• facebook
  • twitter
Wednesday, 18 September, 2024

অপরাজিতা

আরজি করের পর মুখ্যমন্ত্রী এই পাশবিক অত্যাচারের নিন্দা করে ধর্ষকের ফাঁসির দাবি তুলেছেন। সেই সঙ্গে আরজি কর কাণ্ডের ঘটনা যদি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তাতেও সরকারের কোনও আপত্তি নেই বলেছিলেন।

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে যে আন্দোলন চলছে তার শেষ কোথায় তা এখনও অনিশ্চয়তার স্তরে রয়েছে। কবে বিচার মিলবে তা কেউ জানে না। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’— এই দাবি তুলে আবার আর একটি রাত জাগল তিলোত্তমা। এই রাত দখলের আন্দোলনে তৃণমূলের একজন প্রবীণ সাংসদ ছাড়া অন্য মুখও দেখা গেছে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের রাত জাগার মধ্যে চলে এল বিষাদ, যখন জানা গেল আরজি কর কাণ্ড নিয়ে শুনানির জন্য সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বৃহস্পতিবার বসবে না। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি কয়েকদিন হল অসুস্থ। তাঁর বেঞ্চের আর দু’জন বিচারপতি অন্য এজলাসে বসবেন সেখানে আরজি কর নিয়ে আলোচনার কোনও প্রশ্ন নেই। আরজি করের দুর্নীতি নিয়েও দেখবে সর্বোচ্চ আদালত।

সুতরাং প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ কবে বসবে তা কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। যা আশা হত করেছে রাত জাগাদের। তবে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছে ‘জাস্টিসের’ দাবিতে আন্দোলন তাঁরা চালিয়ে যাবেন। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আরজি করের বর্বরোচিত কাণ্ডের মামলা রুজু করেছিলেন। সুতরাং প্রধান বিচারপতি সুস্থ হওয়ার পর আরজি কর কাণ্ডের শুনানি হবে। তবে তা কবে হবে এখনও অনিশ্চয়তার দোলায় দুলছে। আন্দোলনকারীরা বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এই ধরনের আন্দোলনে অচল করবে তিলোত্তমাকে।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাদ্যায়ের নির্দেশে সম্প্রতি বিধানসভায় পাশ হওয়া ধর্ষণ মোকাবিলার— ‘অপরাজিতা’ বিলের প্রতিলিপি পাঠানো হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে। তার আগে নতুন বিলের ক্ষেত্রে তা বিধিমতো পাঠানো হল রাজ্যপালের কাছে তাঁর সম্মতির জন্য। তবে রাজ্যপাল বিলটির অনুমোদন দিতে বিলম্ব করবেন না বলে আশা করা যায়। সাধারণত বিধানসভায় নতুন কোনও বিল পাশ হলে, তা রাজ্যপালের সম্মতির জন্য তাঁর কাছে পাঠানো হয়। এটাই রীতি। কিন্তু বর্তমান ক্ষেত্রে বিলটির গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হল ‘অপরাজিতা’কে। নারী সুরক্ষা বা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেছিলেন বিলটির ওপর আলোচনা কালে। শুধু তাই নয়, বিরোধী দল বিজেপি আরজি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। এর জবাবে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদত্যাগ চান।

এদিকে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারও পশ্চিমবঙ্গে নারী সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে সম্প্রতি বিধানসভায় যে বিল পাশ হয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করে। তিনি বলেন, মহারাষ্ট্রের এই ধরনের আইন প্রণয়ন দরকার। তিনি বলেছেন, অপরাজিতাতে ধর্ষণকারীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া নারী সুরক্ষা ও তাদের নিরাপত্তা নিয়ে বিলে যেসব প্রস্তাব সন্নিবেশিত হয়েছে, পাওয়ার তারওপ্রশংসা করেছেন। মহারাষ্ট্রেও অবিলম্বে এই রকম একটি বিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাশ করা প্রয়োজন। এ রাজ্যের নারীর নিরাপত্তার বিশেষ প্রয়োজন।
এদিকে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, যিনি স্বাস্থ্য দফতরই প্রধানত দেখেন, বলেছেন, সম্প্রতি বিধানসভায় নারী সুরক্ষা সংক্রান্ত যে বিল পাশ হয়েছে, তা ‘ইতিহাস তৈরি করবে’। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এবং তার ইচ্ছায় এই বিলটি পাশ হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য রাজ্যেও এই ধরনের আইন পাশ করা দরকার। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দুই দল সিপিএম ও কংগ্রেস এই বিল পাশ করার মধ্যে রাজনীতি দেখছে। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, আরজি কর কাণ্ডে ন্যায় বিচারের দাবিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন রাস্তায়। কেন তারা রাস্তায়তা নিয়ে কোনও চিন্তাভাবনা মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। তিনি বিধানসভায় বিলে ধর্ষণকে প্রমাণ সাপেক্ষে ফাঁসির কথা বলা হয়েছে। বিজেপি তার সঙ্গে গলা মিলিয়ে বিলকে সমর্থন করেছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে ধর্ষণ হলে হেলায় এড়িয়ে যাওয়া হয়। ধর্ষককে ধরা হয় না।

তবে বিরোধীরা বিলের সমালোচনায় মুখর হলেও, এই ধরনের একটি আইন পাশ করার প্রয়োজন ছিল। রাজ্যে প্রায়ই ধর্ষণের খবর শোনা যায়, নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে অনেক অভিযোগ শোনা যায়। ধর্ষণ কাণ্ডে যারা অপরাধী তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। এখন এই বিলে ধর্ষকদের ফাঁসি সহ আরও অনেক শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আরজি করের পর মুখ্যমন্ত্রী এই পাশবিক অত্যাচারের নিন্দা করে ধর্ষকের ফাঁসির দাবি তুলেছেন। সেই সঙ্গে আরজি কর কাণ্ডের ঘটনা যদি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তাতেও সরকারের কোনও আপত্তি নেই বলেছিলেন। ঘটনায় তিনি অত্যন্ত বেদনাহত।