এই দুটি কেন্দ্রীয় সংস্থা এখন এই বাংলায় যাদের জেরা , গৃহে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন , মাসের পর মাস , তা কি আবহমান কাল চলবে?
যার জন্য তদন্তে এই জেরা এবং তল্লাশি তার শেষ কোথায় ? কবে তদন্ত শেষ হবে , কবে চার্জশিট জমা দেবে , কবে আদালতে কেস উঠবে , কবে বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ হবে , দোষীরা শাস্তি পাবে– এইসব প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মনে , রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সারদা – নারদা কেস চলছে বেশ কয়েক বছর । এখনও তার শেষ কোথায় জানা যায় না। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন দীর্ঘকাল কারাবাসে রয়েছেন , রয়েছেন আরও অনেকেই। এদের বিচার কবে হবে , না জেলেই তাদের বাকি জীবন কেটে যাবে সে প্রশ্নও মানুষকে ভাবাচ্ছে।
অপরদিকে রাজ্য পুলিশের সিআইডি এবং বিশেষ পুলিশ অফিসারদের নিয়ে গড়া স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম ( সিট ) – এরাও বিভিন্ন কেসে তদন্ত করছে। তাদের তদন্ত প্রক্রিয়াও ঢিমেতালে চলছে , এই অভিযোগও শোনা যায়।
এখন রাজ্যে আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনও ঘটনা বা রাজনৈতিক সংঘর্ষ , তাতে মৃত্যু , গুলি করে হত্যা- এই ধরনের ঘটনা ঘটলেই পরিজনরা সিবিআইয়ের তদন্ত চাইছে। বলা হয় , পুলিশের তদন্তে তাদের আস্থা , বিশ্বাস নেই বলেই সিবিআই তদন্তের দাবি।
তাঁদের ধারণা পুলিশ তদন্ত করলে হিংসার পিছনে কী ঘটেছিল সেই সত্য বেরিয়ে আসবে না। পুলিশের কোনও দোষ থাকলে পুলিশই তা চেপে গিয়ে তদন্ত শেষ করবে । আসল দোষীরা ধরা পড়বে না , সত্য চাপাই পড়ে থাকবে।
এই ধারণার বশবর্তী হয়েই সিবিআই তদন্তের ওপর অগাধ বিশ্বাস। তাই সিবিআইয়ের ওপর অসংখ্য কেসের তদন্তের ভার। অনেক কেসে মহামান্য আদালত সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করার পক্ষপাতী। আদালতের নির্দেশেই ওই সংস্থা তদন্ত হাতে নেয়।
কিন্তু এখন যে প্রচুর কেসের তদন্ত এই সংস্থা চালাচ্ছে , তার গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক , তদন্ত শেষে করে চার্জশিট জমা পড়বে তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। বিচারের ফল পেতে দেরি হলে বা আসল দোষীরা ধরা না পড়লে ন্যায়বিচার না পেয়ে তাঁরা নিরাশ হয়ে পড়েন।
সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগছে বলে কলকাতা হাইকোর্টের মহামান্য একজন বিচারপতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দু’একটি কেসে সিটের ওপর তদন্তভার অর্পণ করেছেন যাতে তদন্ত প্রক্রিয়া যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি শেষ হয় এবং চার্জশিট জমা পড়ে।
বিচার পেতে দেরি হলে তা বিচার না পাওয়ারই সামিল। সিবিআইয়ের সমস্যা রয়েছে। একে তো কেসের সংখ্যা অনেক , দ্বিতীয়ত তদন্তকারীদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। যার ফলে তদন্ত দ্রুততার সঙ্গে করা যাচ্ছে না , এটাই প্রধান অন্তরায় । শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতা সিবিআইয়ের জেরার সম্মুখীন হয়েছেন।
দীর্ঘ জেরা , একবার নয় দুই – তিনবার । আবার যে তাঁদের ডাকা হবে না তাও নিশ্চয়তা নেই। তৃণমূল নেতৃত্বের তাই অভিযোগ , বেছে বেছে তৃণমূলের নেতাদেরই সিবিআই কমপ্লেক্সে বিভিন্ন কেসে জেরার জন্য ডেকে পাঠানো হচ্ছে । কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এর পিছনে কলকাঠি নাড়ছে । সুতরাং সিবিআই একটা স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থার সুনাম হারাচ্ছে।
রাজনৈতিকভাবে প্ররোচিত। একদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় , এখানে শাসক দলের শীর্ষ নেতারাই সিবিআইয়ের জেরার মুখে পড়েছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কোনও নেতাকে সিবিআইকে ডাকতে হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন এই গোয়েন্দা সংস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করবে এটাই আশা করা যায়।
তদন্তও হবে নিরপেক্ষ। আর সেই কারণেই মানুষের সিবিআইয়ের ওপর বিশ্বাস অগাধ। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার যদি এর স্বাধীনভাবে চলায় হস্তক্ষেপ করে , এবং এই সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায় , তা কখনও সুখকর হবে না। সিবিআইয়ের অতীত ইতিহাসও বলে , এই সংস্থা তদন্তের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করেছে।
তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে , এই সংস্থা তার আগের সেই গরিমা হারিয়ে ফেলছে। পক্ষপাতিত্বের রূপটি বের হয়ে আসছে। আমরা আশা করব সিবিআই স্বাধীনভাবে তদন্তের কাজ চালাবে । কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা প্ররোচিত হবে না।
আর তা যদি না করে তাহলে একদিন আসবে , যখন পুলিশের মতো সিবিআইয়ের ওপরও মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। সিবিআইয়ের তদন্ত দাবি করবে না। তাই এই ব্যাপারে এই সংস্থার সচেতন থাকা উচিত।