• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 April, 2025

বাঙালির ভাষা

বড়ার সঙ্গে তুলনীয় ‘বড়ি’। এও ডাল বাঁটা দিয়ে তৈরি। সাধারণত মাষকলাই, তবে মুসুরির ও মটরডালের বড়িও হয়। কলাইয়ের ডলের বড়িও হয়।

ফাইল চিত্র

শ্রী সুকুমার সেন

পূর্ব প্রকাশিতর পর

আমাদের দেশে সবচেয়ে পুরোনো মিষ্টান্ন অর্থাৎ সুখাদ্য ছিল পিঠে, সংস্কৃতে ‘পিষ্টক’। মানে যা পেষণ করা খাদ্যবীজ থেকে তৈরি। আমাদের পিঠে ছিল দুরকম উপাদানের, চালের ও কলাইয়ের। চাল গুঁড়ো করে অথবা শিল বেঁটে তা মেখে চেপটা বড়া অথবা ছোট পটোলের মতো গুলি পাকিয়ে ভাপে সিদ্ধ করলে হয় সিদ্ধপিঠে। বড়ার মতো করে ভাতের হাঁড়ির মুখে রেখে ভাপে সিদ্ধ করলে কোন কোন অঞ্চলে বলে হাঁড়বড়া (অর্থাৎ হাঁড়িতে বড়ানো)।

পিঠের প্রসঙ্গ মুলতুবি রেখে এখন বড়ার প্রসঙ্গে আসি। বড়া মানে পেষা চালের অথবা ডালের অথবা চটকানো কোন ফলের সিদ্ধ করা অথবা ভাজা খাদ্য। চালের বেলায় সিদ্ধ করা হয়। ডালের বা কোন ফলের বেলায় তেলে অথবা ঘিয়ে ভাজা হয়। ভাজার রকম হিসেবে বড়ার ভেদ আছে। সাধারণত বড়া বলতে বোঝা যায় অল্প তেলে বা ঘিয়ে ডুবিয়ে ভেজে নিলে একদা—ষোড়শ শতাব্দীতে—বলত তুলো বড়া (অর্থাৎ তুলার মতো নরম বড়া)। এখন বিশেষ কোন সাধারণ নাম নেই। বড়াও বলে, ফুলুরি বেগুনি ইত্যাদিও বলে। এখানে বড়া নামটি রয়ে গেছে দই বড়ায়। মাষকলাই বাঁটার তুলো বড়া করে দইয়ে ভিজিয়ে রাখলে হয় দইবড়া। আর দইয়ের বদলে চিনির রসে ফেললে, হয় রসবড়া। ছেনার ডেলা ঘিয়ে ভেজে চিনির রসে ফেললে হয় ছেনাবড়া। (এখন এ খাদ্য পানতোয়ায় পরিণত, তবে ছেনাবড়া রয়ে গেছে চোখের সঙ্গে প্রযুপ্ত ইডিয়মে।) পাকা কলা চটকে তুলোবড়া করলে হয় কলাবড়া। কলাবড়া সাধারণত ভাতের পায়েসের সঙ্গে খায়।

বড়ার সঙ্গে তুলনীয় ‘বড়ি’। এও ডাল বাঁটা দিয়ে তৈরি। সাধারণত মাষকলাই, তবে মুসুরির ও মটরডালের বড়িও হয়। কলাইয়ের ডলের বড়িও হয়। কলাইয়ের ডালের বড়ির সঙ্গে ছাঁচি কুমড়ো অথবা মূলোর মত আনাজ ও বেঁটে দেওয়া হয়। অথবা পোস্তর দানা (ছড়ানো প্রলেপ) দেওয়া হয়। খুব হালকা বড়ি হলে বলে ফুল বড়ি, যা ভাজা খায়। (এখানে বলে রাখি ‘বড়ি’ প্রস্তুত-খাদ্য নয়, রান্নার অপেক্ষা রাখে।) কুমড়ো বড়ি, মূলোবড়ি ঝোলঝালে চলে। অম্বলে চলে ফুলবড়ি আর মুসুর ডালের বড়ি। বড়ি পোস্ত খাঁটি পশ্চিমবঙ্গবাসীর উপাদেয় ব্যঞ্জন।

বড়া-বড়ি দুটি শব্দ থেকে সহজে মনে হতে পারে যে ‘বড়ি’ এসেছে ‘বড়া’র হ্রস্বরূপ (diminutive) হয়ে। মানের দিক দিয়ে একথা মানতে হয় কিন্তু শব্দবিদ্যার দিক দিয়ে একথা মানা যায় না।

(ক্রমশ)