স্তাবকতা

তৃণমূল ভালই চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণকীর্তন করেও তাঁদের শান্তি নেই। তাঁকে আরও ওপরে তুলতে চান। একজন মা সারদার সঙ্গে তাঁর তুলনা টানলেন। অপরজন তাঁর মধ্যে রানি রাসমণিকে দেখতে পেলেন। এঁরা তৃণমূলের বিধায়ক।

একজনের নাম করতেই হয়। তিনি নির্মল মাজি। অপরজন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ঢোকা বাগদা কেন্দ্রের বিধায়ক । নির্মল মাজি শাসক দলের একজন বিতর্কিত নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ পাহাড় সমান উঠলে প্রশাসন আর সহ্য করতে না পেরে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে সরিয়ে দেয়।

তিনি আদালতের রায়ে অবৈধ মেডিক্যাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রয়েছেন । এই পদে থেকেই তিনি নানা অনৈতিক কাজ চালাচ্ছিলেন। এখন বিধানসভায় একটি স্ট্যান্ডিং কমিটির শীর্ষে আছেন। প্রথমত একজনের সঙ্গে অপর একজনের তুলনা টানা ঠিক নয়।


গত এগারো বছর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা রাজ্যের মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করেছেন। তিনি শক্ত হাতে রাজ্য প্রশাসনের হাল ধরলেও , তা মাঝে মধ্যে শিথিল হয়ে যাচ্ছে। ভুলভ্রান্তি হচ্ছে– তা সংশোধন করার কথা তিনি বললেও সেই অর্থে সংশোধন হচ্ছে না । সুতরাং মুখ্যমন্ত্রীর সব কাজই যে ত্রুটিবিহীন তা বলা যাবে না।

আবার অস্বীকার করা যাবে না , তিনি মানুষের ভালবাসা , আস্থা অর্জন করেছেন । তাঁর দিকে চেয়েই রাজ্যের মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় তোলেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী , তাই রাজধর্ম পালন করা তাঁর প্রধান কাজ।

তিনি যে সব কাজই নির্ভুলভাবে করেন তা বলা যাবে না। মুখ্য মন্ত্রী হিসেবে তিনি সুনামের অধিকারী হলেও তাঁকে মা সারদার সঙ্গে তুলনা করা বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? স্তাবকতার একটা সীমা পরিসীমা থাকা দরকার। তা এই মাজি মহাশয়ের নেই। মা সারদার সঙ্গে তাঁর তুলনা টানতে একটুও মনে বাধল না? দ্বিধা হল না? বিশ্বে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এবং মা সারদার অগণিত ভক্ত রয়েছেন।

তাঁরা তাঁদের পুজো করেন  তাঁদের বাণী , তাঁদের আদর্শ , তাঁদের মানুষের প্রতি ভালোবাসা , সেবার কথা তাঁরা স্মরণ করেন। নির্মল মাজির এই মন্তব্য তাঁদের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে।

তাঁরা দুঃখিত , ব্যথিত , মর্মাহত এই তুলনার কথা শুনে। তাই প্রশাসন যাতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তার জন্য মা সারদার এক ভক্ত কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। মা সারদার সঙ্গে মমতার তুলনা কীসের ভিত্তিতে করলেন সে প্রশ্নও তুলেছেন মামলাকারিণীর আইনজীবী। অপরজন রানি রাসমণির সঙ্গে মমতার তুলনা টেনে তিনি যে স্তাবকতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন তার পরিচয় দিলেন। এই তুলনা অবাঞ্ছিত এবং হাস্যকর।

যাঁরা দুই বিধায়কের এই তুলনার কথা শুনেছেন , তাঁরাই তাঁদের বুদ্ধি বিবেচনা বলে কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন। আরও আশ্চর্য্যের ব্যাপার , দুই বিধায়কের এই মনীষীদের সঙ্গে তুলনা করা যে গর্হিত , তা নিয়ে একটি কথাও উচ্চারণ তৃণমূলের কোনও নেতার মুখে শোনা যায়নি। আর মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে বিধায়কদের কিছু বলেছেন বলে জানা যায়নি।

এদিকে মা কালী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করার জন্য তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র বিতর্কে জড়িয়েছেন। মা কালীকে নিয়ে তাঁর মন্তব্য আঘাত করেছে রাজ্যবাসীকে। তাঁর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে রাজ্যের অনেক থানায় এফআইআর করা হয়েছে। বিজেপির নেতারা মহুয়ার মন্তব্যকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছেন। গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।

তাঁকে এগুলি করার জন্য তৃণমূলের শীর্ষ নেতা এবং সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন , মহুয়া মৈত্রের মা কালীকে নিয়ে যে মন্তব্য তা দল সমর্থন করে না । এটা তাঁর নিজস্ব অভিমত। দল মনে করে , যে সব কথা বিশেষ করে দেবদেবী নিয়ে যা মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করে তানা বলাই ভালো।

অনর্থক বিতর্ক সৃষ্টি করে লাভ কী ? এই সাংসদ আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করে নিন্দিত হয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদেরও ছাড়েননি। বলেছিলেন , ‘ দুই পয়সার সাংবাদিক। ‘ তাঁর এই উক্তির জন্য সাংবাদিক মহল তীব্র ভাষায় তাঁর নিন্দা করেছিল। আবার বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন।

মহুয়ার মন্তব্যের জন্য এই সাংসদকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করে একটি টিভি চ্যানেল তাঁকে বয়কট করেছিল। এইসব সাংসদ এবং বিধায়কদের আর কি কোনও কাজ নেই ? তাঁরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন মানুষের নানাবিধ সমস্যা জানা ও তার প্রতিকার করা। দেশ ও দশের মঙ্গলে নিজেদের নিয়োজিত করা।

সে কাজে মন না দিয়ে উল্টোপাল্টা মন্তব করে মানুষের মনকে , তাঁদের ভাবাবেগকে আঘাত করে তাঁদের বিরাজভাজন হচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য যদি তাঁকে মা সারদা বা রানি রাসমণির সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে , তাহলে তাঁরা বড় ভুল করেছেন। এই ভুলের জন্য তাঁদের অনুশোচনা হচ্ছে কিনা জানি না , তবে মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই এই তুলনাকে মেনে নেননি।