বাঙ্গালীর সংস্কৃতি

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।

পূর্ব প্রকাশিতর পর

দস্তুরির প্রত্যাশায় পাশে দরজি দাঁড়াইয়া। শ্রান্ত মুটিয়া বেচারি বাহিরের বারান্দায় বসিয়া বসিয়া ঢুলিতেছে।
দ্বাবিংশ চিত্রে কলিকাতার রাস্তায় যে-সব ভিখারি ভিক্ষা করিয়া বেড়াইত, তাহাদের ছবি। যোগী, বৈরাগী, ও মুসলমান ফকির। ‘যোগী’-নামধারী ভিখারিয়া আজকালকার গুজরাটী ভিখারদের মতো পশ্চিম ইহতে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে দলে দলে বাঙ্গালা-দেশে আসিত, খুব সম্ভব এখনকার মতো গুজরাট হইতেই। ইহারা অত্যন্ত কম কাপড় পরিত, সঙ্গে একতারা লইয়া গান করিত। বৈরাগীটি বাঙ্গালী, মাথায় টুপি, মুখে চাপদাড়ি, গায়ে নানা রঙ্গীন কাপড়ের টুকরো সেলাই করিয়া তৈয়ারি জামা। বৃদ্ধ মুসলমান ফকিরের সম্বন্ধে বক্তব্য কিছু নাই।

ত্রয়োবিংশ চিত্রের বিষয়, উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মচারী পালকি করিয়া বাহিরে যাইবার জন্য প্রস্তুত, এমন সময়ে বিষয়-কর্ম আলোচনার জন্য বাহ্গালী মুৎসুদ্দী বা ‘বেনিয়ান’ তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে উপস্থিত। সাহেব হিসাব দেখিতেছেন। সাহেবের পালকিখানি, গয়ে জামা, মাথায় লাল সালুর পাগড়ি পরা, ও কোমরে সালুর চাদর জড়ানো পশ্চিমা কাহার জাতীয় বেহারার কাঁধে; পালকিখানিতে কাঁচের কয়টি ভালো লণ্ঠন লাগানো আছে। মাথায় বড়ো কাপড়ের ছাতি ধরিয়া ছাতি-বরদার; সামনে চোবদার বা চাপরাসি; দুইজন খানসামা পিছন দিকে। ‘বেনিয়ান’ বাবু খিড়কিদার পাগড়ি চাপকান, শালও নাগরা জুতো পরিয়া আসিয়াছেন—তাঁহার পালকি সাধারণ, এবং খালি গায়ে উড়িয় বেহারার দ্বারা বাহিত। ইহারা ‘পিকা’ বা চুরুট টানিতেছে। বাবুর সঙ্গে যে ছাতা আসিয়াছে সেটি বাঁশের ও গোল-পাতার। চোবদারের সামনে বাবুর সরকার দাঁড়াইয়া—মাথায় পাগড়ি, গায়ে মেরজাই, ও চাদর। পরনে ধুতি পায়ে নাগরা। এক শত বৎসরে ইংরেজ ও বাঙ্গালী জীবনে যানে বাহনে পোশাক-পরিচ্ছদে আর্থিক অবস্থায়, সব বিষয়ে কত পরিবর্তন ঘটিয়াছে তাহা এই চিত্র দর্শনেই বুঝা যায়।


এই বইয়ের শেষ চিত্রখানি একটা বীভৎস ব্যাপার লইয়া—কতকগুলি নিম্ন শ্রেণীর লোক নদীর চড়ায় মরা গোরুর ছাড় ছাড়াইবার উদ্যোগ করিতেছে।

মোটের উপর, বইখানির ছবিগুলি বিশেষ কৌতুককর। শত বৎসর পূর্বেকার বাঙ্গালী জীবনের চিত্র সংবলিত এইরূপ আরও কতকগুলি বই আছে, সেগুলির ছবি ও লিখিত বর্ণনা বাঙ্গালী পাঠক সমাজে পুনঃপ্রকাশের উপযোগী।

(সমাপ্ত)