পূর্ব প্রকাশিতর পর
ঐতিহাসিক-বোধ মণ্ডিত নাম; এবং এই সংযুক্ত নামের অনুরূপ অন্য নানা দেশের-ও নাম আছে। যেমন Czechoslovakia—চেখ্ ও স্লোভাক, এক-ই বোহেমীয় স্লাভ্ জাতির অতিঘনিষ্টভাব সম্পৃক্ত দুইটি উপজাতির নাম মিলাইয়া রাষ্ট্রের নাম; যেমন চীনা জাতির Han ‘হান্’ নাম এখন প্রায় সর্বক্ষেত্রে সমগ্র চীনা জাতি ও ভাষার জন্য ব্যবহৃত হইলেও কখনও-কখনও চীনা জাতির উল্লেখ করা হয় Han ‘হান্’ বা উত্তর-চীনা ও Thang ‘থাঙ্’ বা দক্ষিণ-চীনা, এই দুইটি নামের সাহায্যে; যেমন দোর্দণ্ড-প্রতাপ ইংরেজ জাওি, তাহার দুইটি প্রধান ও প্রাচীন শাখার নাম Engle বা Engle (যাহা হইতে English, England) এবং Seaxe, এই দুইটিকে সমাসযুক্ত করিয়া, বহু স্থলে Anglo Saxon এই মিলিত নামে এখনও অভিহিত হইয়া থাকে।।
প্রাচীন বঙ্গের পুষ্করণা-জনপদ
বিগত সংখ্যার ‘বঙ্গশ্রী’-তে বঙ্গদেশপ্রাপ্ত প্রাচীনতম অনুশাসন, সম্প্রতি আবিষ্কৃত ব্রাহ্মী-লিপিময় ‘সংবঙ্গীয় লেখ’-এর সংবাদ দিবার কালে শুশুনিয়া পাহাড়ের গাত্রে উৎকীর্ণ লেখের উল্লেখ করা হয়েছে। শুশুনিয়া বাঁকুড়া জেলার পশ্চিম ভাগে অবস্থিত। এই লেখটি প্রত্নবিৎ-সমাজে সুপরিচিত হইলেও, এবং বাঙ্গালা পুস্তক ও পত্র-পত্রিকায় ইহার বিবরণ প্রকাশিত হইলেও, সাধারণ বাঙ্গালী পাঠক ইহার সম্বন্ধে বিশেষ কোনও খবর রাখেন না। খ্রীস্টীয় ৪র্থ শতকের গুপ্ত-যুগের ব্রাহ্মী অক্ষরে সংস্কৃত ভাষায় তিন ছত্রে পর্বতগাত্রে উৎকীর্ণ এই ক্ষুদ্র লেখটি। অগ্নিশিখাযুক্ত বহু-অর-বিশিষ্ট বিষ্ণুচক্রের নীচে দুই পংক্তিতে উৎকীর্ণ আছে— ‘পুষ্করণাধিপতিমহারাজ-শ্রীসিঙ্হর্ম্মণঃ পুত্রুস্য মহারাজশ্রীচন্দ্রবর্ম্মণঃ কৃতিঃ’।
বিষ্ণুচক্রের দক্ষিণভাগে উৎকীর্ণ আছে—‘চক্ক-স্বামিনে ধোসগ্রামোতিসৃষ্টঃ’ (অর্থাৎ ‘চক্রস্বামী বা বিষ্ণুর জন্য ধোসগ্রাম উৎসর্গীকৃত হইল’; এই পাঠ শ্রীযুক্তচ কাশীনাথ নারায়ণ দীক্ষিত মহাশয়ের প্রদত্ত; মূল লেখটিতে কয়েকটি বর্ণাশুদ্ধি আছে;—স্বর্গীয় মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় অন্য রূপে পড়িয়াছিলেন—এই ছত্রের পাঠ, তাঁহার মতে,—‘চক্র স্বামিন্যে দাসগ্রেণাতিসৃষ্টঃ। এ সম্বন্ধে দ্রষ্টব্য Epigraphia Indica, XIII, p. 13; Archaeological Survey, Annual Report for 1927-28, p. 188.)। এই প্রাচীন লেখের আশেপাশে পরবর্তী যুগের অক্ষরে উৎকীর্ণ কয়েক ছত্র অন্য লেখা আছে।
(ক্রমশ)