সীমান্তে সংঘর্ষের পরিস্থিতি

ফাইল ছবি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তে যেভাবে উত্তেজনা ও ভারত বিরোধী কার্যকলাপ বাড়ছে, তার জন্য ভারত সরকার কতটা ওয়াকিবহাল তা জানা না গেলেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের কাছে তা মহা উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি মালদা জেলা সংলগ্ন সীমান্তে যে বিপুল লোক সমাগম হয়েছিল এবং প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, তা এই সরকারের চিন্তার কারণ। কারণ এ পারের বাংলার মালদা থেকে যেমন গ্রামবাসী সীমান্তে জড়ো হয়েছিল, তেমনি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট জেলা থেকেই প্রচুর সংখ্যায় গ্রামবাসীও সীমান্ত বরাবর এলাকায় এসেছিল। এই উত্তেজনা তৈরি হয় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে, যে কাজে শুরু থেকেই বাংলাদেশে বর্ডার গার্ডস আপত্তি জানাচ্ছিল। এদিন দেখা গেল বাংলাদেশীদের তরফ থেকে সীমান্ত লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া এবং বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। যদিও অবস্থা সংঘর্ষের দিকে যায়নি— কিন্তু উত্তেজনা জিইয়ে রেখেছিল বাংলাদ্শের সীমান্ত রক্ষীরা। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালদায় প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার পর বলেছেন, বিএসএফের সঙ্গে বাংলাদেশিদের আপনারা গ্রামের লোকেরা সেখানে যাবেন না।

বিএসএফ এবং বিজিবি’র কর্তারা কয়েক দফায় ফ্ল্যাগ মিটিং করে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমিতকরার চেষ্টা করলেও, তা ফলপ্রসূ হয়নি। প্রতিদিনই দীর্ঘ সীমান্তের কোনও না কোনও অঞ্চলে এই বেড়া নিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, যা নিয়ে একদিন দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধতে পারে। ভারত সরকার বাংলাদেশের তদারকি সরকারকে সীমান্তে বেড়া দেওয়া নিয়ে প্রায় প্রতিদিন যে উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে, তা প্রশমিত করার জন্য আর্জি জানালেও কার্যত ওই দেশের সরকার তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। উল্টে তদারকি সরকারের প্রধান উদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস খানের উত্তেজনামূলক বক্তৃতা, যুদ্ধের জিগির এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন। দেশবাসীকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ার উস্কানিমূলক বাণী দিচ্ছেন। এ সবই ভারতকে বিব্রত করা ছাড়া আর কিছু নয়।

কিন্তু ইউনূস খানের এই যুদ্ধের জিগির নিশ্চয় ভারতের বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধের জিগির তোলা এবং সত্যি সত্যিই ভারতের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুললে যার পরিণাম কী ভয়াবহ হতে পারে, তা একবারের জন্যও তিনি ভেবে দেখেছেন কি? দেখেননি। তিনি শুধু উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য এই জিগির তুলছেন। কারণ বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতারা বাংলাদেশে অবিলম্বে সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি তুলেছেন। আর প্রধান উপদেষ্টা বেঁকে বসেছেন তিনি সংস্কারের কাজে সম্পূর্ণ না করে নির্বাচনের দাবি মানবেন না। সংস্কারের কাজ শেষ করতে ২০২৫ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তার মানে বিএনপি চাইলেও, বাংলাদেশে এখনই নির্বাচন হচ্ছে না। ইউনূস খানের কথায়।


কিন্তু সীমান্তে ভারতের দিক থেকে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়ার কাজ ২০২৬ সালে শেষ হতে পারে। অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান ঠেকাতে তা নিয়ে বাংলাদেশের আপত্তি কেন? বাংলাদেশ কি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চায় না? তার কারণ বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু নাগরিকরা ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাক, এই কি বর্তমান তদারকি সরকারের ইচ্ছা আর তার জন্যই যুদ্ধের জিগির? ভারত সরকার এখনও বাংলাদেশ নিয়ে তেমন কোনও কঠোর মনোভাব নেয়নি। এ পর্যন্ত যা হয়েছে তা হল কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনা। কিন্তু বিভিন্ন মহলে দাবি উঠেছে বাংলাদেশ নিয়ে ভারত কড়া ভূমিকা গ্রহণ করুক। তাহলেই বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ছটফটানি, যুদ্ধের জিগির তোলা বন্ধ হবে। আর অনুপ্রবেশ বন্ধ না হলে, তার চাপ এসে পড়বে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওপর। এখন প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তের কোনও না কোনও স্থানে বাংলাদেশ থেকে সে দেশের হিন্দু নাগরিকরা অত্যাচারিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার জন্য এসে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছে। সুতরাং অনুপ্রবেশ বন্ধ না হলে পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা বাড়বে এবং তার আর্থিক সমস্যা বাড়িয়ে তুলবে।

বাংলাদেশ নিয়ে এত ঘটনা সেই আগস্টের গণ অভ্যুত্থান থেকে ঘটে যাচ্ছে, যা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনও একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি। যা নিয়ে বিরোধীরা ক্ষোভ। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্ক বজায় রেখেও সে দেশের সরকারকে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমিত করার কথা বলা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ নিয়ে নীরবতার সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপ্রবেশজনিত সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত যে ভূমিকা নেবে, তার সরকার তা সমর্থন করবে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ সমস্যার সমাধান এবং উত্তেজনা প্রশমিত করা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়দায়িত্ব। তিনি আশা করেন, কেন্দ্রীয় সরকার যথাযথভাবে সে দায়িত্ব পালন করবে। মুখ্যমন্ত্রীর আশা, সেখানে অবস্থা স্বাভাবিক হবে।

সাউথ ব্লকের এক কর্তা সম্প্রতি বলেছেন, ভারত চায় বাংলাদেশের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে যে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তার আশু অবসান। কারণ চোরাচালান, ভারতীয় পণ্যের পাচার এবং অনুপ্রবেশ সমস্যা রুখতে এই কাঁটা তারের বেড়া দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। প্রায় ৬০০ কিলোমিটার অংশ এই বেড়া নেই আর এই অঞ্চল দিয়েই গরুপাচার ও চোরাচালান চলছে। সম্প্রতি এই অঞ্চলে বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে আর তা নিয়ে বাধা দিচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী। কিন্তু কেন এই বাধা দেওয়া? বাংলাদেশ কি চায় না চোরাচালান এবং অনুপ্রবেশ বন্ধ হোক?