বিজেপিও বিভিন্ন শাসক দলকে বন্ড কিনে চাঁদা দিয়েছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ড মাধ্যমে যে অর্থ রাজনৈতিক দলে জমা পড়েছে তার রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসবিআই প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায় বন্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অর্থ মিলেছে বিজেপির। তার টাকার অঙ্কের পরিমাণ হলো ৬ হাজার ৬০ কোটি টাকা, যা মোট বন্ডের চাঁদার ৪৭ শতাংশ। এর পরে রয়েছে অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেস। টাকার অঙ্কের পরিমাণ হলো ১ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। তৃণমূল কংগ্রেসের পর বন্ডে চাঁদা পাওয়ার তালিকায় রয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেসের নাম। বন্ডে মেলে কংগ্রেসের ১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা, যা মোট বন্ডের মোট অর্থের ১১ শতাংশ। তবে নির্বাচনী বন্ডের বিরোধিতা করে সিপিআই(এম)-এর থেকে কোনও অর্থ গ্রহণ করেনি।
জাতীয় দলগুলির মধ্যে অনেকেই ২০২৩-২৪ সালে অর্থ সংগ্রহ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তাতে জনা গিয়েছে, সিপিআই(এম) চাঁদা সংগ্রহ করেছে ৭.৬৪ কোটি টাকা। আম আদমি পার্টির (আপ) সংগ্রহের পরিমাম ১১.১ কোটি টাকা। বিজেডি জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ সালে তারা কোনও অর্থ সংগ্রহ করেনি। তেলুগু দেশম (টিডিপি) জানিয়েছে, তাদের তহবিলে ১০০ কোটি টাকার বেশি জমা পড়েছে। সমাজবাদী পার্টির (সপা) সংগ্রহ ৪৬ লক্ষ টাকা।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে বন্ড ছাড়া অন্যান্য যে উৎস থেকে বিজেপির চাঁদা মিলেছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। বিজেপির শিল্পপতিদের তৈরি প্রুডেন্ট ইলেকটোরাল ট্রাস্ট থেকে মিলেছে ৭২৩ কোটি টাকা। এই ট্রাস্ট থেকে কংগ্রেসের মিলেছে ১৫৬ কোটি টাকা। প্রুডেন্ট ট্রাস্টে বড় কর্পোরেট সংস্থার মধ্যে রয়েছে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রা লিমিটেড, সিরাম ইনস্টিটিউট, আর্সেসেলর মিত্তাল এবং ভারতী এয়ারটেল, বাজাজ অটো প্রভৃতি। বিজেপির তহবিলে কর্পোরেট চাঁদা আগের বছরের তুলনায় ২১২ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৮-১৯ সালে কর্পোরেট থেকে বিজেপির চাঁদা মেলে ৭৪২ কোটি টাকা। কংগ্রেসের সেখানে চাঁদা মেলে ১৫৬ কোটি টাকা। কর্পোরেট থেকে চিরকালই বড় অঙ্কের চাঁদা মিলেছে বিজেপির। কাজেই সাধারণ মানুষের স্বার্থ নয়, কর্পোরেটদের স্বার্থ দেখাটাই বিজেপির কাছে প্রধান চিরকাল।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও বহু কর্পোরেট সংস্থা নানা সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে বিজেপি ও বিভিন্ন শাসক দলের তহবিলে চাঁদা দিয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন সেসব তথ্যের কিছুটা প্রকাশ করলেও অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।