• facebook
  • twitter
Monday, 13 January, 2025

বাঙ্গালীর সংস্কৃতি

ছবিগুলির রূপকার এ-দেশেরই মেয়ে, যদিও তিনি ফিরাঙ্গি বংশজাতা; তিনি যাহা আঁকিয়াছেন, তাহা একটু দরদ দিয়াই আঁকিয়াছেন, বাঙ্গালী মেয়ে ও পুরুষের ছবিতে একটু স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য্য ও কমনীয়তা আনিয়াছেন— এই গুণগুলি সেকালের বাঙ্গালীর চেহারায় দুর্লভ ছিল না, বহু ইউরোপীয় লেখকের বই হইতে আমরা এ কথা জানিতেপারি।

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।

পূর্ব প্রকাশিতর পর

শত বৎসর পূর্বেকার বাঙ্গালী জীবনের ছবি
খ্রীস্টাব্দ ১৮৩০ সাল লন্ডন হইতে Mrs. S. C. Belnos বেল্নস্-গৃহিণী নামে একজন মহিলা (খুব সম্ভব পোর্তুগীস-জাতীয়া) একখানি বই প্রকাশিত করেন, বইখানির নাম—Twenty four Plates Illustrative of Hindoo and European Manners in Bengal, [drawn on the stone by A. colin from sketches by Belonos]। বইখানি বেশ বড়ো আকারের, দৈর্ঘ্যে প্রায় ২০ ইঞ্চি, প্রস্থে ১১ ইঞ্চি। পাথরে-আঁকা ২৪+১=২৫ খানি এক-রঙ্গা ছবির প্রতিলিপি ইহাতে আছে, ছবিগুলির সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় তাহাদের বর্ণনা দেওয়া হইয়াছে, এক পৃষ্ঠায় ইংরেজি, অন্য পৃষ্ঠায় ফরাসি। ছবিগুলি বেল্নস্-গৃহিণীর অঙ্কিত, এবং A. Colin কলিন্ (কল্যাঁ?) নামক ইংরেজ (অথবা ফরাসি?) কারিগর কর্তৃক মূদ্রণের জন্য পাথরের উপরে অনুলিখিত।

বইখানির ইংরেজি ভূমিকায় বেল্নস্-গৃহিণী নিজেকে a native of the Country ‘এতদ্দেশবাসী’ অর্থাৎ ভারতবর্ষের অধিবাসী বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। ইহা-দ্বারা অনুমিত হয় যে, তিনি এই দেশে ভূমিষ্ঠ হন, ও এই দেশেই বাস করিতেন। অতি শিশুকলা হইতেই তিনি দেশবাসিগণের জীবন-যাত্রার বহিরঙ্গ খুঁটিনাটির সঙ্গে দেখিতেন, এদেশের উৎসব যাত্রা ও দৈনন্দিন জীবন তাঁহার নিকট পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আলোচনার বস্তু ছিল। কলিকাতার বাহিরেও তিনি বাঙ্গালা দেশের নানা স্থানে ঘুরিয়াছিলেন, এবং নানা দিক দিয়া এদেশের জীবনের সহিত ঘনিষ্ঠ পরিচয় করিবার ইচ্ছা ও চেষ্টা তাঁহার ছিল।

বইখানি বিলাতের রয়াল-এশিয়াটিক-সোসাইটি কর্তৃক অনুমোদিত হইয়াছিল; সোসাইটির তরফ হইতে Graves C. Haughton হটন সাহেব একখানি অনুমোদন-পত্র দিয়াছিলেন, সেই পত্রখানি, ও রাজা রামমোহন রায় কর্তৃক লিখিত নিম্নে উদ্ধৃত পত্রখানি বেল্নস্-গৃহিণী স্বয়ী পুস্তকে প্রকাশিত করিয়াছিলেন।
48 Bedford Square
March 5th, 1832.
Madam,
I have with great pleasure looked over your drawings, and read your descriptions of them, and I now have the satisfaction to inform you, that they are true representations of nature, so much so, that they have served to bring to my recollection, the real scenes alluded to of that unhappy country.
The drawings are so expressive in themselves, that the descriptions, however excellent, are scarcely necessary to any one acquainted with India.
I have retained the copy handed over to me, and wishing you every success in your present undertaking.
I remain,
Madam,
Your most obedient servant,
Rammohun Roy.
Mrs. Belnos.

আজ হইতে শত ব!সর পূর্বে আঁকা বাঙ্গালী জীবনের ছবি, বাঙ্গালীর পক্ষে এই ছবিগুলির যথেষ্ট মূল্য আছে। ছবিগুলির রূপকার এ-দেশেরই মেয়ে, যদিও তিনি ফিরাঙ্গি বংশজাতা; তিনি যাহা আঁকিয়াছেন, তাহা একটু দরদ দিয়াই আঁকিয়াছেন, বাঙ্গালী মেয়ে ও পুরুষের ছবিতে একটু স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য্য ও কমনীয়তা আনিয়াছেন— এই গুণগুলি সেকালের বাঙ্গালীর চেহারায় দুর্লভ ছিল না, বহু ইউরোপীয় লেখকের বই হইতে আমরা এ কথা জানিতেপারি।

(ক্রমশ)