কমিশনের বিরল পদক্ষেপ

এবার নজিরবিহীন অবস্থার মধ্যে চলেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন৷ এখনও আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিন, ক্ষণ, তারিখ এবং অন্যান্য ব্যবস্থাদি ঘোষণা করা হয়নি৷ এর মধ্যেই কমিশনের ফুল বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ ঘুরে ভোটের প্রাথমিক বিষয়গুলি জেনে গেছে৷ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট পরিচালনার প্রাথমিক দায়িত্ব, ভোট যাতে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ হয় তার দায়দায়িত্ব অর্পণ করেছে রাজ্য প্রশাসনিক কর্তাদের ওপর৷ পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকদের এ ব্যাপারে দায়বদ্ধতা বেশি৷ ভোট যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, তার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের নিতে হবে৷

নির্বাচনের দায়দায়িত্ব জেলা প্রশাসন কীভাবে পালন করবে এবং ভোট পরিচালনার পরিকল্পনা কী তা রাজ্যের প্রতিটি জেলা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাতে হবে কমিশনকে৷ নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপকে বিরল বলেই জানিয়েছে ভোট বিশেষজ্ঞরা৷ এমন পদক্ষেপ কমিশন আগে গ্রহণ করেনি৷ কারণ হাতে পারে হয়ত এই কমিশন ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে এবার পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা নির্বাচন হিংসামুক্ত এবং রক্তপাতহীন করতে বদ্ধপরিকর৷ রাজ্যের ভোটাররা যাতে অবাধে এবং বাধাহীনভাবে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারেন তার জন্য সব ব্যবস্থাই করবে কমিশন৷ যেমন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগেই ১৫০ কোম্পানি আধাসেনা পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্যে৷ জওয়ানরা বিভিন্ন জেলার সংঘর্ষপ্রবণ এলাকায় রুটমার্চ করে যাচ্ছে ভোটারদের মনে নিরাপত্তা জাগাতে৷ সব মিলে ৯১০ কোম্পানি আধাসেনা রাজ্যে পাঠাবে শান্তিপূণঁর্‌ ভোটের স্বার্থে৷ এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গই সবচেয়ে বেশি আধাসেনা পাচ্ছে, যা জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকার চেয়েও বেশি৷ কারণ অতীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আধা সেনা পাঠিয়েও ভোট শান্তিপূর্ণ হয়নি৷

কমিশন জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট করার পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাদি কী, তা এক পাতার মধ্যে সারাংশ আকারে লিখে জানাতে হবে৷ তার মধ্যে থাকতে হবে জেলার ভোটের পরিবেশ কী এবং কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে কিনা৷ তাছাড়া প্রতি সপ্তাহেই জেলা প্রশাসন কমিশনের কাছে জেলার বর্তমান পরিস্থিতির ওপর রিপোর্ট পাঠিয়ে দিচ্ছে৷ এ ব্যবস্থাও অভিনব৷ কমিশনের ফুল বেঞ্চ যখন কলকাতায় এসেছিল, তখন বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা বেঞ্চের কাছে নানা অভিযোগ জানায়৷ সেসব অভিযোগ কতটা সত্য তাও যাচাই করে দেখে নিয়ে প্রাত্যহিক রিপোর্ট লিখে জানাতে হবে৷ যদি রিপোর্টে তাদের অভিযোগের বাস্তবতা না থাকে এবং তা জানাতে জেলা প্রশাসন ব্যর্থ হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট জেলা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নেবে৷


কমিশনের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রাজীব কুমার জানিয়ে গেছেন, কোনও অফিসারের কর্তব্যে গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না৷ সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণ হলে অন্যত্র বদলি করা হবে অথবা নির্বাচনী কাজের সঙ্গে যুক্ত রাখা হবে না৷ এমনটা গত লোকসভা নির্বাচনেও হয়েছিল৷

রাজীব কুমার বলেছেন, দেশের মানুষ জানে হিংসা, সংঘর্ষ ও খুনজখম এবং রক্তপাত ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের কোনও নির্বাচনই হয় না৷ এমনকী পঞ্চায়েত ও পুরনির্বাচনও শান্তিপূর্ণভাবে হয় না৷ অতীতে একটি পঞ্চায়েত নির্বাচনেও আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল, তবুও সে নির্বাচনও রক্তপাতহীন হয়নি৷ এইসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবার শান্তিপূর্ণ ভোট যাতে হয়, তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা অবলম্বন করবে৷

লোকসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলেও পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে৷ এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে৷ তৃণমূল ৪২টি আসনের জন্য তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে৷ বিজেপি ও বামেরা আংশিকভাবে তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে৷ শহর ও শহরতলির দেওয়ালে প্রার্থীদের নাম লেখা শুরু হয়ে গেছে৷ ব্যারাকপুরে তৃণমূলের প্রার্থী হচ্ছেন পার্থ ভৌমিক৷ এদিকে অর্জুন সিংকে তৃণমূল প্রার্থী না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি দিল্লি গেছেন বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে৷ মহামান্য হাইকোর্টের বিচারক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিচারপতির পদ ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি করার বাসনা নিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেছেন৷ তিনি মেদিনীপুরের তমলুক বিধানসভা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন৷ অপর গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা আসন হল ডায়মন্ড হারবার৷ সেখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আর একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন হল হুগলি, যেখানে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তৃণমূল প্রার্থী দিদি নম্বর ওয়ান খ্যাত রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সুতরাং ভোটের তারিখ নির্ধারণ না হতেই সারা রাজ্যে ভোটের পরিবেশ৷ প্রচারাভিযান চলছে৷