অসম সরকার রাজ্যে কোনও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই স্বীকৃতি দেবে না এবং সরকারি আর্থিক সাহায্য না দেওয়ার কথা ঘােষণা করেছে। এখন থেকে রাজ্যে সকল মাদ্রাসা সংস্কৃত চর্চার টোলগুলিকে সরকার পরিচালিত সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করতে হবে বলে নােটিশ জারি করেছে। ফলে সরকারি আর্থিক আনুকুল্লে কোনও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর কোনও অস্তিত্ব থাকবে না অসমে।
এর ফলে জাতিসত্তা নিয়ে যে দ্বৈধতার মানসিকতা দেশে বিরাজমান ছিল তারও অবসান হবে। কারণ সকলেই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই পাঠক্রম অনুযায়ী পাঠাভ্যাসের সুযােগ পাবে এবং একই দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত হবে। কোনও ধর্মীয় পৃথক সত্তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর শিক্ষার পথে বা পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষা বা চাকরির ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না। দেশের নানা জাতি, নানা ভাষা ও নানা সংস্কৃতির সঙ্গে সকলেই একযােগে পরিচিত হতে পারকে যার নাম এককথায় ভারতীয়ত্ব।
অসম মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত আগামী শীতকালীন বিধানসভা অধিবেশনে বিল হিসেবে পেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে এমন এক সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাওয়ার যােগ্য। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, শিক্ষার সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষীকরণের জন্যই এই ব্যবস্থা। এরফলে অসমে অবস্থিত সাতশাে মাদ্রাসা এবং একশাে টোলে আর ভর্তির প্রক্রিয়া চালু থাকছে না বলে তিনি জানান।
তবে এমন শিক্ষা সংস্কার বিলের ক্ষেত্রে খসড়াটি এমন হওয়া উচিত যাতে পরবর্তীতে তা প্রয়ােগের ক্ষেত্রে কোনও অস্বস্তিকর অবস্থার সম্মুখীন না হয়। অসমে আটচল্লিশ হাজার লােয়ার ও আপার প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যার অপ্রতুলতার কারণে বহু বিদ্যালয় সংযুক্তি প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। রাজ্য শিক্ষা পরিকাঠামাের এমনই করুণ পরিস্থিতি। ফলে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও পর্যাপ্ত হওয়া জরুরি।
কিন্তু রাজ্যে যেহেতু বিজেপি দলের শাসন তাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনে শিক্ষার গৈরিকীকরণের কোনও সন্দেহ যাতে না আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনওভাবেই যাতে মুসলিম বিরোধী কোনও পদক্ষেপ এই শিক্ষা সংস্কারের নামে করা হচ্ছে না তা বিরােধী ও অন্যান্য সকল গােষ্ঠীর কাছে নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া, গেরুয়া শিবিরে যাতে এই বিল পাশ হওয়ার পর একটা বিরাট জয় হল এমন কোনও বার্তা প্রকাশ না করা হয় তাও নিশ্চিত করতে হবে। এতে কিন্তু হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাকেই উস্কে দিতে পারে। তাই সরকারের কাছে এমন এক মহতী সংস্কার প্রবর্তণে দায়িত্বশীলতারও নজির রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে ব্যক্তির উদার মুল্যবােধের অধিকার যাতে কোনওভাবেই বিঘ্নিত না হয় এবং ধর্মনিরপেক্ষতা যেন প্রকৃত অর্থেই শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয় তা নিশ্চিত করা জরুরি।