বাংলাদেশের বর্তমান তদারকি সরকার যার নেতৃত্বে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত মহম্মদ ইউনূস, এই মুহূর্তে যা করছে তার জন্য তাঁকে অকৃতজ্ঞ বলে আখ্যা দেওয়া যায়। এই সরকার বাংলাদেশকে স্বাধীন হওয়া নিয়ে ভারতের ভূমিকার কথা ভুলিয়ে দিতে চাইছে বর্তমান প্রজন্মকে। আমরা এর আগে একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলেছিলাম, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে নির্বাচনান্তে যে সরকারই প্রতিষ্ঠিত হবে, তাকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হতেই হবে। এমনকি মৌলবাদীরা, পাকিস্তানপন্থীরা বিএনপির সহযোগে যদি সরকার গঠন করে, তাকেই ভারতের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে। ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে এবং বৈরতা নিয়ে বাংলাদেশের এই সরকারকেই নানা বিষয়ে ভারতের উপর নির্ভর করতে হবে। সুতরাং বিএনপি এবং জামায়েতদের লাফালাফি এবং ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার হুমকি কোনও মতেই সাজে না। এখন মৌলবাদীরা পাকিস্তানকে বন্ধু বলে মনে করছে এবং ভারতের সঙ্গে লড়াই করতে হলে পাকিস্তানকে পাশে পাবে, এই কথা ভেবে ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে—যা অত্যন্ত হাস্যকর। নিন্দারও।
ভাবা যায় না, বাংলাদেশের জন্য জীবন দেওয়া শেখ মুজিবুর রহমানের কথা ভুলে মৌলবাদীরা মহম্মদ আলি জিন্নাকে বাংলাদেশের জনক বলে মনে করছে এবং তাঁর জন্মবার্ষিকী ঘটা করে পালন করা হয়েছে ঢাকায় বাংলাদেশের জাতীয় প্রেস ক্লাবে। ইউনূস খানের এই তদারকি সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম অত্যাচার, তাঁদের মন্দির অপবিত্র করা এবং মূর্তি ভাঙা বন্ধ করতে। অর্থাৎ বাংলাদেশের তদারকি সরকার এবং এই সরকারের কট্টর সমর্থকরা চায় বাংলাদেশকে হিন্দুশূন্য করতে। এটা বিরাট ষড়যন্ত্র এর মূলে কাজ করছে। বর্তমান বাংলাদেশের সংবিধানের আমূল পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিএনপি এবং মৌলবাদীরা। তারা ইউনূস সরকারের ওপর নিরন্তর চাপ সৃষ্টি করছে অবিলম্বে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। নির্বাচনের পর যে সরকার গঠিত হবে, সেই সরকার বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন করবে। হবে ইসলামিক রাষ্ট্র।
এদিকে বাংলাদেশের ইসকন প্রধান চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জানের ব্যাপারটি এগিয়ে আনার আর্জি আবার নাকচ করল আদালত। আদালতে তাঁর জন্য সওয়াল করতে উঠেছিলেন বর্ষীয়ান আইনজীবী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সুতরাং চিন্ময়কৃষ্ণকে জেল হেফাজতে থাকতে হবে আগামী বছরের জানুয়ারির ২ তারিখ পর্যন্ত। সেদিন ওই সন্ন্যাসীর জামিনের বিষয়টি আদালতে উঠবে। ভারতের বিদেশ সচিবের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশ সচিবের সম্প্রতি বৈঠকের পরও ওই দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর পীড়ন বন্ধ হয়নি। ফলে অনেক হিন্দু পরিবার সীমান্তে এসে অবস্থান করছে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার জন্য। ভারতের রক্ষীবাহিনী বিএসএফ তাদের ঢুকতে দিচ্ছে না। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা এখন মহা আতঙ্ক নিয়ে বাস করছে। বিদেশ সচিবদের বৈঠকের পরও, বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কোনও উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। পরন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার চলছে। ভারত সরকারের পরবর্তী করণীয় কী, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। এদিকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হবে কিনা, তা নিয়ে কোনও কথা শোনা যাচ্ছে না।
বিএনপি নেতাদের সন্দেহ তদারকি সরকারের প্রধান তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে কিনা। নির্বাচনে আওয়ামি লিগকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে কিনা, নাকি এই দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণআ করা হবে, তা নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এই দলের নেতাদের একাংশ চান আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে। কারণ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২৮ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। সুতরাং এই দলের কোনও স্থান নেই বাংলাদেশে। দলের নেতাদের আার এক অংশ চান, আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিতে। কারণ তাঁদের আশা, বাংলাদেশের জনগণ আর আওয়ামি লিগের পাশে নেই।
বিএনপি’র নেতারা ভারতের পণ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী বর্জন করার ডাক দিয়েছে। এই দলের যুগ্ম সচিব কলকাতা তেকে কেনা শাড়ি প্রকাশ্যে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। অথচ ভারতের পণ্যে বাংলাদেশের দোকানগুলি ভরা। বাংলাদেশের মানুষের ভারতের কাঁচালঙ্কা, ভারতের ফল, ভারতের অন্যান্য জিনিস ছাড়া একদিনও চলে না। সবচেয়ে অসুবিধেয় পড়েছে এই দেশের জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা। তাঁরা কলকাতার হাসপাতালে আসার সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার যাঁরা চিকিৎসা শেষে বাংলাদেশে ফিরে গেছেন, তাঁরা চেকআপের জন্য কলকাতায় আসতে পারছেন না। বাংলাদেশে জটিল রোগের চিকিৎসা নিয়ে এখনও অনেক পিছিয়ে।
এদিকে অত্যাচারিত হয়ে যেসব হিন্দু পরিবার সীমান্তে এসে অবস্থান করছে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার জন্য, তাদের আবার নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা আর ফিরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। কারণ ফিরে গেলেই তাঁদের ওপর অত্যাচার চালানো হবে। এ ব্যাপারে ভারত সরকারের ভূমিকা কী, তাও বোঝা যাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে, তাকে সমর্থন করা যায় না। এ ব্যাপারে ভারত সরকারের যা করণীয় তা অবিলম্বে করা উচিত। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের উচিত সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা। তারা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে, তার ব্যবস্থা করা।