বিজেপির কেরামতি

বি এস ইয়েদুরাপ্পা (File Photo: IANS)

যেখানে পক্ষে জনাদেশ নেই সেখানে কী করে তা ছিনিয়ে নিতে হয়, কর্ণাটক বিজেপি তার আদর্শ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২২৪ সদস্যের কর্ণাটক বিধানসভায় ১০৫টি আসন পেয়ে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়ার পর রাজ্যপাল বিজেপি পরিষদীয় দলের নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তিনি আস্থা ভােটে জয়লাভ করতে না পারায় পদত্যাগ করেন। দ্বিতীয় বৃহত্তম দল কংগ্রেস তখন জনতা দল (সেকুলার)-এর সমর্থন নিয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে এবং তারা বিধানসভায় আস্থা ভােটে জয়লাভ করে।

এরপর সাংবিধানিকভাবে গঠিত সেই সরকারের পতন ঘটানাের জন্য বিজেপি অর্থবল ও বাহুবল প্রয়ােগ করে শাসক পক্ষের ১৭ জন বিধায়ককে দলত্যাগে রাজি করিয়ে তাদের বিধানসভা থেকে পদত্যাগ করায়। কংগ্রেস-জেজি(এস) কোয়ালিশন সরকারের পতন ঘটার পর রাজ্যপাল ইয়েদুরাপ্পাকে দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের সুযােগ দেন, যদিও তার পিছনে মাত্র ১০৫ জন বিধায়কের সমর্থন ছিল। দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করে ইয়েদুরাপ্পা মাত্র ১৮ জন মন্ত্রী নিয়ােগ করেন, যদিও রাজ্যে বিধায়ক সংখ্যার সদস্য সংখ্যার অনুপাতে ৩৪ জন মন্ত্রী নিয়ােগের সংস্থান ছিল। দলত্যাগীদের জায়গা দেওয়ার জন্য এই মন্ত্রী-পদগুলি খালি রাখা হয়।

এই দলত্যাগীরা সকলেই বিধানসভার সদস্যপদে ইস্তফা দেওয়ায় সেই আসনগুলি শুন্য হয়। সেই শুন্য আসনগুলির উপনির্বাচনে একজন মুসলিম বিধায়ক বাদে বাকি সব দলত্যাগীকেই বিজেপি তাদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করায় এবং তাদের মধ্যে ১২ জন পুনরায় নির্বাচিত হন। এর ফলে বিজেপির সমর্থন বিধায়ক সংখ্যা পৌছে যায় ১১৭তে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি এই গােটা প্রক্রিয়াটাকে কংগ্রেসকে জনগণের প্রত্যাখ্যান হিসেবে আখ্যা দেন এবং কংগ্রেস ২০১৮-এর জনাদেশকে ধ্বংস করেছিল বলে অভিযােগ করেন। নবনির্বাচিত ১২ জন দলত্যাগীর মধ্যে ১১ জনকে ইয়েদুরাপ্পা মন্ত্রী করার আশ্বাস দিয়েছেন।


বিধানসভার স্পিকার দলত্যাগীদের সদস্যপদ বাতিল করে দিয়েছিলেন বলে সংবিধানের ৭৫ (১বি) ও ১৬৪ (১বি) সহ অন্যান্য ধারায় তাদের মন্ত্রী হওয়া বা কোনও লাভজনক রাজনৈতিক পদপ্রাপ্তি নিষিদ্ধ হয়েছিল। তৎকালীন স্পিকার কে আর রমেশকুমা দলত্যাগ-বিরােধী আইন অনুসারে বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৭ জন দলত্যাগী বিধায়কের সদস্যপদ বাতিল করে দিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য তাদের বিবেচনায় এই দলত্যাগীদের বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেয়, তবে তাদের সদস্যপদ বাতিলের বিষয়টিকে সঠিক বললেও বিধানসভার মেয়াদ পর্যন্ত তা বহাল রাখার কথা বলেনি। কিন্তু বিজেপি তাদের ১১ জনকে মন্ত্রী করলে সংবিধানের দশম তফসিলের ভাবধারার প্রতি একটা ভুল বার্তা যাবে।

সম্ভবত এই কারণেই কর্ণাটকে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা গঠনের স্বার্থে মন্ত্রী-তালিকা অনুমােদন করার জন্য ইয়েদুরাপ্পাকে সময় দিচ্ছেন না বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। অপরদিকে বিজেপির পুরনাে অনুগত বিধায়কদের মধ্যেও ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছে, কারণ তারা মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা তাদের মন্ত্রিপদের দাবি অগ্রাহ্য করে দলত্যাগীদের পুরস্কৃত করছে। অমিত শাহ কী করে এই জটিল পরিস্থিতি সামাল দেন সেটাই এখন দেখার।