আগ্রাসী ইজরায়েল

ইজরায়েলের হামলায় যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্টাইন। ফাইল চিত্র

ইস্রায়েলের হামলায় প্যালেস্তাইনের গাজার পর এবার বিধ্বস্ত লেবানন। উপর্যুপুরি রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শত শত বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ইস্রাজেল বলছে, তাদের লক্ষ্য জঙ্গি হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। কিন্তু বেসামরিক আবাসনে, এমনকী হাসপাতালেও ইস্রায়েলের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র এসে আছড়ে পড়েছে। ঠিক একইভাবে প্যালেস্তাইনের গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালানোর সময়ও ইস্রায়েল বলেছিল, কোনও বেসামরিক নাগরিক নয়, হামাসকে নির্মূল করাই তাদের লক্ষ্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল প্রায় এক বছর ধরে এই হামলায় ৪০ হাজারেরও বেশি নিরীহ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। এখন লেবাননের হাজার হাজার মানুষ ইস্রায়েলি হামলায় বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে।

ইস্রায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকে হিজবুল্লাহর গড়ে তোলা ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করতে তারা ১৩০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে। অন্যদিক, হিজবুল্লাহ ইস্রায়েলের উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে শ’দুয়েক রকেট ছুঁড়েছে বলে ইস্রায়েল জানিয়েছে। এতে কিছু মানুষ আহত হয়েছেন। কার্যত উভয় পক্ষ এক সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ভূমিকা খুবই নৈরাশ্যজনক। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্টানিও গুতেরাস উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে একটি বার্তা দিয়ে নিজের দায় সেরেছেন। তিনি চান না লেবানন আর একটি গাজায় পরিণত হোক। বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশগুলি, এমনকি মানবতার ধ্বজাধারী পশ্চিমী দেশগুলিও মুখে কুলুপ এঁটেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশ বিষয়ক প্রধান তোসেফ বেরেল বলেছেন, পরিস্থিতি মারাত্মক, বিপজ্জনক ও উদ্বেগপূর্ণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছদ্ম সহানুভূতি দেখিয়ে ছক বাঁধা বুলি আউড়ে চলেছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করছে যাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে।

গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গত এক বছর ধরে ইস্রায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে লড়াই চলছে। এর ফলে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। হিজুবুল্লাহ স্বীকার করেছে যে তারা হামাসের সমর্থনে কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং যতদিন না গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত না হচ্ছে, ততদিন তারা থামবে না। হিজবুল্লাহ ও হামাস নিজেদের দেশরক্ষায় বদ্ধপরিকর। ইস্রায়েলের দোসর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমী দেশগুলি এদের সন্ত্রাসী সংগঠন বলে থাকে। হিজবুল্লাহ যেমন লেবাননের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করছে, তেমনই হামাস প্যালেস্তাইনের ভূমিরক্ষায় সক্রিয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ন্যাটোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মুখে বলা হয়ে থাকে, এটা বিশ্বের শান্তি স্থাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাহলে গাজা ও লেবাননবাসীদের স্বার্থে ন্যাটো কেন সক্রিয় হবে না? এর কোনও উত্তর মেলে না।


রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য উদ্যোগী হতে চেয়েছিলেন নিজেকে ‘বিশ্বগুরু’ বলে দাবি করা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্যালেস্তাইন ও লেবাননে হামলাকারী ইস্রায়েল সম্পর্কে কিন্তু একেবারে নিশ্চুপ নরেন্দ্র মোদী। প্যালেস্তাইনের সপক্ষে ফের দেশে-বিদেশে মানুষ সোচ্চার হচ্ছেন। ৭ অক্টোবর গাজায় ইস্রায়েলি বাহিনীর গণহত্যার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গাজায় হামলা বন্ধ ও প্যালেস্তাইনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন হিসাবে দিনটি পালনের আহ্বান জানিয়েছে ভারতের পাঁচটি বামপন্থী দল। প্যালেস্তাইনপন্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখিকা ঝুম্পা লাহিনী নিউইয়র্কের এক সংগ্রহশালার দেওয়া পুরস্কার ফিরিয়ে দিলেন।

আন্তর্জাতিক বিচারালয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইস্রায়েলি আক্রমণকে গণহত্যার শামিল বলে মন্তব্য করে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। হামলা বন্ধ সংক্রান্ত সমস্ত ধরনের অর্থপূর্ণ আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছে ইস্রায়েল। গোটা বিশ্বের মানুষ ইস্রায়েলি হামলার বিরোধিতা করলেও সেদেশ থেকে অস্ত্র কিনছে ভারত। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্যালেস্তাইনের আত্মপ্রকাশে এবং অবিলম্বে অস্ত্র কেনা বন্ধ করে ইস্রায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে মোদি সরকার এখনও সংশয়ে। এই সংশয় কাটাতে না পারলে বিশ্বে ভারত আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।