বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূস খান এখন নরম না গরম, তা বোঝার উপায় নেই। তবে তদারকি সরকারের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন এবং জঙ্গি তৎপরতার কারণে ভারত ও আমেরিকা যৌথভাবে বাংলাদেশ সরকারের যে নিন্দা করেছে, এতে খান সাহেব কিছুটা নরম। তার উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আগামী মাসের গোড়ায় ব্যাঙ্ককে বিমস্টেকের যে সম্মলন বসতে যাচ্ছে, সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান ইউনুস খান উপস্থিত থাকবেন। এই সুযোগ নিয়ে মোদী ও ইউনুসের মধ্যে একটি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। ঢাকা মনে করে দুই দেশের এই দুই প্রধানের মধ্যে আলোচনা হলে, ততে অনেক বিষয় উঠে আসবে। দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা থাকবে।
ঢাকার প্রস্তাবিত এই বৈঠক নিয়ে দিল্লি এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে বিশেষ সূত্রে জানা যায়, এই দুই প্রধানের বৈঠক নিয়ে ভারত সরকারের নিজেদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেছেন, ঢাকা নিয়মিতভাবে ভারতকে গালিগালাজ করছে, সংখ্যালঘুদের ওপর চরম উৎপীড়ন চালাচ্ছে-আবার দুই প্রধানের বৈঠকেরও প্রস্তাব দিয়েছে- এই দু’টি বিষয় এক হতে পারে না। তবে এখনও বিমস্টেক বৈঠকের দুই সপ্তাহ বাকি। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রক যে চিন্তাভাবনা করছে না, এমনটি নয়। এই মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকদের মধ্যে একাংশ মনে করে, ঢাকার প্রস্তাবটি একেবারে উড়িয়ে দিলে বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা আরও বাড়বে এবং সংখ্যালঘুরা বিপদে পড়বে। আবার চিনও পাকিস্তানের মদতে দারুণভাবে উৎসাহিত হয়ে ইউনুস খান ভারত বিরোধিতা নিয়ে আরও গরম গরম কথা বলতে পারে। বিমস্টেকের বৈঠকে (যদি হয়) ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী সংখ্যালঘুদের ওপর পীড়ন এবং ভারত বিরোধিতার জন্য ইউনুস খানকে কড়া ভাষা প্রয়োগ করে তাকে চাপে ফেলতে পারেন।
তবে ঢাকা চাইলেই এই বৈঠক হওয়ার কোনও বাস্তব দিক দেখতে পাচ্ছে না ভারতের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার কর্তারা। তাদের কথায় বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং পাকিস্তানপন্থীরা নিয়মিতভাবে ভারতের বিরুদ্ধে নানা ব্যাপারে সমালোচনা করছে। সেখানে লাগাতর ভারত বিরোধিতা চলছে। এই উত্তেজক পরিস্থিতির এই বৈঠক একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলির প্রধান তুলসী গবার্ড সম্প্রতি দিল্লিতে এসে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সে দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর যে পীড়ন চলছে, যেভাবে তাঁদের বাড়িঘর আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে, তাতে গাবার্ড রীতিমতো ব্যথিত এবং চিন্তিত। সুতরাং তুলসী যেভাবে বাংলাদেশের কার্যকরণের সমালোচনা করেছেন, তাতে তদারকি সরকার রীতিমতো চাপে। আর এই চাপ থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা যায়, তার জন্যই মোদী ইউনুস খানের মধ্যে বৈঠকের প্রস্তাব।
এই উপমহাদেশে ভারতকে চাপে ফেলার জন্য পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে ঢাকার যে দহরম মহরম চলছে, তাও রীতিমতো উদ্বেগের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান ইউনুস খান আগামী ২৬ মার্চ চিন সফরে যাচ্ছেন, সেখানকার সরকারের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চিন কীভাবে সংস্কারের কাজে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে, সে বিষয়েই বেজিংয়ের নেতাদের সঙ্গে কথা হওয়ার সম্ভাবনা। কারণ হাসিনা সরকারের উৎখাদের পর, বাংলাদেশে যে অরাজকতা দেখা গিয়েছিল, তখন চিন বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেছিল, বেজিং সরকার সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে আছে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সুতরাং ইউনূস খানের আসন্ন চিন সফর ভারতের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। কারণ চিন ও পাকিস্তান বাংলাদেশে যেভাবে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে, তা দিল্লির কাছে আদৌ প্রত্যাশিত নয়।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমূলে নষ্ট করে সেখানে আফগানিস্তানের তালিবানের ধাঁচে সরকার গঠনের জন্য বিশেষভাবে তৎপর হয়েছে। বাংলাদেশের কট্টর মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজাবুত তাহরী নিষিদ্ধ ঘোষণা হলেও তাহরীর নেতারা পুলিশের নজরদারি উপেক্ষা করে ঢাকায় মিছিল মিটিং করছে নিয়মিত। অর্থাৎ এই সংগটনের নেতারা চান বাংলাদেশ হবে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্র চলবে ইসলাম ধর্মের অনুশাসন মেনে। পুলিশের পাহারায় এই নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশের নানা স্থানে মিটিং করছে বলে জানা। যায়। জামায়াতের আমিরও ঘোষণা করেছে বাংলাদেশকে একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করা হোক। আর এই সরকার ভারতের অনুগত হবে না। পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করবে এই ইসলামিক রাষ্ট্র।
বিমস্টেকে মোদী ও ইউনুস খানের মধ্যে বৈঠক হোক বা না হোক, তদারকি সরকারের প্রেস সচিব সাম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন বেশ ভালো চলছে। তাঁর দাবি, তদারকি সরকারের সাতমাস সময়কালে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বেড়েছে। তিনি বলেছেন, যে যাই বলুক না কেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে সবসময়ই একটা সুসম্পর্ক চাই।’ ইউনুস খানের চিন সফর নিয়ে বলতে গিয়ে প্রেস সচিব বলেন, চিনও আমাদের পরম বন্ধু। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন তেকেই চিনের সহেগ বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। ইউনুস খানের চিন সফর দুই দেশের সম্পর্কে আরও উন্নতি হবে বলে তাঁর আশা। তদারকি সরকারের প্রধান বেজিংয়ে