ভোটপর্ব মিটে গেছে।এখন শান্তিপর্ব শুরু হােক।বাংলায় ফিরে আসুক শান্তি , সম্প্রীতি ও ঐক্য।ভােটের ফলাফল প্রকাশিত হতেই রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে যে হানাহানি শুরু হয়েছে তা অবিলম্বে বন্ধ হােক,যা সবারই কাম্য।
ভােটে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের মধ্যে কেউ হেরেছেন,কেউ জয়ের হাসি হেসেছেন, যার ভাগ্যে যা,তাই ঘটেছে।এমনিতেই বাংলায় সাত দফার ভােটে,কোনও দফার ভোটই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়নি,নানা হিংসার ঘটনা ঘটেছে।রক্ত ঝরেছে।মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশের অন্য রাজ্যগুলিতে যখন শান্তিপূর্ণ ভােট হয়েছে তখন এই রাজ্যে অশান্তি,বাংলার মাথা হেঁট করেছে।
আবার ভােটপর্ব মিটে যাওয়ার পরও কোনও কোনও অঞ্চলে বিভিন্ন দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ,ভাঙচুর , অগ্নিসংযােগের ঘটনা ঘটছে।ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে।যেমন বারাকপুর মহকুমার ভাটপাড়া , কাকিনাড়া অঞ্চল। এই দুটি জায়গাতেই ব্রাজনৈতিক সংঘর্ষ লেগেই আছে।এলাকার অধিবাসীরা শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে বসবাস করতে পারছেন না।ভাঙচুর , অগ্নিসংযােগ , সম্পত্তি ধ্বংসের নানা ঘটনা ঘটছে।ভােটের প্রচারকাল থেকেই এই পুরাে অঞ্চল অশান্ত।সাধারণ মানুষের দুর্গতির শেষ নেই।ট্রেন চলাচল মাঝেমাঝেই ব্যাহত হচ্ছে ট্রেনলাইনের ওপর বিক্ষোভ সমাবেশের জন্য।পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা এই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে , কিন্তু তা সত্ত্বেও হিংসার ঘটনা ঘটছে,স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসছে না।
ভাটপাড়া-কেন্দ্রিক অঞ্চলে শান্তিশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা এত মারাত্মক পর্যায়ে পৌছেছে যে সম্প্রতি স্বয়ং ডিজিপি এই অঞ্চলে এসে ঘুরে দেখেছেন এবং এলাকাবাসীদের নিরাপত্তার অভয় দিয়েছেন।ভােটে একদলের পরাজয় অন্য দলের জয়কে কেন্দ্র করেই এই অঞ্চল জুড়ে হিংসা।নির্বাচনবিধি উঠে যাওয়ার পর বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনারকে সরিয়ে নতুন কমিশনার নিযুক্ত করেছে স্বরাষ্ট্র দফতর।এই পরিবর্তনের কী ফল দেখা যায় , তার জন্য তাকিয়ে থাকবেন অঞ্চলবাসী।
ভােটে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরােধী বিজেপি প্রার্থীর নাম ঘােষিত হওয়ার পর থেকেই পুরাে ভাটপাড়া অঞ্চল অশান্ত হয়ে ওঠে ও নানা ঘটনা ঘটতে থাকে।হিংসার ঘটনায় ভাটপাড়া হয়ত এগিয়ে , কিন্তু সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের অনেক ঘটনা ঘটছে রাজ্যের অন্যান্য জেলায়ও।ভােট গণনায় জয়পরাজয় নির্ধারিত হওয়ার পরই এই সব অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে। সংঘর্ষ , মারপিট বা অগ্নিসংযােগের ঘটনায় প্রশাসনও উদ্বিগ্ন ।মূলত দেখা যাচ্ছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির সমর্থকদের মধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা বেশি ঘটছে এবং যথারীতি দুই দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ঘটনার দায় অস্বীকার করেছেন আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় জনসাধারণ , যাঁরা শান্তি চান , নিরাপত্তা নিয়ে বাঁচতে চান।যে কোনও নির্বাচন এলেই যদি বাংলা অশান্ত হয়ে ওঠে , তাহলে কিছু মানুষ ভােটাধিকার প্রয়ােগের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠবেন। রাজ্যের শান্তি সুনাম তাে নষ্ট হবেই। এ অবস্থার যাতে আশু পরিবর্তন হয় তার জন্য রাজ্য প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে মিলে একটি পথ বার করতেই হবে। বিশেষ করে শাসক দলকে এ ব্যাপারে একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।পরিতাপের বিষয় , ভাটপাড়া যে এত অশান্ত হয়ে উঠেছে এবং যত কাণ্ড ভাটপাড়াতেই ঘটছে তা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও বিবৃতি দিয়ে এই হিংসা বন্ধের আবেদন জানাননি।দুই দলের স্থানীয় নেতারা কোনও শান্তি বৈঠকে মিলিত হননি।তাহলে কি এই দাঁড়ায়,কোনও পক্ষই শান্তি চায় না ? ভােটে কার হার , কার জিত , তা তাে মানুষই ঠিক করে দিলেন , এখানে তাে কারাের হাত নেই।জয়পরাজয়ের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে।হিংসায় মাতলেও সেই সিদ্ধান্ত পাল্টাবে না।
সামনে ঈদ।ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা নিষ্ঠার সঙ্গে উপবাস পালন শুরু করছেন।এক মাস চলবে এই উপবাস।তারপর আসবে খুশির ঈদ।তার আগে সর্বত্র শান্তি বিরাজ করুক , দৈনিক সেটটসম্যান সেই কামনা করে।