• facebook
  • twitter
Tuesday, 1 April, 2025

বাঙালির ভাষা

দাবা খেলায় জিতের প্রসঙ্গে একটি চর্যাগানে আছে

ফাইল চিত্র

শ্রী সুকুমার সেন

পূর্ব প্রকাশিতর পর

ইঁটের (অথবা পাতরের) ঘরের নাম ‘কোঠা’ (কোটা)। শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘কোষ্ঠ’ (+ ক) থেকে। মানে নিবিড়ভাবে আবদ্ধ এক দ্বার কক্ষ। আগে কোঠা ঘরের ছাতও ঢালু চালের মতো হত দেবমন্দির ও কোষাগার ছাড়া কোঠা ঘরের ব্যবহার মুসলমান অধিকারের আগে তেমন ছিল না। পর্তুগীজ দিনেমার ইংরেজ প্রভৃতি বিদেশী বণিকদের আগমনের পরই বাংলাদেশে সাধারণ লোকের ইঁটের ঘরদ্বার করবার প্রবৃত্তি বেড়ে যায়। ঘরে জানালা লাগাবার রীতিও এই সময় থেকে।

হাজার বছর আগে যে ঘর ও কোঠা শব্দ দুটি সমার্থক হয়ে পড়েছিল তার প্রমাণ আছে পাশা ও দাবা খেলার প্রাচীন প্রসঙ্গে। অবহঠ্ট ছড়ায় পাশার ঘুঁটির সম্বন্ধে বলা হয়েছে। ঘর ঘর বুল্লই সঅল-পিয়ারী ‘সকলের প্রিয়করিণী সে, ঘরে ঘরে বুলে বেড়ায়। দাবা খেলায় জিতের প্রসঙ্গে একটি চর্যাগানে আছে। চৌষট্টি কোঠ গুণি আঁ লেহুঁ।

‘চৌষট্টি কোঠা আমি গুণে নোব।’ সুরক্ষিত কক্ষ (Strong room, store house, treasury) এই অর্থ থেকে ‘কোঠ’ শব্দের এক মানে দাঁড়িয়ে যায় দুর্গ। এইখানে কয়েকটি স্থান নাম দেখা যায়। যেমন, মঙ্গলকোট, ইত্যাদি।
‘কোঠা’ শব্দের খর্ব (diminutive) রূপ হল ‘কুঠি’। শব্দটির আসল মানে ‘ছোট কোঠা’, পরে দাঁড়ায় বিদেশি বণিকের গুদাম (store house strong room), তার কার্যালয় ও আবাস।

কোঠা থেকে কয়েকটি শব্দ এসেছে। ‘কোঠার (মধ্য বাংলা) <কোষ্ঠাগার থেকে মানে কারাকক্ষ (cell)। ‘কুঠুরি’ <কোঠার শব্দের খর্বরূপ, মানে ছোট ঘর যেমন, চোর-কুঠুরি, চোর থেকে জিনিস রক্ষা করবার strong room। ‘কোটাল’ (কোষ্ঠ পাল থেকে), মানে কারারক্ষী, খাজনা-খানার প্রহরী। এই সঙ্গে ‘কামরা’ শব্দের আলোচনা করি। শব্দটি ফারসী ভাষার। মানে আড়াল-করা-ঘর (cabin, chamber), অথবা ঘর (room)। শব্দটি মিলেছে চর্যাগানে, ‘‘নাবী কিঅ অঠ কমারী’’ ‘নৌকো জাহাজ’ করা হল— আট কামরা।’ চর্যাগান যখন লেখা হয় তখন ফারসী ভাষার সঙ্গে কোন যোগাযোগের সম্ভাবনা ছিল না। তাই মনে হয় শব্দটি ফারসীর পূর্বতন রূপ পহলবী থেকে এসে থাকবে।

(ক্রমশ)