• facebook
  • twitter
Tuesday, 25 March, 2025

বাঙালির ভাষা

শ্রী সুকুমার সেন পূর্ব প্রকাশিতর পর ট. দ্বিত্ব সংহত (বিকৃত) (প্রথমটি আ-কারান্ত দ্বিতীয় ই-কারান্ত। অর্থ পরস্পর পরিপূরক। সংস্কৃত নাম ব্যতিহার বহুব্রীহির অন্তর্গত) কড়াকড়ি, কানাকানি, ঘুষোঘুষি, কাড়াকাড়ি, খুনাখুনি, (খুনো খুনি) গলাগলি, ঘুষোঘুষি, চালাচালি, ছড়াছড়ি, জড়াজড়ি, ঝাড়াঝাড়ি, টানাটানি, ঠাসাঠাসি, ঠেলাঠেলি, ঠোকাঠুকি, ডাকাডাকি, ঢাকাঢাকি, তোলাতুলি, থাকাথাকি, দরাদলি, দরাদরি, ধরাধরি, নাড়ানাড়ি, পটাপটি, পাড়াপাড়ি, পীড়াপীড়ি, কাড়াকাড়ি, ফোঁড়াফুড়ি, বাড়াবাড়ি, বলাবলি, বেলাবেলি,

ফাইল চিত্র

শ্রী সুকুমার সেন

পূর্ব প্রকাশিতর পর

ট. দ্বিত্ব সংহত (বিকৃত) (প্রথমটি আ-কারান্ত দ্বিতীয় ই-কারান্ত। অর্থ পরস্পর পরিপূরক। সংস্কৃত নাম ব্যতিহার বহুব্রীহির অন্তর্গত) কড়াকড়ি, কানাকানি, ঘুষোঘুষি, কাড়াকাড়ি, খুনাখুনি, (খুনো খুনি) গলাগলি, ঘুষোঘুষি, চালাচালি, ছড়াছড়ি, জড়াজড়ি, ঝাড়াঝাড়ি, টানাটানি, ঠাসাঠাসি, ঠেলাঠেলি, ঠোকাঠুকি, ডাকাডাকি, ঢাকাঢাকি, তোলাতুলি, থাকাথাকি, দরাদলি, দরাদরি, ধরাধরি, নাড়ানাড়ি, পটাপটি, পাড়াপাড়ি, পীড়াপীড়ি, কাড়াকাড়ি, ফোঁড়াফুড়ি, বাড়াবাড়ি, বলাবলি, বেলাবেলি, ভোটাভুটি, মারামারি, মোটামুটি, রাতারাতি, রক্তারক্তি, রোয়ারোয়ি, লাঠালাঠি, লাফালাফি, শোনাশুনি, শূলোশূলি, সরাসরি, হাতাহাতি, হানাহানি, হূলাহূলি।
উপরে বর্ণিত দু শ্রেণীর সংহতি ছাড়াও এমন কিছু সংহত শব্দ আছে যা শব্দ-সংহতি নয় পদ-সংহতি, অর্থাৎ দুটি বা ততোধিক পদের সমবায়। এগুলি সংখ্যায় অল্প হলেও রবীন্দ্রনাথের প্রয়োগে এমন সংহত শব্দের শক্তির সামর্থের আভাস আছে। যথা, নাস্তানাবুদ (<ফার্সী নঅস্ত্ ন বুদ), যাচ্ছেতাই (যা ইচ্ছে তাই), মনের-কথা। জাগানে (হাওয়া) চাওয়া-পাওয়ার-বু-কের, মাঝের না-পাওয়া-ফুল ফোটে। ফার্সী-আরবী শব্দের সংহতি
বাংলায় বিদেশী শব্দের মধ্যে ফার্সী শব্দ যে মজ্জাগত হয়ে প্রবেশ করেছে—সেকথা বলেছি। এই ধরনের সংহত শব্দের ব্যবহার কতটা গভীরভাবে আধুনিক বাংলায় প্রবেশ করেছে তার কিছু উদাহরণ দিলে ভালো করে বোঝা যাবে, যথা আতশবাজি, অদল বদল, অন্দর-মহল, আদব-কায়দা, আতর গোলাপ, আসল নকল, আমির-ওমরা, ইস্তক নাগাদ, আদম শুমারি, ওস্তাদ সাকরেদ, কিস্তি-খেলাপ, কুলপি-বরফ, কেল্লা ফতে, খোশ খবর, কমবেশি, খোদাতালা, খান-খানান, খামখেয়াল, খাপসুরত, খানাতল্লাশি, কেতা-দুরস্ত, খুনখারাপি, কেতাব-দুরস্ত, খোশ-মেজাজ, খান বাহাদুর, নরম-গরম, চশম-খোর, বিবি-জান, জমি জায়গা, জমা ওয়ালিশ, তক্তপোশ, তর-বেতর, জোয়ান-মরদ, তবিলতছরুপ, দলিল দস্তাবেজ, দস্তখৎ, জবরদস্ত, জবরদখল, দরদালান, দর-দস্তুর, দিলখোশ, নকল দানা, নফর-গোলাম, পীর পয়গম্বর, মোরগমুর্গী, মুর্দফরাশ, সদর অন্দর আদালত,, বহাল-বরখাস্ত, হাল-আমল, হালফিল, শব্দ-নির্মাণ, হুজুর মালিক।
শব্দ সংখ্যা বাড়াবার আরেকটি প্রধান উপায় প্রত্যয় সংযোগ। শব্দে শব্দাংশ বা অর্থহীন বা নিরর্থক ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ যোগ করলে নতুন শব্দ তৈরি হয়, এইরূপ যোগকরা শব্দাংশ বা ধ্বনি বা ধ্বিনগুচ্ছকে সংস্কৃতে বলে প্রত্যয়। আবহমান বাংলাভাষায় অনেক প্রত্যয় আছে। কতক সংস্কৃত থেকে আগত, কতক পালি-প্রাকৃত থেকে আগত কতক সংস্কৃত থেকে নেওয়া এবং কতক জোড়াতালি দিয়ে তৈরি। এখনকার চলিত ভাষায় এমনি অনেক জোড়াতালি দিয়ে তৈরি প্রত্যয়ের উদাহরণ দিই। -অকা, -অক, -কর, -ক, -কি আচম্কা, চমক্, চটকা, চটক, খামকা, গমক, উচকা, উচকি, ছট্কা, টাট্কা, আটকা, ফাঁকা, ফাঁকি, আটক, টোটকা, ঠোন্কা, ঠুনকি, তবক, ঠমক, বোঁচ্কা, বুঁচকি, দমকা, দমক, ধমক, পট্কা, ফট্কা, ফুট্কি, মোটকা, মোটকি, লটকা, সট্কা, সড়কি;

অত, -অতা, অতি, -অতু, অন্, তো, -তা, -তু-, যথা কর্তা কমতি ধরতা, ফালতো, ফালতু, ভর্তি, আস্ত, খাস্তা, চোস্ত, পড়তি, পড়তা, বাড়তি, করনা, করন, ঝরনা, পড়ন, তোলন, দোলন, ঝুলন, দোলনা, বেলন, লালন, পালন;
-অটা, -অট, -টা, -টি, -টু, -টে, খ্যামটা, খেমটা, চ্যাপটা, জ্যাপটা, ঝাপটা, ঝাপট, ঠাট্টা, পালটি গাঁট্টা, পাল্টা, পাল্টি, উল্টা, সাঁট্টা, আঁশটে, একটু, কিপ্টে, কেউটে, লাট্টু, চাঁটি, চাটু, ফোঁটা, ফুটি, বোঁটা;

অড়া, -ড়া, -ড়ী, -ড়ু, -ড়ে, কামড়, কোঁচড়, খিঁচুড়ি, খসড়া, গোমড়া, চামড়া, ছিবড়ে, জাপড়া, ঝোপড়া, ঝুপড়ি, তোবড়া, তুবড়ি, তুখোড়, ন্যাকড়া, নেকড়ি, নেকড়ে, ধর-পাকড়, ফাঁড়া, বাড়া, বাড়, বাড়ি, ভাড়া, জাড়া, জাড়ি,
অন্তা, অন্তি, উন্তি, যথা দেখন্তা, দেখুন্তি, পড়ন্ত, বাড়ন্ত, ফুটন্ত, জ্বলন্ত, নিখাউন্তি, ঝুলন্ত, নাচুন্তি, ফলন্ত, চলন্ত,

(ক্রমশ)

News Hub