• facebook
  • twitter
Thursday, 21 November, 2024

মস্তিষ্ক প্রক্ষালন

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল— ‘ন্যাশনাল টেস্টিং’ এজেন্সি (এনটিএ) যারা প্রবেশিকা পরীক্ষা পরিচালনা করে, তারা যে শিথিলতা প্রদান করেছিল তা অবশ্য প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

করোনা মহামারীর সময় পাঠ্যসূচিতে কাটছাঁট করেছিল ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’ (এনসিইআরটি)। অভিযোগ, ২০২২ সালে তারা স্কুলের পাঠ্যক্রম থেকে মুঘল যুগ থেকে শুরু করে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বিষয়ক যে বিষয়বস্তু ও অধ্যায়গুলি বাদ দিয়েছিল এখনও তা সিলেবাসে ফেরানো হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে শিক্ষাবিদদের অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। এনসিইআরটি’র উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক কারণেই এই অধ্যায়গুলি ফেরানো হচ্ছে না। আসলে গেরুয়াপন্থীদের খুশি করতেই কাটছাঁট করা অংশগুলি সিলেবাসে ফেরানো হচ্ছে না। কিছু শিক্ষাবিদ বলেছেন যে, এনসিইআরটি পাঠ্যপুস্তক থেকে ৩০ শতাংশ সিলেবাস এবং উপাদান মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গেরুয়া সরকারকে খুশি করার লক্ষ্যে এমনটা করা হয়েছিল। কারণ, ওই বিষয়বস্তুগুলি গেরুয়া-নেতাদের পছন্দের ছিল না।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল— ‘ন্যাশনাল টেস্টিং’ এজেন্সি (এনটিএ) যারা প্রবেশিকা পরীক্ষা পরিচালনা করে, তারা যে শিথিলতা প্রদান করেছিল তা অবশ্য প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে বিষয়টি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এনটিএ যা করতে পারল, এনসিইআরটি’র তা করতে এত বিলম্ব হচ্ছে কেন? নাকি তাদের ইচ্ছার অভাব রয়েছে?

সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিএ বলেছে, আগামী বছরে (২০২৫) জয়েন্ট এন্ট্রান্স এক্সামিনেশন (জেইই) মেইন-এ তারা তাদের পুরনো ফরম্যাটে ফিরে আসবে, যেখানে বিভাগ-বি’র প্রতিটি বিষয়ে পাঁচটি প্রশ্ন থাকবে এবং পরীক্ষার্থীদের ৫টি প্রশ্নেরই উত্তর দিতে হবে। ২০২১ সালে এনটিএ তাদের প্রশ্নের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০টি করেছিল। আর পরীক্ষার্থীদের তার মধ্যে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হত। মহামারী চলাকালীন এই অস্থায়ী পরিবর্তনটি চালু করা হয়েছিল। এবার তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ এবার থেকে আর ১০টি নয়, ৫টি করেই প্রশ্ন থাকবে। আর পরীক্ষার্থীদের পাঁচটি প্রশ্নেরই উত্তর দিতে হবে।

২০২২ সালে এনসিইআরটি পড়ুয়াদের উপর থেকে চাপ কমাতে বেছে বেছে কিছু বিষয়ক বস্তু বাদ দিয়েছিল। মুঘল, জাতিভেদ প্রথা, ইসলামের উত্থান এবং জওহরলাল নেহরু সম্বলিত অধ্যায় বাতিল করা হয়েছিল। তা এখনও ফেরানো হয়নি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডিইউ) অধ্যাপক অশোক আগরওয়াল বলেছেন, এই সমস্ত বিষয়বস্তু বাদ দেওয়ার চেষ্টা আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ডাকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিফলন। সেন্ট স্টিফেন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত ফ্যাকাল্টি সদস্য শিক্ষাবিদ নন্দিতা নারায়ণ বলেছেন, পাঠ্যপুস্তকগুলিতে পরিবর্তন আনার জন্য করোনা মহামারীকে একটি অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘কোভিড-১৯’-এর সময় সিলেবাস পরিবর্তন করাটা অজুহাত ছিল। তারা মুঘল ইতিহাস, ইসলাম এবং সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের বড় অংশ বাদ দিয়েছিল। একটি বিশেষ মতাদর্শের প্রতি আনুগত্য থেকেই গেরুয়া শিবির এটা করেছিল।’

কট্টর হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে আরএসএস ও বিজেপি। এনসিইআরটি’র সিলেবাস পরিবর্তন, মাদ্রাসায় গীতা পাঠ আবশ্যিক করার জন্য চাপ সৃষ্টি, সংরক্ষণ ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার গেরুয়াকরণ সম্পন্ন করতে চায় সঙ্ঘ পরিবার। স্বশাসিত এনসিইআরটি’র ওপর মোদি সরকারের চাপ সিলেবাস পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় অরাজকতা আনতে চাইছে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।