জমজমাট বিতর্ক

আগামী নভেম্বরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগে প্রথমবার মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট শিবিরের দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মধ্যে এই উত্তপ্ত বিতর্কে উঠে এল গর্ভপাত ও যুদ্ধ থেকে অর্থনীতি ইত্যাদি একাধিক বিষয়। এই বিতর্কের আয়োজন করেছিল এবিসি নিউজ টুডে।

গত ২৭ জুন আর একটি বিতর্ক হয়েছিল। সেই বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপরেই নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান বাইডেন। ডেমোক্রাট দলের নতুন প্রার্থী হন কমলা হ্যারিস। প্রথমে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি আর কোনও বিতর্কে অংশ নেবেন না। কারণ, ডেমোক্র্যাট দল কাকে প্রার্থী করবে তা-ই ঠিক করতে পারছে না। ফলে আর বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি সময় নষ্ট করতে চান না। কিন্তু জনমত সমীক্ষায় হ্যারিসের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়ে যাওয়াই, কিছুটা দলের চাপেই বিতর্কে অংশ নিতে রাজি হন ট্রাম্প।

এই বিতর্ক সভায় রাজনীতি, অর্থনীতি, বিদেশনীতি, অভিবাসন সহ নানা বিষয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মতামত শোনা গেল। প্রথমে উঠল অর্থনীতির প্রসঙ্গ। গত কয়েক বছরে আমেরিকায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেকটা কমে গিয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে অনেকটা। দৈনন্দিন জীবনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। এই নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বেহাল অর্থনীতির জন্য ট্রাম্প দায়ী করেন বাইডেন সরকারকে। অন্যদিকে জবাবে কমলা হ্যারিসের দাবি, কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশের বেকারত্ব অস্বাভবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাইডেন সরকার সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে শক্ত হাতে। তিনি ক্ষমতায় এলে অর্থনীতির যে রূপরেখা তৈরি করেছেন, তাতে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের সুবিধা হবে।


রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে সরাসরি আক্রমণ করে হ্যারিস বলেন, ট্রাম্পের কনজারভেটিভ অর্থনৈতিক প্ল্যান ‘প্রজেক্ট ২০২৫’ কোটিপতি ধনকুবেরদের কর কমানোর উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছে। নিজের মধ্যবিত্ত অতীত তুলে ধরে হ্যারিস ছোট ব্যবসা ও মার্কিন পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তাঁর অভিযোগ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বড় কর্পোরেট ও ধনকুবেরদের স্বার্থে তাঁদের কর হ্রাস করবেন।

বিতর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল আমেরিকার অভিবাসন নীতি। এই ইস্যুতে জো বাইডেন প্রশাসনকে নিশানা বানান ট্রাম্প। বাইডেন-হ্যারিসের অভিবাসন নীতির জন্য আমেরিকা অবৈধ অভিবাসীতে ভরে গিয়েছে। ট্রাম্পের কথায়, ‘আমেরিকার প্রতিটি প্রদেশে, প্রতিটি জায়গায় অন্য দেশের লোক, যারা ইংরেজি জানে না এবং সম্ভবত তারা কোন দেশে রয়েছে তাও জানে না।’

ট্রাম্পের আরও দাবি, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অপরাধ কমে গিয়েছে, কেননা আমেরিকা অন্যান্য দেশ থেকে আসা অপরাধীতে ভরে গিয়েছে।’ হ্যারিসের জবাব ছিল, ‘এইসব একঘেঁয়ে নাটকের সংলাপ আর চলছে না। মানুষ এগুলোকে আর গুরুত্ব দিচ্ছে না।’

একজন মহিলা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে এবারের প্রচারে কমলা হ্যারিসের অন্যতম হাতিয়ার— সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক কঠোর গর্ভপাত বিরোধী আইনের কড়া ভাষায় বিরোধিতা করা। নিজেদের শরীরের উপর, প্রজননের ক্ষমতার উপর অধিকার মেয়েদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানান হ্যারিস। প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের যে বিচারপতিরা গর্ভপাত-বিরোধী আইন নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের নিয়োগ হয়েছিল ট্রাম্পের জমানাতেই।

পেশায় আইনজীবী কমলা আদালত কক্ষে যেভাবে নিজের পক্ষে সওয়াল-জবাব করেন, সেইভাবে ৯০ মিনিটের বিতর্কে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পরপর তোপ দেগেছেন। তাঁর শরীরী ভাষা ছিল যথেষ্ট সাবলীল, আনেক সময় বেশ আক্রমণাত্মকও। বিতর্কের পরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কমলা ট্রাম্পের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন। তুলনায় ট্রাম্প অধিকাংশ সময়ই প্রতিপক্ষের দৃষ্টি এড়িয়ে মন্তব্য করেছেন।

প্রথম মুখোমুখি বিতর্কের আগে প্রকাশিত সমীক্ষার ফলাফলে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলেছে। বাইডেনের পরিবর্তে হ্যারিস প্রার্থী হওয়ায় ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাবনা আগের থেকে বেশ কিছুটা বেড়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বহু কেন্দ্রে এখনও কিছুটা হলেও এগিয়ে ট্রাম্প। রেজিস্টার্ড ভোটারদের নিয়ে একটি সমীক্ষায় ইঙ্গিত, হ্যারিসের পক্ষে সমর্থন ৪৮ শতাংশ, ট্রাম্পের পক্ষে ৪৯ শতাংশ। আবার ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভোটারদের নিয়ে সমীক্ষায় হ্যারিসের পক্ষে ৪৯ শতাংশের। এক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন আগস্টের তুলনায় ৭ শতাংশ কমেছে।