সন্ত্রাসে কাঁপল লঙ্কা

বিস্ফোরণের সেন্ট সেবাস্তিয়ানস চার্চ (Photo: STR/AFP)

সস্ত্রাসদমনে গণতন্ত্রপ্রিয় পৃথিবীর সব দেশ শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য ও সহযােগিতার আশ্বাস জানাল।শ্রীলঙ্কা চাইলে যে কোনও সাহায্য দিতে তারা প্রস্তুত।ভারতও তার মধ্যে অন্যতম দেশ।সে নিজেও জঙ্গি হানার অশান্তি উৎকণ্ঠা নিত্য বহন করে চলেছে।

শান্ত সুন্দর দেশ এই শ্রীলঙ্কা।প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে ভরপুর।তাই বিশ্বের পর্যটকদের টানে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ পর্যটক এই দেশের নৈসর্গিক মনােরম সৌন্দর্য ভােগ করতে এখানে ছুটে আসেন।সেই সুন্দর দেশটির বুকে জঙ্গি হানা,চরম নৃশংসতার সঙ্গে প্রাণে মারল প্রচুর মানুষকে,তাদের মধ্যে শ্রীলঙ্কাবাসীই সিংহভাগ,ছিলেন বেশ কয়েকশ বিদেশি পর্যটক,যাদের মধ্যে কয়েকজন ভারতীয়ও।জঙ্গিদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল চার্চ এবং বিলাসবহুল হােটেল।পুলওয়ামায় যেমন আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানকে হত্যা করা হল, তেমনি শ্রীলঙ্কার চার্চ ও বড় বড় হােটেলে ভয়ঙ্কর কায়দায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জীবন ও সম্পত্তি ধ্বংস করা হল।ঘটনার তিনচারদিন পর এর দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট(আইসিস)।শ্রীলঙ্কাবাসী যখন এই মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাণহানি নিয়ে শােকে কাতর,কাতারে কাতারে মানুষ চার্চে এসে নিহতদের জন্য শােক জানাচ্ছেন,আত্মার শান্তি কামনা করছেন স্বজনহারারা,তখন আবার জঙ্গিহানা এবং তাদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম।আবার কেঁপে উঠল এই ছােট্ট দেশটির বুক।

জানা যায় শ্রীলঙ্কার ইস্টার্ন প্রভিন্সের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলের একটি বাড়িতে জঙ্গিদের প্রধান ঘাটি । এখান থেকেই ইস্টার রবিবারে জঙ্গিরা কয়েকটি বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল । এই অভিযান চালায় শ্রীলঙ্কার সেনা ও পুলিশ বাহিনী যৌথভাবে।তিনজন আত্মঘাতী জঙ্গি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মাহুতি দেয়।এই বিস্ফোরণে নিহত হয় বেশ কয়েকজন,তাদের মধ্যে শিশুও ছিল।


এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যৌথবাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের তুমুল সংঘর্ষ হয়।মারা যায় ১৫ জন।যদিও যৌথবাহিনীর দাবি,তাদের কেউ এই সংঘর্ষে মারা যায়নি। পুলিশ জানাচ্ছে,ইস্টার রবিবার যারা শ্রীলঙ্কার নামকরা হােটেল সাংগ্রিলায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল,তারাই এই বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়ে পরবর্তী নাশকতার ছক কষছিল।খুন অথবা হত্যা,ইসলামবিরােধী।কিন্তু যারা বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে,তারা শিশুদেরও রেহাই দিচ্ছে না।গােয়েন্দা সূত্রে প্রকাশ,ইসলামি স্টেটের শাখা সংগঠনগুলি পৃথিবীর সারা দেশে মাথা তুলেছে।সুতরাং ভারত সহ আর যেসব দেশ,যারা এ পর্যন্ত নানাভাবে সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে,তারা সন্ত্রাসদমনে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে।শ্রীলঙ্কায় যা ঘটে গেল,তা মর্মান্তিক।এই শহরে জঙ্গি তৎপরতা গত দুই দশকে দেখা যায়নি।একটা সময় তামিল টাইগাররা সক্রিয় ছিল,তাদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বুকে অনেক সংঘাতের ঘটনা আছে।তারপর থেকে শ্রীলঙ্কাবাসী কোনও সন্ত্রাসের কবলে পড়েনি।জানা যায়,ইস্টার রবিবারে চার্চ ও কয়েকটি পাঁচতারা হােটেলে পরপর যে বিস্ফোরণ ঘটল,তা নিয়ে কলম্বােকে আগাম সতর্ক করেছিল ভারত সরকার।কিন্তু সতর্কীকরণ অনেক সময় হালকাভাবে নেওয়া হয়, এক্ষেত্রেও হয়ত তাই হয়েছিল।

কিছুদিন আগে আরেক শান্ত সুন্দর শহর নিউজিল্যান্ডেও জঙ্গিরা বিস্ফোরণ। ঘটাল।দুটি মসজিদে যখন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা শুক্রবারের প্রার্থনায় নিয়ােজিত ছিলেন।নিহত হন অনেকে।নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ঘটনার জন্য গভীর দুঃখপ্রকাশ করে জানান,যারা অপরাধী সরকার তাদের কোনওভাবেই করুণা দেখাবে না।প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস দমনে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেন,যা স্বাগত জানিয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ।সন্ত্রাস এখন ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর কমবেশি সব দেশেই।এই সন্ত্রাস দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে সব ভুক্তভােগী দেশগুলিকে।সন্ত্রাসমুক্ত পৃথিবী আমরাও কামনা করি।