দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি

বাংলাদেশে যে অন্তবর্তী তথা তদারকি সরকার গঠিত হয়েছে সাম্প্রতিক গণ অভ্যুত্থানের পর, তার কাজ হল কিছু মৌলিক সংস্কার করে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের পথ খুলে দেওয়া। দেশ শাসন কিন্তু তদারকি সরকারের কাজ নয়। বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক দল বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি) এখন যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চায়। সম্প্রতি বিএনপি এবং অপর দল, বলা হয় তার সঙ্গী জামায়াত ইসলামি এই দুই দলের নেতারা আলাদা আলাদা ভাবে তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে দেশে নির্বাচনের দাবি জানান।এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার কোনও মতামত জানা যায়নি। উভয় দলের নেতারা চান এই তদারকি সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন পিছিয়ে যাবে এবং মানুষও বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়বে। যদিও গণ অভ্যুত্থানে দেশের সম্পত্তির যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে তা এত তাড়াতাড়ি পূরণ করা সম্ভব নয়। আর সেটা তদারকি সরকারের কাজও নয়। এই কাজটি করবে নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে, সেদিন সরকার গঠন করে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হল নির্বাচনের একটি রূপরেখা তৈরি করে নিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। এবং নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে হয় তার ব্যবস্থা করার।

বিএনপি’র মহাসচিব ফরুক ইসলাম আলমগির ও দলের আর পাঁচজন নেতা সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। বৈঠকের পর বিএনপি’র মহাসচিব সাংবাদিকদের জানান, মহম্মদ ইউনূসও তাঁদের বলেন তদারকি সরকারের কাজ হল দেশে গণতান্ত্রিক নিয়ম নীতি মেনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এটাও তদারকি সরকারের অগ্রাধিকার। বিএনপি তাঁর কাছে এ ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দাবি করেছেন।

বিএনপি’র মহাসচিব সম্প্রতি একটি বার্তায় বলেছেন, সংস্কার নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা কম। বিএনপি চায় দ্রুত নির্বাচন— এবং সেই নির্বাচনের পর মানুষের ভোটে যে সরকার গঠিত হবে, সেই সরকারই প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে মনোনিবেশ করবে। আর এই সংস্কারের কাজে ইউনূস সরকারের বৈধতা নিয়েও বিএনপি’র উচ্চপদস্থ নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন। সংস্কার করার মূল দায়িত্ব বর্তাবে নির্বাচিত সরকারের ওপর। তাঁর প্রশ্ন, সংবিধান সংশোধন করা এবং দেশের উন্নয়নের কাজ করার অধিকার তদারকি সরকারকে কে দিল?


বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ দল হিসেবে ঘোষণা করার দাবি উঠেছে কোনও কোনও মহলে, কিন্তু তাদের সঙ্গে একমত নন তাঁরা। অন্যান্য দলের মতো আওয়ামি লিগও একটি দল। তাকে নিষিদ্ধ করলে একটি খারাপ নজির সৃষ্টি হবে। আওয়ামি লিগ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাদের আপত্তি নেই। তবে এই দল দেশে স্বৈরাচারী শাসন চালিয়েছে। দেশের উন্নয়ন যা হয়েছে, তাও বলার মতো নয়। তবে স্বৈরাচারী শাসন সত্ত্বেও নির্বাচনে এই দলকে দেশের মানুষও যদি ভোট দেয়, তাহলে তাদের কিছু বলার নেই। দেশের মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে শেখ হাসিনার দলের শাসন বাংলাদেশের কত ক্ষতি করেছে। সুতরাং আওয়ামি লিগ দেশের মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে; তাই এই দলকে একটি ভোটও দেওয়া উচিত হবে না বলে বিএনপি নেতা মনে করেন। আবার কোনও কোনও মহল মনে করে বাংলাদেশে যদি ভোট সুষ্ঠুভাবে হয়, বিএনপি-জামায়াত যদি ভোটে কারচুপি ও গণ্ডগোল সৃষ্টি না করে, তাহলে আওয়ামি লিগই বেশি ভোটে জয়ী হবে।

অপর দিকে জামায়াত ইসলামী দলের নেতারা অন্তবর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসকে বলেন, তাঁরাও যত দ্রূত সম্ভব নির্বাচন চায়। কারণ তদারকি সরকারের কাজ হল দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তদারকি সরকারের আর কোনও কাজ নেই। তবে জামায়াত নেতাদের মুখে একটি কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। জামায়াত নেতারা ইউনূসকে বলেন, দেশে এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দুর্গাপুজো করছে। তাঁদের পুজো যাতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়, তা তদারকি সরকারের দেখা উচিত। যে জামায়াত ইসলামী দলের লোকেরা গত বছরও পুজোর সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে দুর্গামূর্তি ধ্বংস করেছে, মন্দির অপবিত্র করেছে, সেই দলের নেতাদের মুখে হিন্দুদের দুর্গাপুজো নিয়ে শান্তির বাণী শোভা পায় না। যখন জামায়াত নেতারা পুজোয় শান্তির কথা বলছিলেন, তখনই কিশোরগঞ্জে একটি মন্দিরে নির্মীয়মান দেবীদুর্গার মূর্তি গভীর রাতে ভেঙে ফেলা হয়। শুধু কিশোরগঞ্জে নয়, বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও মন্দিরে দুর্গামূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তদারকি সরকারের প্রশাসন এ ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়। যদিও এই সরকার পুজো উদ্যোক্তাদের কয়েক হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে।

তদারকি সরকার অনির্দিষ্ট কালের জন্য শাসন কাজ চালিয়ে যাবে, নাকি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে দেশে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন।