করােনা এ পর্যন্ত পৃথিবীর ১০ লক্ষের বেশি মানুষের জীবনই কেড়ে নেয়নি, যাঁরা এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসায় সেরে উঠেছেন, তাঁদেরও চরম দারিদ্রের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাঁরা এখন নিঃস্ব, কীভাবে বেঁচে থাকবেন তার পথ খুঁজছেন। বিশ্ব ব্যাঙ্ক সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় বলেছে, করােনা মহামারির জেরে বিশ্বের পনেরাে কোটি মানুষ চরম দুঃখকষ্ট এবং দারিদ্রের মধ্যে পড়বেন। এই সাবধানবাণী উচ্চারণ করে বিশ্বব্যাঙ্ক বলেছে, এখনও সংক্রমণ কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না– প্রতিষেধক বা টিকা কবে মানুষের হাতে আসবে, তাও সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। তা না আসা পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের মানুষ এই ভাইরাসে যেমন আক্রান্ত হবেন, তেমনই তাঁদের মৃত্যুও ঘনিয়ে আসবে।
বিশ্বের বৃহত্তম জনহুল দেশ ভারতকে নিয়েও বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তারা রীতিমতাে চিন্তিত। ১৩০ কোটি লােকসংখ্যার এই দেশের দারিদ্র, অভাব নিয়ে তেমন কোনও গ্রহণযােগ্য তথ্য বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে নেই। এ ব্যাপারে ব্যাঙ্ক পুরাে অন্ধকারে। বার বার চাওয়া সত্ত্বেও ভারত এ ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে পাঠায়নি। কিন্তু করােনা মহামারি জাঁকিয়ে বসেছে এই জনবহুল দেশে। লম্বা লকডাউনের জেরে হাজার হাজার মানুষ কাজ হারিয়ে এখন পথে বসেছেন। তাই ভারতে অভাবের চিত্র ভয়াবহ তা বিশ্বব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অনুমান করতে পারে।
‘পভার্টি অ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি’ শীর্ষক বিশ্বব্যাঙ্কের সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, করােনা-আক্রান্ত বিশ্বের প্রতিটি দেশ কমবেশি অভাব, দারিদ্রের সম্মুখীন হবে। সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও প্রকট হবে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ আরও বাড়বে। ব্যাঙ্কের এই সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৫ সালে দারিদ্রের হার ছিল ৯.২ শতাংশ। ২০২০ সালে করােনার ভয়াবহ প্রকোপ না পড়লে, এই দারিদ্রের হার কমে দাঁড়াত ৭.৯ শতাংশ। করােনা পরিবর্তিত অবস্থায়, প্রতিটি দেশের উচিত দারিদ্র এবং অভাব ঘােচাতে ও তীব্র অর্থ সংকট সামলাতে, বিকল্প অর্থনীতি গ্রহণ করা। এই বিকল্প অর্থনীতি এখনই জরুরি হয়ে পড়েছে, কারণ করােনার আক্রমণ বেড়েই চলেছে। আবার লকডাউনের আশ্রয় নিলেও অবস্থা আরও জটিল হবে।
বিশ্বব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে দারিদ্রের তথ্য না জানালেও, চরম আর্থিক সংকটের সম্মুখীন এখন ভারত। করােনা মােকালািয় ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে দীর্ঘ সময় ধরে লকডাউন। ফলে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে পড়ছে। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক, চাকুরীজীবী কাজ হারিয়েছেন। তারা এখন পথে। যে সংস্থা লকডাউনের কারণে ঝাপ ফেলেছে, আবার তা কবে খুলবে, তা কেউ জানে না। পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ হরিয়ে, জমানাে এই খরচ করে নিঃস্ব হয়ে, নিজ নিজ রাজ্যে ফিরেছেন। সেখানে এসে এখন বেকার জীনযাপন করছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি আত্মনির্ভর ভারত গড়া নিয়ে কত কথা বলেন, কিন্তু দেশে তীব্র বেকার সমস্যার কীভাবে সমাধান হবে, তা নিয়ে তার মুখে কোনও কথা সরে না। করােনার থাবা বিস্তার করার আগেই বেকারে ভরা ছিল দেশ। প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বেকারদের মুখে হাসি তাে ফোটাতে পারেননি, উল্টে এই সমস্যা আরও তীব্র করে তুলেছেন। তারপর করােনা এসে সব তছনছ করে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাহলে এখন ভারতে বেকারের সংখ্যা কত? করােনার আক্রমণ চলাকালীন ভারতের অভাব দারিদ্রের চিত্রটাই বা কী? কর্মসংস্থান দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে তাে হচ্ছেই, কারণ ভারী শিল্পের দেখা নেই। করােনার থাবা বিস্তার না থামলে, কেউ লগ্নি করতে আসবে না।
অভাব, দারিদ্রের চিত্রটা যেহেতু ভয়াবহ তাই বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও, ভারত বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে এ ব্যাপারে চাওয়া তথ্যাদি পাঠায়নি। ভারত তা না পাঠালেও, বিশ্বব্যাঙ্ক যাবতীয় তথ্যই হাতে পেয়েছে। সেই চিত্র কিন্তু ভয়াবহ।