• facebook
  • twitter
Friday, 8 November, 2024

বাংলা নিয়ে বিজেপির স্বপ্ন

বাংলার জনগণকে বলে যাচ্ছি, ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তন বা বর্তমান সরকারের বদল করুন। তাহলেই অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেব। বাংলায় তখনই শান্তি ফিরবে, যখন অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে।

প্রতীকী চিত্র

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার স্বপ্ন দেখেই গেছে এই দল। কিন্তু এই স্বপ্ন যে বাস্তবে রূপ নেবে না, তা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও অঙ্ক কষে বলে দিচ্ছেন। যেমন গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসীন হবে তা চূড়ান্ত করে ফেলেছিল কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব। ভিতরে ভিতরে মন্ত্রিসভা গঠন এবং কে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসবেন, তাও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দলের ভোটকুশলী অমিত শাহ ও অন্যান্য কেন্দ্রের দলের নেতৃবর্গ ভোটের প্রাক্কালে প্রচারে এসে সারা রাজ্য চষে ফেলেছিল। কিন্তু সেই আশা শেষাবধি নিরাশায় পরিণত হল, যখন দেখা গেল শাসক দল বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আবার রাজ্যপাট সামলানোর অধিকার পেল। আর বিজেপির আশা ভঙ্গ করে দলের ঝুলিতে এল মাত্র ৭৭ বিধানসভার আসন।

এই সংখ্যা বিজেপির নেতৃবৃন্দকে হতবাক করল। এতদিনে বিধানসভায় সেই ৭৭ জন সদস্য এই দলে আর নেই। বেশ কয়েকজন বিজেপিকে অপছন্দ করে দলের কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়ে এবং শাসক দলের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন চালানোর দক্ষতায় আকৃষ্ট হয়ে দল পরিত্যাগ করে তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে তুলে নিলেন। সুতরাং বিজেপির সব আশাই বিফলে গেল।

বিজেপি বিধানসভার নির্বাচনে এত বড় ধাক্কা খেয়েও গত লোকসভা নির্বাচনে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করল। সে আশা কী? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে এসে বঙ্গের বিজেপি নেতৃত্বকে বলে দিলেন রাজ্যের ৪২ লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৫ আসন চাই-ই। রাজ্য বিজেপির নেতারা শাহকে অভয় দিয়ে বললেন, এই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা তাঁরা করে যাবেন। লোকসভা প্রচারে বিজেপির নেতা-কর্মীরা উঠেপড়ে লাগলেন। একমাত্র উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলের কিছু অংশে বিজেপি মোটামুটি ভালো ফল করতে পারে। লোকসভার প্রচার চলল।

প্রধানমন্ত্রী এলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এলেন। প্রচার সারলেন, সভাসমিতি এবং রোড শো ইত্যাদি করে। দিল্লি ফেরার আগে তাঁর মতের পরিবর্তন করে অমিত শাহ বললেন ৩৫ নয়, ২৫ আসন বঙ্গের বিজেপির ঝুলিতে আসা চাই। রাজ্যের মানুষের রায়ে বিজেপির ঝুলিতে যে আসন এলো, তা ২৫-এর ধারেকাছে নয়। সুতরাং বার বার বিজেপিকে রাজ্যের মানুষ কম আসনে বসিয়ে খুশি রাখতে চাইছে। দলীয় কোন্দল, নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং হিন্দুত্ববাদ নিয়ে বেশি প্রচার রাজ্যের মানুষ পছন্দ করলেন না। আর তার জন্যই বিজেপির নেতারা প্রচারে শুধু কথায় বাজিমাত করতে চান। সাংগঠনিক শক্তি যে এই দলের ভীষণই দুর্বল, তা কেন্দ্রের নেতারা বুঝতে পারেন না।

তবুও আশায় দলের বড় বড় নেতারা বুক বাঁধেন। যেমন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি বঙ্গে একটি ঝটিকা সফর সারলেন। রাজ্যের দলীয় নেতাদের কী বললেন তিনি? তিনি জোর গলায় বললেন, এখানে বদল চাই। আর সেই বদল কবে আসবে? আসবে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে। বিজেপির ভোটকুশলী বললেন, রাজ্যে যে দুর্নীতি এবং তৃণমূল সরকারের অপশাসন চলছে, তার জন্য রাজ্যের মানুষ তিতিবিরক্ত। ছাব্বিশের নির্বাচনে তাঁরা তৃণমূলকে আর সমর্থন করবেন না, মুখ ঘুরিয়ে নেবেন। আর তার জন্য রাজ্যের দলীয় নেতাদের কী করতে হবে? এক বছরের মধ্যে এক কোটি সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। তিনি বিজেপির সদস্য সংখ্যা সংগ্রহের অনুষ্ঠানে এসে এই কথা জানিয়ে গেলেন। জানিয়ে গেলেন, শুধু সদস্য সংখ্যা বাড়ালেই চলবে না, দলের সাংগঠনিক শক্তিকে আরও অনেক শক্তিশালী করতে হবে।

উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপল বন্দরের সুসংহত চেকপোস্ট উদ্বোধন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোজা কথায় সরকারি মঞ্চ থেকেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে বললেন, ‘বাংলার জনগণকে বলে যাচ্ছি, ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তন বা বর্তমান সরকারের বদল করুন। তাহলেই অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেব। বাংলায় তখনই শান্তি ফিরবে, যখন অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের ধারাবাহিকভাবে তোলা কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগেরও জবাব দিয়েছেন। রাজ্যকে দেওয়া কেন্দ্রের বরাদ্দের ফিরিস্তি। তিনি বলেন, ‘আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজের টাকা কোনও দলের নির্বাচন তহবিলে যেতে দেব না।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বদলের ডাক তো দিলেন— কিন্তু কীভাবে সেই বদল আসবে, তা তো বললেন না। শুধু সদস্য সংখ্যা বাড়ালেই চলবে? তৃণমূলের শীর্ষনেতা বলেন, অমিত শাহের আস্ফালন আমরা আগেও দেখিছি। শুধু কথার ফুলঝুরি। রাজ্যের বিজেপির নেতাদের মধ্যেই তো লাগাতার কোন্দল এবং গোষ্ঠীকলহ চলছে। তাঁরা আগে নিজেদের সংশোধন করুন, তারপর মানুষের কাছে যান ভোট চাইতে। তা না হলে বিজেপির নেতাদের কথা—যথার্থ থাকবে। কাজে পরিণত হবে না।